———জন্মদিনে স্মরণঃ সাগরময় ঘোষ———
“সাগরদাদা আপনি বুড়ো হলেন না বিলকুল,
পঁচাত্তরেও তরতাজা মন, ভ্রমরকৃষ্ণ চুল।”
—- ——– কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী—————
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, আড়ালে থাকাটাও যে সম্পাদনার সংস্কৃতি, সে কথাটা বার বার প্রমাণ করে গিয়েছেন সাগরময় ঘোষ। বহুবিধ ঘনঘটায় কেটেছে তাঁর জীবন। রবীন্দ্র-সান্নিধ্য, সিটি কলেজ, কারাবরণ, সরকারি চাকরি, বেঙ্গল ইমিউনিটি এবং দু-একটি পত্রিকায় কিছুকাল কাজের পরে ১৯৩৯-এ তিনি যোগ দিলেন ‘দেশ’ পত্রিকায়। একটি সার্থক সাহিত্যপত্র এবং এক কিংবদন্তি সম্পাদকের যোগসূত্রের সেই শুরু হলো ‘দেশ’-এর যাত্রা। ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে, সাগরময় ঘোষের সম্পাদক সত্তা তিলমাত্র টলেনি।
সুবোধ ঘোষের ‘তিলাঞ্জলি’ থেকে সমরেশ বসুর ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’— বিতর্ক উঠেছে বার বার, বিভিন্ন কারণে। সাগরময় অবিচল। ‘দেশ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়েছে তাঁরই হাত ধরে, অথচ জরা সেই কাগজকে স্পর্শ করতে পারেনি। দশকের পর দশকে নিজেকে আশ্চর্য ভাবে সমকালীন রেখেছে যে কাগজ, তার ছোটোখাট, রাশভারী সম্পাদকটিও মেজাজে চির-নবীন। নিজে অন্তরালে থেকে পত্রিকা এবং লেখকদের পাদপ্রদীপের আলোয় আনাই তাঁর আনন্দ। সম্পাদক সাগরময় নিজে লেখালেখি করেননি বিশেষ। বিধানচন্দ্র রায়ের জীবনী ‘একটি পেরেকের কাহিনী’, সম্পাদক-জীবনের স্মৃতিকথা ‘সম্পাদকের বৈঠকে’, ‘হীরের নাকছাবি’, ছোটদের জন্য ‘দণ্ডকারণ্যের বাঘ’।
১৯৮৪ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ডা. বিধান রায়কে নিয়ে লেখা ‘একটি পেরেকের কাহিনী’ গ্রন্থের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রথমবারের মতো ‘নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পুরস্কার’-এ ভূষিত করে। ১৯৮৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেশিকোত্তম-এ ভূষিত করে।
১৯৯৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে সাগরময় ঘোষ মারা যান।
সাগরময় ঘোষ ১৯১২ সালের আজকের দিনে (২২ জুন) বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment