Press "Enter" to skip to content

সাংসদের হাত ধরে বাক্সবন্দী হয়ে বেড়ি পাঁচপোতা থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের রান্নাঘরে পৌঁছে যায় এই বেড়ি পাঁচপোতা বাওরের সুস্বাদু “খয়রা মাছ”…………

Spread the love

——– বেড়ির বাওড়ের সুস্বাদু ‘খয়রা’ মাছ———

জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ: ১৫ জুন, ২০২০। ইছামতী নদীর ‘ছেড়ে যাওয়া’ বাঁকের তীরে গড়ে ওঠা একটি ছোট্ট জনপদ হল “বেড়ি পাঁচপোতা”। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই গ্রামটির বুকের উপর দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে নয়নাভিরাম একটি অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ। স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘বাওড়’ বলা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই হ্রদটি বিখ্যাত এর কোলে জন্ম নেওয়া “রূপালী শস্যের” জন্য। না! ইলিশ নয়! এটি বিখ্যাত চাপিলা বা খয়রা মাছের জন্য। ইংরাজীতে যাকে বলা হয় Indian River Shad. বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের বেশ কিছু প্রদেশের মিষ্টি জলে এই মাছ দেখা যায়। এছাড়াও নেপাল, মায়ানমার ও পাকিস্তানে এই মাছ অল্প পরিমানে দেখা গেলেও, স্বাদে ও গন্ধে ‘বেড়ি পাঁচপোতা’ হ্রদের চাপিলা বা খয়রা মাছ টেক্কা দেয় অন্যান্য জায়গার খয়রা মাছকে। বছরের বেশিরভাগ সময় কমবেশি এই মাছ পাওয়া গেলেও সব থেকে বেশি পাওয়া যায় বর্ষা কালে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মাছটি লম্বায় সাধারণত ১২ সেমি থেকে ১৪ সেমি পর্যন্ত হয়। মাছটির দেহের পৃষ্ঠ দেশ বাদামী এবং প্বার্শদেশ সোনালী বা রূপালী বর্ণের। ইলিশ মাছের মতো খয়রা মাছও জল থেকে তুললেই মারা যায়। সেজন্য বেড়ি পাঁচপোতা সংলগ্ন স্থানীয় বাজার ছাড়া দূরবর্তী স্থানের বাজারগুলিতে এই মাছ পাওয়া যায় না। মৎসবিশেষজ্ঞদের মতে, বেড়ি পাঁচপোতার অশ্বখুরাকৃতি হ্রদে এমন কিছু প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় খাবার আছে যার জন্য এই হ্রদের খয়রা বা চাপিলা মাছ অন্যান্য জলাশয়ের তুলনায় বেশি সুস্বাদু হয়। শোনা যায়, একবার এক সাংসদ বেড়ি পাঁচপোতা এসেছেন কোনো বিশেষ কাজে। দুপুরে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সাংসদ বলে কথা! তাই বাড়ির গিন্নী নিজের হাতে বেশ কয়েকরকম পদ রান্না করেছেন সাংসদকে খাওয়াবেন বলে। এরমধ্যে একটি পদ ছিল পাতলা করে আলু দেওয়া, হালকা সর্ষে বাটনা আর কাঁচা লঙ্কা চেরা দিয়ে বেড়ির বাওড় থেকে সদ্য ধরা খয়রা মাছের ঝাল, যেটা আবার একটু কালোজিরে দিয়ে সাতলানো। সাংসদ মহাশয়ার পাতলা আলু দিয়ে খয়রা মাঝের ঝাল এত ভালো লেগেছিল যে, অন্য পদ বাদ দিয়ে প্রায় সব ভাত এই দিয়েই খেয়ে নিয়েছিলেন। তাই দেখে, বাড়ির কর্তা পুনরায় জেলেদের দিয়ে খয়রা মাছ ধরে বরফ দিয়ে প্যাক করে সাংসদের গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন, যাতে রাত্রে বা পরদিন সাংসদ ওই মাছ খেতে পারেন। কিন্তু ওই দিন বিকালেই রাষ্ট্রপতির ডাকা বিশেষ অনুষ্ঠানে সাংসদকে দিল্লীর বিমান ধরতে হয়েছিল। শোনা যায় বাক্সবন্দী খয়রা মাছ নিয়েই নাকি বিমানে চেপেছিলেন ওই সাংসদ। বিমানবন্দর থেকে সোজা রাষ্ট্রপতি ভবন। খুব সম্ভবত, সেই সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন আর ভেঙ্কটরমন। কিন্তু মুশকিল বাধল বাক্সবন্দী বেড়ির বাওরের সুস্বাদু “রূপালী শস্য”কে নিয়ে। অগত্যা রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিচিত কর্মীর হাত ধরে ঠাঁই পায় রাষ্ট্রপতির পাঁকশালাতে। সূদুর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটা ব্লকের বেড়ি পাঁচপোতা থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের রান্নাঘরে পৌছে যায় এই বেড়ি পাঁচপোতা বাওরের সুস্বাদু খয়রা মাছ। রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছনোর তিরিশ বছর বাদে, আজও বেড়ির বাওড়ের খয়রা বা চাপিলা মাছ একই রকম সুস্বাদু রয়েছে। গরম গরম সরুচালের ভাত আর কাঁচালঙ্কা- সর্ষেবাটনা দিয়ে খয়রা মাছের ঝাল, এককথায় যেন অমৃত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একবার টুক করে স্বাদ নিয়ে যেতে পারেন ‘বেড়ি পাঁচপোতা’ হ্রদের খয়রা মাছের, একবার খাওয়ার পর সারা জীবন মুখে লেগে থাকবে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.