স্মরণঃ শশী কাপুর
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘কহে দু তুমে… ইয়া চুপ রহু/ দিল মে মেরে আজ কেয়া হ্যাঁয়…’— ঘাড় পর্যন্ত ঢেউ খেলানো চুল আর গজ দাঁতের কেরামতিতে মোহিত হয়েছিল সাতের দশক।
কাপুর পরিবারের আভিজাত্যকে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কেবল অভিনেতা। তার চেয়েও বেশি রক্ত- মাংসের সেই মানুষ, যিনি আজীবন ‘সিদ্ধার্থ’-এর মতো তপস্যা করে গিয়েছে অভিনয়ের খাতিরে। কিন্তু আদতে কেমন ছিলেন মানুষটা? পৃথ্বীরাজ কাপুরের তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। পর্দার নাম শশী কাপুর। তবে আসল নাম তার বলবীর রাজ কাপুর।
শশী কাপুর ১৯৩৮ সালের ১৮ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
বাড়িতেই ছিল কেবল অভিনয়, অভিনয় আর অভিনয়। তাই ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের জগতে প্রবেশ। প্রথমে থিয়েটার, পরে সিনেমায় আগমন। ‘সংগ্রাম’ ছবিতে দাদা রাজ কাপুরের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করে বেশ নাম কামিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে ‘ধর্মপুত্র’ ছবিতে ফের তাঁর প্রত্যাবর্তন হয় নায়ক হিসেবে।
সিনেমার কেরিয়ার ‘শান্দার’ হলেও শশীর আসল ভালবাসা ছিল থিয়েটার। এই থিয়েটারের সূত্রেই তার জেনিফার কেন্ডলের সঙ্গে আলাপ। নাটকই দুই অভিনেতাকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।
১৯৬১ সালে ‘ধর্মপুত্র’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডে অভিষেক ঘটে শশী কাপুরের। এরপর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরমধ্যে- ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘দিওয়ার’, ‘সুহাগ’, ‘নামাক হালাল’, ‘কাভি কাভি’, ‘আওয়ারা’, ‘চোর’, ‘কালা পাত্থর’ ও ‘ত্রিশূল’ উল্লেখযোগ্য।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। ২০১৫ সালে তিনি কাপুর পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে সম্মানজনক ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ লাভ করেন। এর আগে এই পুরস্কার পান তার বাবা পৃথ্বীরাজ ও ভাই রাজ কাপুর।
১৯৭০ ও ৮০ এর দশকে ‘বলিউড শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অনেক ‘ব্লকবাস্টার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শশীকে তার ভক্তরা ভারতীয় শো-বিজের সবচেয়ে ‘হ্যান্ডসাম তারকা’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
‘ধীবর’ চলচ্চিত্রে তার আওড়ানো সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’ (আমার সঙ্গে মা আছেন) বলিউড ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বজুড়ে খ্যাত। এই ছবিতে এক অপরাধী ও এক পুলিশ ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন অমিতাভ ও শশী কাপুর।
ছবি পরিচালনাও করেছেন শশী। বেশ কড়া ধাতের পরিচালক ছিলেন তিনি। এ কথা স্বীকার করেছে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। ‘অজুবা’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাকি পরিচালক শশী সেটে ছড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। ভুল হলেই নিস্তার ছিল না। তবে সেটে কারও অসুবিধা হলে সবার আগে তা মেটাতে ছুটতেন তিনিই।
অপর্ণা সেনের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল তার। সিনেমার সূত্রেই দু’জনের আলাপ হয়। ‘৩৬ চৌরঙ্গি লেন’-এর জন্য যখন হন্যে হয়ে প্রযোজক খুঁজছেন অপর্ণা, তখন ত্রাতা হন শশীই। চিত্রনাট্য পড়েই ছবি প্রযোজনা করতে রাজি হয়ে যান তিনি। ছবিতে অভিনয় করেছেন তার স্ত্রী জেনিফারও।
শশী কাপুর ২০১৭ সালের আজকের দিনে (৪ ডিসেম্বর) মুম্বাইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment