—————শুভ জন্মদিন সালমা হায়েক———–
বাবলু ভট্টাচার্য : ১৯৭১ সালের কথা। স্থানীয় একটি সিনেমা হলে ‘উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ ছবিটি না দেখলে তিনি হয়তো থেকে যেতেন আর দশজন মেক্সিকান সুন্দরীর তালিকায়। ‘উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ দেখার পরই ‘নায়িকাই হব’ ভাবনাটি চেপে বসে তার মাথায়। তিনি সালমা হায়েক।ব্যবসায়ী বাবা আর সংগীতশিল্পী মায়ের একেবারে বিগড়ে যাওয়া আহ্লাদী মেয়ে সালমার শৈশবে স্কুলে শিক্ষিকাদের ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিয়ে প্রায়ই তাদের বিপদে ফেলতেন। পরে অবশ্য এর খেসারতও দিয়েছিলেন তিনি; স্কুল ছাড়তে হয়েছিল এই তারকাকে। পরে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন অ্যান্ড ড্রামার ওপর পড়াশোনা করেন। প্রিয় পোষা কুকুরকে নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, সারা দিন ঘোরাঘুরি আর দস্যিপনা করেই কাটছিল ছোট্ট সালমার দিন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ছোট্ট সালমার স্বপ্ন আর সাধ বাস্তবে রূপ নেয় অনেক দিন পর। ১৯৮৯ সালে মেক্সিকান টিভি চ্যানেলে সোপ ওপেরা ‘তেরেসা’য় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দেশজুড়ে তারকাখ্যাতি পেয়ে গেলেন সালমা। তেরেসায় পাওয়া তারকাখ্যাতি তাকে টেনে নিয়ে যায় হলিউডে। কিংবা বলতে পারেন ১৯৯১-এর দিকে ‘তেরেসা’ এবং মেক্সিকো দুটো ছাড়ারই সাহস জুগিয়েছিল সালমা হায়েককে। অবশ্য তার মেক্সিকো ছেড়ে দেওয়াকে ভালো চোখে দেখেননি ভক্তরা।
২৪ বছর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘স্ট্রিট জাসটিস’, ‘দ্য সিনবাদ শো’, ‘নার্সেস’, ‘ড্রিম অন’-এর মতো সিরিজে কাজ করেন সালমা হায়েক। বুঝতে পারেন লাতিন আমেরিকার অভিনয় শিল্পীদের হলিউডে বেশ ঘাম ঝরাতে হবে। তার ওপর আবার ইংরেজিতে দুর্বলতা! ১৯৯২ সালে একটি টিভি টক-শোতে সালমা তার হতাশার কথা তুলে ধরেন। তার কপাল ভালোই বলতে পারেন। তা না হলে ওই টক-শোটি বিখ্যাত পরিচালক রবার্ট রডরিগুয়েজ আর তাঁর প্রডিউসার বউ এলিজাবেথ এভলিন কেন দেখবেন? টিভির পর্দায় সালমাকে দেখে মনে ধরেছিল রবার্ট রডরিগুয়েজের। পরে রডরিগুয়েজের ‘ডেসপেরাডো’তে অভিনয়ের মাধ্যমে হলিউডের মানচিত্র ভালোই চিনেছিলেন সালমা। ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ১৯৯৬ সালে রডরিগুয়েজের আরেকটি ছবি ‘ফ্রম ডাস্ক টিল ডাউন’-এ অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান সালমা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একে একে উপহার দেন ‘ফুলস রাশ ইন’, ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’, ‘৫৪’, ‘ফ্যাকাল্টি ডগমা’, ‘টাইম কোড’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো’-এর মতো ছবি। ২০০০ সালের আগেই সালমা হায়েক ‘ভ্যানতানারোসা’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। এতেও বাজিমাত! তার নির্মিত ‘এল কর্নেল ন তাইনি কুইন লি এসক্রাইব’ মেক্সিকো থেকে অস্কারে জমা দেওয়ার জন্য মনোনীত হয়। ২০০২ সালে তারই প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত ‘ফ্রিদা’ বক্স অফিস মাত করে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি প্রথম মেক্সিকান অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমী অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়ে যান।
পরিচালক হিসেবেও কম যাননি সালমা। ২০০৩ সালে ‘দ্য মেলাডোনাডো মিরাক্যাল’ পরিচালনা করে ডে টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ডে অনবদ্য পরিচালকের বিভাগে মনোনীত হন। সব তো হলো, গানটা বোধ হয় বাদ পড়ল! নাহ্, সে পথও মাড়ালেন ২০০১ সালে একটি তাইওয়ান ম্যাগাজিনের করা জরিপে বিশ্বে ১০০ আবেদনময়ী নারীর তালিকায় অষ্টম হওয়া এই তারকা। ‘ডেসপেরাডো’, ‘ফ্রিদা’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো’ তিনটি ছবিতে গানে কন্ঠও দিয়েছেন সালমা হায়েক।
এত ব্যস্ততার মধ্যে সালমা হায়েক বেশ একা অনুভব করছিলেন। কয়েকজনের সঙ্গে প্রণয়ে জড়ানোর ঘটনা ঘটলেও মনে ধরেনি কাউকে। তবে ২০০৭ সালে ফরাসি ব্যবসায়ী অঁরি পিনাল্টের সঙ্গে পরিচয়েই মন দিয়ে দেন। ২০০৯-এর দিকে এসে বিয়েটাও সেরে ফেলেন। এরপর তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে মেয়ে ভ্যালেনতিনা পালোমা পিনাল্ট। মেয়ে হলিউড দাপাতে পারে কি-না তা অবশ্য এখনই বলতে না পারলেও নিজের উচ্চতা নিয়ে বেশ কষ্টে আছেন সালমা হায়েক— ‘দেখেন না আমার উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। আমি লম্বা হওয়ার অভিনয়ও করতে পারি না!’
সালমা হায়েক ১৯৬৬ সালের আজকের দিনে (২ সেপ্টেম্বর) মেক্সিকোর ওয়েলবুম টাউনে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment