সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ২৩শে জানুয়ারি ২০২০ আজ আবার ফিরে এলো সুভাষ চন্দ্রের জন্মদিন।১২৩ তম জন্মদিন। প্রতি বছর আসবে এই দিনটি। আমরা স্মরণে মননে স্মৃতি মন্থন করে শ্রদ্ধা জানাবো। তারপর ছুটির দিন কাটাব কচি পাঁঠার মাংস খেয়ে। দুপুরে একটা ভাতঘুম দিয়ে বিকেলে চা এবং টা সহযোগে টি ভি খুলে একটা দেশাত্মবোধক সিনেমা দেখবো। হাতে সময় থাকলে একটু চ্যাট করবো বন্ধুদের সঙ্গে। বিষয় নেতাজি। নেতাজির পরিবার এখন বহৃধাবিভক্ত।কেউ বলছেন, তিনি ১৯৪৫ এ ১৮আগস্ট বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন। কেউ বলছেন, না না তিনি গোপনে রাশিয়াতে চলে যান। সেখানে কমিউনিস্টরা বিশ্বাসঘাতকতা করে সাইবেরিয়ার ওমস সহরে আশ্রয় নেন। তাঁর কাছে যে পাসপোর্ট ছিল তাতে নাম ছিল অথজ্যন্দা মাজার্থ। রাশিয়ার মস্কো শহরের কাছে পান্দস শহরে গ্রু আর্কাইভের তথ্য বলছে, ১৯৪৫ এ সেপ্টেম্বর মাসে স্ট্যালিন তাঁর ক্যাবিনেটে প্রশ্ন রাখেন নেতাজীকে কোথায় রাখা হবে? পেরিজিনে কিনো শহরে না ওমস শহরে? ওমস শহরেই নেতাজীকে নজরবন্দি করে রাখে রাশিয়া ব্রিটেন আর আমেরিকার চাপে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়দেব মুখার্জি বহুদিন ধরে নেতাজি শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে আসছেন । জয়দীপ বাবুর দাবি, তাঁর কাছে প্রমাণ আছে নেতাজীকে রাশিয়া সাইবেরিয়ার ইয়াকুর্তক (Yakutrk) জেলে থার্ড ডিগ্রি অত্যাচার করে মিত্রশক্তি ও রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ কে জি বি মেরে ফেলেছে। নেতাজির মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি ও বাকশক্তি হারিয়ে যায়। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছিলেন নেতাজির ভগ্নী বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত। তাঁকে দূর থেকে নেতাজীকে দেখার অনুমতি দেওয়া হয়। কে জি বি এজেন্ট কজলোভের তথ্য বলছে, নেতাজি ছিলেন যুদ্ধ পরাধী। তাকে তাই অমানুষিক পরিশ্রম করানো হতো। জয়দীপ বাবুর দাবি, নেতাজীকে একধরনের স্লো পয়জন ‘ চেকা ‘ প্রয়োগ করে সাইবেরিয়ার রোড অফ বোনস নামে এক রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়। বহু যুদ্ধবন্দী দের ওই রাস্তায় মেরে ফেলা হতো।আবার আরেক দল বলছেন, ভিয়েতনামের সাইগনে বোট কাটি জেলে ছিলেন নেতাজি। আর এক দল নেতাজিপ্রেমী
আছেন যাঁরা মনে করেন নেতাজি ছিলেন চিনে।সেখান থেকে তিনি উত্তরপ্রদেশে গুমনামি বাবা নাম নিয়ে আধ্যাত্বিক চেতনা নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। টলিউডের পরিচালক সৃজিত মুখার্জি কিছু তথ্য জোগাড় করে একটি ছবি বানিয়ে বাঙালির আবেগকে অনেকটা উস্কে দিয়েছেন । নেতাজি কে নিয়ে হাজার মিথ তৈরি হয়ে আছে।মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত। কোনটা ঠিক ?
কিন্তু ইতিহাসের পাতায় লুকিয়ে থাকা এক কলঙ্কময় অধ্যায় আজও অনেকের অজানা।আমরা সবাই জানি গুজরাটে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে গড়ে তোলা হয়েছে লৌহ মানব সর্দার প্যাটেলের ১৮২ ফুটের মূর্তি। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চতার মূর্তি। কেন্দ্রীয় সরকার মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে দেশের সবকটি দৈনিকে বিজ্ঞাপনে ক্যাপশন দেয়, সবচেয়ে উঁচু, সবচেয়ে মহান। বি জে পি র কেন্দ্রীয় সরকার দলে সর্বজন শ্রদ্ধে়য় নেতা কম পড়িয়াছে বলেই কি কংগ্রেসের নেতা প্যাটেলের মূর্তি বসিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি নির্মাণের চেষ্টা করেছে কিনা সেই বিতর্কে না গিয়েও প্রশ্ন রাখা যায় যে প্যাটেল দুই লক্ষ টাকা তছরুপের দায়ে নেতাজির নামে মামলা ঠুকে কি ঠিক করেছিলেন ?
ঘটনা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকদিন। সর্দার প্যাটেল ছিলেন ব্যারিস্টার। তাঁর বড় ভাই বিঠোল ভাই প্যাটেলও ছিলেন ব্যারিস্টার। বিঠোল ভাই ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি প্রবাসী ভারতে কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রায় দেন আইনসভা চালু অবস্থায় পুলিশ কখনও প্রবেশ করতে পারবে না। সেই রায় আজও সংসদে, বিধানসভায়এবং বিধান পরিষদে বলবৎ আছে। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিঠোল ভাই বন্দী হন ইংরেজের হাতে। কারাবাসে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। বড়লাট তাকে মুক্তি দেন। তিনি যান ভিয়েনায় স্বাস্থ্য উদ্ধারে। ভিয়েনাতে তখন স্বাস্থ্য উদ্ধারে গিয়েছিলেন নেতাজি। তিনিও বর্মার মান্দালয় জেল থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন অসুস্থতার জন্য। সবে টি বি থেকে মুক্ত হয়েছেন। শরীর খুব দূর্বল। নিজের বিশ্রামের কথা ভুলে বিঠল ভাইএর সেবার জন্য দিনরাত এক করে দেন । বিঠল ভাই ছিলেন নেতাজির চেয়ে ২৬ বছরের বড়। মৃত্যুপথযাত্রী বিঠল ভাই মৃত্যুর আগে নেতাজীকে নিজের সঞ্চয়ের ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বলেন স্বাধীনতার কাজে নেতাজি যেন সেই টাকা খরচ করেন। দেশে ফিরে সেকথা নেতাজি সর্দার প্যাটেল কে বলেন। প্যাটেল সেই মুহূর্তে কিছু বলেননি। হঠাৎ নেতাজি উকিলের চিঠি পান। যে চিঠিতে জানানো হয় দাদার ২ লক্ষ টাকা নিজের কাছে বেআইনিভাবে নেতাজি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। বাকস্তব্ধ নেতাজি আদালতে দাড়িয়ে সে টাকা সর্দার প্যাটেলের হাতে তুলে দেন। মামলা উঠে যায়। কিন্তু অত উচ্চতার মূর্তির দিকে তাকিয়ে কি মনে হয় না, নেতাজির উচ্চতার কাছে সেদিন আদালতেই সর্দার প্যাটেল কতটা খাটো হয়ে গিয়েছিলেন? বিষয়টি যদি পাঠকদের অবিশ্বাস্য মনে হয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহর গান্ধী বিফোর ইন্ডিয়া বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
সুভাষ চন্দ্র কে টাকা তছরূপের জন্য দায়ী করে মামলা করেন সর্দার প্যাটেল
More from GeneralMore posts in General »
- A Quirky Love Story Beyond Life and Death Teaser for Omorshongi Released! Directed by Dibya Chatterjee….
- বাংলা নিউজ সিরিজ “অজানা জাকির” ….।
- মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস হেরে গেল এফসি গোয়ার কাছে…।
- জীবনে যেখানে প্রতিটা মুহূর্ত দামী : মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ের ডাক্তার মধ্য আকাশে যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন….।
- Over 300 Industry Leaders and Women-Owned Businesses Gather to Drive Gender Inclusion in India’s Supply Chains….
- Waterstone College Cricket Team from South Africa Played a 40-Over Cricket Match with Yuvraj Singh Centres of Excellence (YSCE) at Merlin Rise….
Be First to Comment