স্মরণ : সু চি ত্রা ভ ট্টা চা র্য
বাবলু ভট্টাচার্য : সবাই কাছের মানুষ হতে পারে না, যদিও সে জন্য কোনো সাধনা করতে হয় না ঠিকই কিন্তু হৃদয়ের দিগন্ত প্রসারিত করে দুয়ার খুলে দিতে হয়, ভালোবাসতে হয় মানুষকে। মানুষকে উজাড় করে ভালোবাসলে কোনো ক্ষতি নেই, ক্ষতি শুধু ঘৃণায় আর বিদ্বেষে।
কথাসাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য ছিলেন তেমনি একজন বাঙালি পাঠক ও লেখকদের কাছের মানুষ, তাইতো তিনি লিখতে পেরেছিলেন ‘কাছের মানুষ’ নামে একটি কালজয়ী উপন্যাস।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য ১০ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন, পরে স্কুলের আর কলেজের পড়াশুনা করেন দক্ষিণ কলকাতায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন, প্রথম কর্মজীবনে তিনি অনেক অতিসাধারণ চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন, পরে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।
তিনি নব্বইয়ের দশকে পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেন, তবে সত্তরের দশকে শেষভাগ থেকে তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা ২৪টি এবং ছোট গল্পের সংখ্যা অসংখ্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- ‘কাছের মানুষ’, ‘হেমন্তের পাখি’, ‘অলীক সুখ’, ‘দহন’, ‘পরবাস’, ‘নীলঘূর্ণি’, ‘ইচ্ছে’, ‘রামধনু’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘ছেঁড়া তার’, ‘গভীর অসুখ’, ‘অন্য বসন্ত’, ‘রাঁই কিশোরী’, ‘রঙিন পৃথিবী’, ‘জলছবি’, ‘তিন কন্যা’ ইত্যাদি।
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাস বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যেমন- হিন্দি, তামিল, মালায়ালাম, উড়িয়া, মাড়াঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি এবং ইংরেজি ভাষায়। তিনি তাঁর সাহিত্যের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; যেমন- দহন উপন্যাসের জন্য কর্ণাটকের শাশ্বতী সংস্থা থেকে পেয়েছেন ননজনাগুডু থিরুমালাম্বা জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৬), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনমোহিনী পদক, শরৎ সাহিত্য পুরস্কার, তারাশঙ্কর পুরস্কার, সাহিত্য সেতু পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্রলাল পুরস্কার ইত্যাদি।
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের একাধিক গল্প উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র। কালজয়ী পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘দহন’ উপন্যাসটি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের যে লেখাগুলো নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছিল, সেগুলো হলো ‘ইচ্ছের গাছ’, ‘হেমন্তের পাখি’, ‘রামধনু’, ‘অলীক সুখ’, ‘আলোছায়া’ ইত্যাদি।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য ২০১৫ সালের আজকের দিনে (১২ মে) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment