Press "Enter" to skip to content

সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল জমানার মধ্যে থেকেও তরুণ মজুমদার, বাংলা সিনেমার ঠিক যেন চিরতরুণ। প্রথম ছবি ‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৫৯)………।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ তরুণ মজুমদার

বাবলু ভট্টাচার্য : সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল জমানার মধ্যে থেকেও তরুণ মজুমদার, বাংলা সিনেমার ঠিক যেন চিরতরুণ। তাঁর স্ক্রিপ্ট পরিবারকে এক করে রাখার অনুপ্রেরণা জাগায়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলার ঘর থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল যৌথ পরিবারের সংজ্ঞা। নব্বইয়ের দশক দিয়ে শুরু করার কারণ, আশির দশকে টেলিভিশন আসার পর ঘরে ঘরে বাঙালি মননে আরও জাঁকিয়ে বসবেন তিনি।

তরুণ মজুমদারের প্রথম ছবি ‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৫৯)। নয়ের দশকে এসে ১৯৯০ সালে তৈরি হল ‘আপন আমার আপন’। অর্থাৎ তাঁর ফিল্ম কেরিয়ারের গ্রাফটা প্রায় এক। নিজের গণ্ডির বাইরে কখনোই বেরোলেন না। বাঙালির খুব চেনা রং, গন্ধ, পরিবেশ, মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারলেন প্রায় পাঁচ যুগ। এবং বাংলার সিনে-দর্শক কখনোই তাঁকে বর্জন করতে পারলেন না।

২০১৪ সালে প্রথম ধারাবাহিক তৈরি করলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’। যদিও সেই ধারাবাহিক খুব বেশিদিন চলেনি।

সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন ততদিনে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। এর মাঝেই অন্য একটা ঘরানা– যা দর্শকের ভীষণ কাছের, খুব চেনা অথচ নিছক বিনোদন নয়- এমন কিছুই বলতে চাইলেন তরুণ মজুমদার। ‘পলাতক’, ‘বালিকা বধূ, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘গণদেবতা’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘আলো’— বক্সঅফিস কখনও মুখ ফেরায়নি।

অথচ বাংলা সাহিত্যকে বুকে করে বেঁচে ছিলেন তিনি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমল কর, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উপন্যাস নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথ ছিল তাঁর অন্তরে। সেইসময় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ‘হিট’ পরিচালক আক্ষরিক অর্থে তিনিই।

কত কত চরিত্র বুকের ভিতরে আঁকড়ে ধরে থাকলাম আমরা। পৃথিবীর বিপুল বিস্তৃত আকাশ আমাদের এক করে বেঁধে বেঁধে রাখতে চাইছে। বারবার ঘরে ফেরার টান অনুভব হচ্ছে মজ্জায়। শাপলা শালুক ভরা টলটলে পুকুর। নারকেল গাছের সারি, বাঁশবন। মাঝে মাঝে রোদ ঢুকছে, মাঝে মাঝে ছায়া। খোড়া চালের বসতবাড়ির মাঝে মাঝে টিনের চাল। মাচায় লাউ ডাটা ঝুলছে। তাঁর ছবি দেখেই প্রথম জানা বাংলার বুকে ছড়ানো কত রঙের গ্রাম। পলাশবুনি, কীর্ণাহার, মন্দিরা, বাতাসপুর, খণ্ডগ্রাম, বাতিকর, খয়রাশোল…।

অযথা খ্যাতি বা প্রচারের আলোয় ছোটেননি কোনোদিন। বড় বড় ফিল্মি পার্টি চিরকাল এড়িয়ে গেছেন। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বগুড়া শহরে। দেশভাগের পর চলে যান ওপার বাংলার উত্তরবঙ্গে। ভুটান বর্ডারের কাছাকাছি প্রায়।

নিজের মতো খুব সাধারণ ছবিই বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন বাংলার ঘরে ঢুকে সেই ঘরের মানুষদের কথাই বলবেন। তিনি পেরেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ভালোবাসার বাড়ি’ (২০১৮)। সম্ভবত আরেকটি ছবির শুটিং-ও শুরু করেছেন।

তরুণ মজুমদার আসলে কখনও থেমে যাননি। ঠিক এই কারণেই তাঁকে বাংলার চিরতরুণ বলা চলে।

তরুণ মজুমদার ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.