জন্মদিনে স্মরণঃ স্যার আর্থার কোনান ডয়েল
সৃষ্ট চরিত্রের জনপ্রিয়তার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছেন হতভাগা লেখক নিজেই, এমন দৃষ্টান্ত হয়তো ইতিহাসে আরেকটিও নেই। কিন্তু এমন অবিচারটাই হয়েছে শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সাথে। বয়োবৃদ্ধ, প্রাপ্তবয়ষ্ক থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর বয়সী সকলেরই কমবেশি শার্লক হোমসের বৃত্তান্ত জানা। কিন্তু ক’জন জানে আর্থার কোনান ডোয়েলের কথা?
লেখক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়ে নিলেও চিকিৎসক হিসেবে কোনান ডয়েল ছিলেন একেবারেই অপটু। লন্ডনে অপথাল্মলজির প্র্যাক্টিস শুরু করে বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি তিনি। নিজের আত্মজীবনীতে কোনান লিখেছেন যে একজন রোগীও নাকি ঢোকেনি কখনো তার চেম্বারে। কে জানে, ডাঃ ডয়েল পসার জমিয়ে ফেললে হয়তো ইতিহাসের প্রথম প্রাইভেট ডিটেক্টিভকে কখনো বইয়ের পাতায় দেখতে পেতাম না আমরা।
শুধু লেখক এবং ডাক্তারই নন, দক্ষ ক্রীড়াবিদও ছিলেন তিনি। স্কিয়িং জনপ্রিয়করণে উল্লেখযোগ্য অবদান আছে কোনান ডয়েলের। তার প্রচারকার্যের ফলে প্রতিবছর প্রচুর ব্রিটিশ নাগরিক সুইজারল্যান্ডে যেতেন স্কী করতে।
ভাল ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘পিটার প্যানের’ লেখক জে. এম. ব্যারির সাথে ক্রিকেট খেলেছেন একই টিমে। গোলকিপার হিসেবেও সুনাম ছিল তার।
গোয়েন্দা শিরোমণি শার্লক হোমস আর জ্যুলজিস্ট প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের স্রষ্টা বিশ্বাস করতেন অতিপ্রাকৃতিক বিষয়ে! ফেইরি বা পরীর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করেছেন নিজ পকেট থেকে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় একশো বছর আগে। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড শহরে দুই বোন কয়েকটি ছবি তুলেছিল। ছবিতে দেখা যায় যে কতগুলো পরী ঘিরে আছে একটি মেয়েকে। প্র্যাংক ভাইরাল হওয়ার ৬৬ বছর পর মেয়ে দুটি জানায় যে বাবা ফটোগ্রাফার হওয়ার সুবাদে ক্যামেরার কলাকৌশল জানতো তারা। বইয়ের ছবি কেটে কারিগরি করে বানিয়েছিল বিতর্কিত ছবিটা। কিন্তু হায়, কোনান ডয়েল যে আস্ত একটা বই লিখে বসেছেন পরীর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে!
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল নিজেও ছিলেন একজন অঘোষিত গোয়েন্দা। ম্যারিয়ন গিলক্রিস্ট নামক একজন বিত্তবান ভদ্রমহিলার খু্নের রহস্যসন্ধানে লেগে পড়েন তিনি। শার্লক হোমসের মতো রহস্যের জট খুলতে না পারলেও এভিডেন্স আবিষ্কার থেকে শুরু করে উইটনেস ইন্টারোগেট করে কেসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। কিন্তু শার্লক হোমসের মতোই তাকেও রীতিমতো উপেক্ষা করে স্কটিশ কর্তৃপক্ষ।
পুরোদস্তর আইনজীবী হয়ে কেসও লড়তে দেখা গিয়েছে তাকে কখনো কখনো। ইউনিয়নিস্ট পার্টির হয়ে ১৯০০ এবং ১৯০৬ সালে দু’বার পার্লামেন্ট ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিলেন অলরাউন্ডার এই লেখক। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছালেও নির্বাচিত হননি একবারও।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কোনান ডয়েল নিজেই তেমন পছন্দ করতেন না শার্লককে। মায়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, “ ভালোর জন্যই শার্লককে মেরে ফেলার কথা ভাবছি”, এই বাক্যে শার্লক হোমসের প্রতি তার অনীহা স্পষ্ট। ‘দ্য এডভেঞ্চার অফ দ্য ফাইনাল প্রব্লেম’ বইয়ে শার্লককে মেরেও ফেলেন তিনি! কিন্তু পরবর্তীতে ভক্তদের প্রতিবাদ এতটাই প্রবল হয়ে দাঁড়ায় যে শার্লক হোমসকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে বাধ্য হন ডয়েল।
ব্রিটেনের রানীর কাছ থেকে ‘নাইটহুড’ উপাধী পেয়েছিলেন তিনি। যার জন্য তার নামের আগে ‘স্যার’ বলা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো শার্লক হোমসের জন্য এ উপাধি পাননি ডয়েল, পেয়েছিলেন বোয়ার যুদ্ধের উপর লেখা নন ফিকশন লেখাগুলোর জন্য।
কোনান ডয়েলের শেষবাক্য ছিল “ইউ আর বিউটিফুল”। কথাটি তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলা।
১৯৩০ সালের ৭ জুলাই ফুল হাতে নিয়ে নাটকীয়ভাবে নিজ বাড়ির বাগানে মারা যান স্যার আর্থার।
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ১৮৫৯ সালের আজকের দিনে (২২ মে) স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment