নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ১২ নভেম্বর ২০২১। বই মেলার কথা শুনতে পেলেই বই পাগল পাঠকদের মনে আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। আর সেই সেই মেলা যদি আন্তর্জাতিক মানের হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এই বইপ্রেমী মানুষের কথা ভেবে আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সন্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক কলকাতা বই মেলা কমিটির সম্পাদক ত্রিদিপ কুমার চট্টোপাধ্যায় ও সভাপতি সুধাংশুশেখর দে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দের খবর জানাতে চলেছি আপনাদের। শারদীয় উৎসবের পর, গত চার দশক আমাদের রাজ্যের সব থেকে বড় উৎসব, বই উৎসব, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। কোভিড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে আমাদের অনুরোধে সম্মত হয়ে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন, ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে, যার উদ্বোধন আগামী ৩১ জানুয়ারি ২০২২। স্থান – সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গণ। বইপ্রেমীদের কথা ভেবে এবারের মেলা চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
করোনা পরিস্থিতির আগে থেকেই স্থির ছিল, পরবর্তী কলকাতা বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। আগামী বইমেলায় তাই উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর। বইমেলায় আমরা স্মরণ করব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র ১২৫ তম জন্মবর্ষ, সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ ও ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর।
বিষাদময় সময় আমরা পার হয়ে যাচ্ছি। গত ২ বছরে চলে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, আনিসুজ্জামান, দেবেশ রায়, নিমাই ভট্টাচার্য, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শামসুজ্জামান খান, স্বপন মজুমদার, অনীশ দেব, শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শৌনক লাহিড়ী, অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব গুহ, সুব্রত মুখার্জী প্রমুখ বরেণ্য কবি সাহিত্যিক ও গুনীজন। হারিয়েছি গিল্ডের সদস্য শমিত সরকার, তপন মুখার্জি ও সহকর্মী দেবাশিস লাহিড়ী (বুবাই) কে। বইমেলায় আমরা তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবো।
বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবছরের মতো আগামী বইমেলাতে অংশগ্রহণ করবে অন্যান্য দেশ এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যের প্রকাশনা সংস্থা। থাকবে লিটল ম্যাগাজিনও।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২২এ অংশগ্রহণের জন্য আগামী ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকাশক, পুস্তকবিক্রেতা, লিটল ম্যাগাজিন এবং যাবতীয় আবেদনপত্র গিল্ড অফিসে জমা নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ, অষ্টম কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল এবারেও যথারীতি বইমেলা চলাকালীন অনুষ্ঠিত হবে।
যথাযথ কোভিড স্বাস্থ্য বিধি ও সরকারি নির্দেশিকা মেনে এই নিও নর্মাল সময়ে বইমেলা আয়োজন করার জন্য আমরা একাধিক পরিকল্পনা নিচ্ছি। মণ্ডপগুলি এবারে খোলামেলা করার কথা ভাবা হয়েছে, মাঠের মধ্যে যতটা সম্ভব উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ রাখতে হবে যাতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং রাখা যায়। সেক্ষেত্রে কমতে পারে স্টলের মাপ। মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ নিষেধ। স্যানিটাইজেশন এবং ডবল ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেটের ওপর জোর দেওয়া হবে। ই-পাসের ব্যবস্থাও ভাবা হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত, প্রতিবারের মতো আমাদের বইপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার আগামী বইমেলাকে সুরক্ষিত করতে গিল্ডের পাশে থাকবেন।
আপনারা জানেন, প্রতিবছর কলকাতা বইমেলায় বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসতেন। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকে হয়তো এবারে নাও আসতে পারেন। তাই সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের জন্য থাকছে অভিনব উদ্যোগ। বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে ২০২২ এর কলকাতা বইমেলার ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাকবে গিল্ডের ওয়েবসাইট ও সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়,
যাতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ বইমেলা দেখতে পারেন। এই বিষয়ে আমরা পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত জানাব। আমরা সবাইকে আসন্ন বই
উৎসবে স্বাগত জানাচ্ছি।
Be First to Comment