মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ৫ মে ২০২২। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে মামলার পাহাড় ক্রমশ বাড়ছে। এরেই মধ্যে গত ৪মে বুধবার আরও একটি মামলা দাখিল হলো কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলার আবেদনে দুর্নীতির তদন্তে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি কে দায়িত্বভার তুলে দেওয়ার দাবি রাখা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। গত ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা নিয়েও মামলা হয়েছে । এবার ফের টেট দুর্নীতির অভিযোগে নিয়ে আরও একটি মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে। সিবিআই এবং ইডি কে এই মামলার তদন্ত দেওয়া হয়, সেই আবেদন রাখা হয়েছে দাখিল পিটিশনে। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস ঘোষ এই মামলাটি দাখিল করেছেন। তবে এই মামলায় সরাসরি অভিযোগ উঠেছে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে । এদিন এই মামলা টি গ্রহণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে। এই মামলায় অভিযোগ, – ‘গত ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে যে নিয়োগ হয়েছে তা দুর্নীতিযুক্ত। এই প্রসঙ্গে মামলাকারী তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। যেখানে গত ৩০ এপ্রিল নদীয়ার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সংবাদমাধ্যমের সামনে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু অনিয়মের কথা তুলে ধরেছিলেন। সম্প্রতি দমদমের তৃণমূল নেতা রাজু সেন শর্মা প্রকাশ্য সভায় দাবি করেছেন যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সুপারিশে ৩০০ জন মতো চাকরি পেয়েছেন’। সেইসাথে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর একটি ভাষণ উল্লেখ করেছেন মামলাকারী। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, – ‘একমাত্র তৃণমূল কর্মীরাই চাকরি পাবেন’। তবে এইধরনের বক্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম কে কোন প্রতিক্রিয়া দেননি ব্রাত্য বসু। সম্প্রতি নদীয়ার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র একটি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন -‘চাকরি দেওয়ার নাম করে, টেট প্যানেলে নাম নথিভুক্ত করার নামে বা সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কেউ প্রতারণা করলে যেন তাঁকে জানানো হয়’। ভয় না পেয়ে লিখিত অভিযোগ করার কথা বলেছেন তিনি। এরপরই ঘটনাচক্রে এই মামলায় তৃণমূল সাংসদের নাম উল্লেখ করা হল। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য পড়ে গেল। গত ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষা নিয়ে মামলা হয়েছে শয়ে শয়ে । প্রশ্নপত্রের ভুলের কারণে যে বহু চাকরিপ্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলায় গত ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, -‘ভুল প্রশ্নের উত্তর যাঁরা দিয়েছেন তাঁদের পূর্ণাঙ্গ নম্বর দিতে হবে’। তবে সেই নির্দেশ পর্ষদ মানেনি বলে অভিযোগ উঠে । এরপরে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। আদালত সূত্রে প্রকাশ, উত্তর দিনাজপুরের স্বদেশ দাস গত ২০১৯ সালে মামলা করে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানান যে, তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ চাকরি দেওয়ার পরও তা কেড়ে নিয়েছে। পুনরায় তাকে চাকরিতে বহাল করার নির্দেশ দিক কলকাতা হাইকোর্ট, এই অনুমতি চেয়ে মামলা দাখিল করে থাকেন তিনি। উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য জানার পর কলকাতা হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, -‘ পেশ হওয়া নথি সঠিক নয়। এই কারণেই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে স্বদেশ দাসকে। পর্ষদের এই ভুল তারা স্বীকার করে নিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই ভুল চাকরির জন্য কোনও আইনি অধিকার তৈরি করে দেয়না’। এর পরে স্বদেশ দাস ওই মামলাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য আদালতের সামনে এনেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, ‘তাঁর নথি যদি সঠিক না হয় এবং তাঁর জন্য যদি চাকরি বাতিল হয়, তাহলে একই রকম ভুল নথিতে চাকরি করছেন আরও বারো জন। তাদের নাম ও তালিকা আদালতকে দিতে পারেন’।এই বারোজনের বেআইনি নিয়োগের তথ্য জানার পর কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়টিকে জনস্বার্থ মামলায় পরিবর্তন করে দেয়। গত বছরের ২৭ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে জনস্বার্থ মামলা হয়। তত্কালীন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শিক্ষক নিয়োগে চল্লিশ হাজার শিক্ষকের নিয়োগের নথি তলব করে থাকে । অজ্ঞাত কারণে মামলাকারীর আইনজীবী পরপর শুনানি পর্বে গড়হাজির থাকায় জনস্বার্থ মামলাটি সেসময় খারিজ হয়ে যায়। এই জনস্বার্থ মামলাটি সহ বিভিন্ন তথ্য কে সামনে রেখে পুনরায় দাখিল হয়েছে মামলা। যেখানে যৌথ ভাবে সিবিআই ও ইডি কে যৌথভাবে তদন্তভার তুলে দেওয়ার আর্জি রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
সাংসদ – মন্ত্রীদের বক্তব্য কে হাতিয়ার করে সিবিআই – ইডি চেয়ে শিক্ষক নিয়োগে মামলা….।
More from CourtMore posts in Court »
- স্নাতকোত্তরে ল’ কোর্স শুরু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে….।
- এটিএম কার্ড ফিরিয়ে দিল মঙ্গলকোটের ‘নিখোঁজ’ যুবক কে!….
- প্রয়াত বিচারকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোওয়ার আসর….।
- তিন দিন ব্যাপী আইন নিয়ে সেমিনার আয়োজিত হলো কিংস্টন কলেজে….।
- Historic Step Towards Legal Inclusivity: Constitution of India in Braille Version…..
- শ্রীরামপুরে জাতীয় লোক আদালতে সিংহভাগ মামলার নিস্পত্তি হলো…..।
Be First to Comment