জন্মদিনে স্মরণঃ নির্মল সেন
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলাদেশের সড়কে মৃত্যুর মিছিল দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যানবাহনের নিচে চাপাপড়া মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত ছিলেন। জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সংগ্রামে। তিনি নির্মল সেন– যার হাত ধরে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনও পেয়েছিল নতুন দিশা।
নির্মল সেনের বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত। মা লাবণ্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন পঞ্চম। দেশভাগের পরে নির্মল সেনের বাবা-মা অন্য সন্তানদের নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি বাংলাদেশে থেকে যান।
নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায়, পিসির বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে একবছর লেখাপড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাস্টার্স পাস করেন।
নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে, স্কুল জীবনে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।
১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যদিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক-জীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।
লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তার লেখা ‘পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ৭১এর যুদ্ধ’, ‘আমার জবানবন্দী’ উল্লেখযোগ্য।
২০০৩ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন নির্মল সেন। এরপর দেশে- বিদেশে অনেক চিকিৎসার পরে ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।
নির্মল সেন ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (৩ আগস্ট) গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন দীঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment