////////[ প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ ]\\\\
(((((((((((((((((((((((পর্ব–০৬৮))))))))))))))))))))))
{ মনোবিদ, মঞ্চ-মায়াবী P C SORCAR Junior }
[Dr. প্রদীপ চন্দ্র সরকার, M. Sc., Ph. D. ]
কলকাতা : ২৯ মে, ২০২১। আমার ভ্রাতৃ-স্থানীয়-বন্ধু, শ্রী স্বপন বসুর গাওয়া পল্লীগীতি আমার বরাবরই খুব ভালো লাগে। পাক্কা শহুরে গলাটা কেমন, চট জলদি, ঠিক ম্যাজিকের মতোই খোসা ছাড়িয়ে পাল্টে যায়। আর তারপর খোলা দরাজ , নিষ্পাপ মেঠো গলায় শুরু করে গান। মাঝেমধ্যে খমকটাকে খেপিয়ে একটু বাজিয়েও যেন অর্কেস্ট্রাকে ধমক দেয়। বিশেষ করে ওই গানটা, সেই,..
“থাকিলে ডোবাখানা, হবে কচূরীপানা, বাঘে গরুতে জল একসাথে খাবে না, স্বভাব তো কক্ষণো যাবে না “। যেন গ্রাম্য এক দার্শনিক, তাঁর উপলব্ধির কথা জানান দিচ্ছেন আকাশে বাতাসে, গেঁথে থাকতে।
এতো সরলভাবে , এতো বড় মনোবৈজ্ঞানিক জটিল তত্ব কথাটা, এই খোলা গলায় কাঁচামাটির গণ্ধমাখা গানের মধ্য দিয়ে , ভারতীয় ম্যাজিকের শুধু নয়, বিশ্বের সব কটা শিল্পের সর্ব সাফল্যের একদম আসল রহস্যটা ও বলে দিয়েছে। কয়লা হাজার ধুলেও সাদা হবে না। নিজস্বতায় আস্থা রাখো। ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরই অপমান”। দোনো-মোনো করে লজ্জায় সিটিয়ে থাকার আড়ষ্টতা ভদ্রতার লক্ষ্মণ বলে ভাবাও ঠিক নয়। এই বেঠিক সম্মান দেখানোর হিসেবকে নম্রতা দেখানোর ফর্মূলা ভেবে আমরা বাঙালিরা বহুবার বহুভাবে ঠকেছি, ঠকে আসছি । মেকী ভদ্রতা আর নয়, সামনে এসো। জবাব শোন।
নিজেরাই নিজেদের ঠকাচ্ছি। আমাদের নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিভা আর শক্তি আছে। আমরা সেগুলো নিয়েই জন্মেছি। কিন্তু সেগুলো ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। কে রেখেছে, কেন রেখেছে, এর জবাব খোঁজার সময় নেই। দরকার হচ্ছে, আমরাও পারি, এটা জানার এবং হারানো আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনার। “স্বভাব যায় না ম’লে” হচ্ছে এর রহস্য-মন্ত্র। সেটাকে আমরা বোকার মতো ব্যবহার করি না। আমরা নাকি পিছিয়ে ? বাজে কথা। একটু রেওয়াজ করলেই আমাদের সেই চাপা থাকা স্বভাব-প্রতিভাটা প্রকাশ পাবে।
ঈশ্বর বলেছেন:-
“ধনাদি য়ান্তি বৈফল্যং, বৈফল্যং য়ান্তি কামনা।
জ্ঞানার্জন য়ান্তি বৈফল্যং, নাধ্যাসস্তু কদাচন ।। ”
এর মানে হচ্ছে:- ধন বিফলে যেতে পারে, কামনাও বিফল হতে পারে, জ্ঞানও বিফলে যেতে পারে, কিন্তু অভ্যাস কখনো বিফলে যায় না।
এটা কোনও রাখা-ঢাকা মণ্ত্রগুপ্তি নয় । আছে রহস্য ভেঙে, সত্যি-কথা বলাটা আর তার সঙ্গে স্বাভাবিক বিজ্ঞান চেতনা উন্মোচনে সততার উল্লাস। একে বলি আমরা, “জীবনধারায় বিজ্ঞানভিত্তিক অনুশাসন।” এক কথায়, ‘প্রগতি’র আসল উপায়।
আমার বাবাও আমাকে এই কথাটা বলতেন। “অভ্যাস করো, অভ্যাস করো, অভ্যাস করো। এই অভ্যাস যেন তোমায় একটা ‘সহজাত প্রবৃত্তি হয়ে দাঁড়ায়।”
কোভিডের তাড়নায় গৃহবন্দী হয়ে আছি। কুছ পরোয়া নেহি। আমি এতদিনের ফেলে রাখা কাজ গুলোকে সম্পন্ন করতে পারছি। অনেক নতুন ম্যাজিক আবিষ্কার করেছি, অনেক দরকারী, বেশি যত্ন করে রাখা চিঠি পত্র, তাগাড় করা প্র-চু-র দরকারী ছবি পেয়েছি। একটা পুরোন ক্লিপিং পেলাম। এই রেওয়াজ করা সম্পর্কে। কম বয়সের ছবি।
পুনঃ-
তখন আমি অনেক প্রেম-পত্র পেতাম। সেগুলো সব পঞ্চাশ বছরেরও ওপর গোপনে, গুছিয়ে রাখা ছিলো। কাউকেই জবাব দিই নি। হয়তো বানান ভুল হওয়ার ভয়ে। এখন এক সঙ্গে জবাব দিচ্ছি।
অচেনা প্রেমিকাসু,
“আমিও তোমাকে (তোমাদেরকে) খুব ভালোবাসি। গাছের সবকটা ফুলই সমান সুন্দর। আমি তোমাকে(তোমাদের ) আগে জবাব না দিয়ে অপমান করিনি। জয়শ্রী আমাকে আগলে রেখেছে।
তুমি সুন্দরী আর ভালো বলেই তো এতো কড়াক্করি।
এখন একটু গলায় বাধা চেনটা লম্বা করে দিয়েছে। আমি এখন নাকি ‘বুড়ো’ হয়ে গেছি। ও নিশ্চিন্ত। ওর পাওয়া প্রেমপত্রের বিশাল বান্ডিল দেখিয়েছে। একটাও পড়তে দেয় নি। আমিও দিইনি। প্রমিজ।
যাই হোক, তোমার বরকে আমার নমস্কার জানিও। নাতি-নাতনীকে আমার আশীর্বাদ দিও। ইতি
শুকনো ফুলের মালা গলায়
এক ব্যার্থ প্রেমিক জাদুকর।
‘প্রদীপ-দা’
Be First to Comment