জন্মদিনে স্মরণঃ স্যা র র জা র মু র
বাবলু ভট্টাচার্য ; সত্তরের দশকে যে সুদর্শন অভিনেতার হাত ধরে কিংবদন্তি ব্রিটিশ গুপ্তচর জেমস বন্ডের চরিত্রটি গোটা বিশ্বের তরুণীদের কাছে হয়ে উঠেছিল তুমুল জনপ্রিয় তিনি রজার মুর।
তিনি তার কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মডেল হিসেবে। ‘৫০- এর দশকের শুরুতে খ্যাতনামা প্রযোজনা সংস্থা এমজিএম -এর সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন মুর। তবে বড় পর্দায় নয়, সাফল্যের স্বাদ মুর পেয়েছেন ছোটপর্দার হাত ধরেই। সত্তরের দশকের দুই টিভি সিরিজ ‘দ্য সেইন্ট’ এবং ‘দ্য পারসুয়েডার্স’-এর কল্যানেই জনপ্রিয় তারকায় পরিণত হন তিনি।
ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার সুপুরুষ মুর-এর কাছে জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল ষাটের দশকের শেষেই। কিন্তু টিভি সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সেই সময় এই প্রস্তাবে রাজি হননি মুর। ১৯৭৩ সালের হিট সিনেমা ‘লিভ এন্ড লেট ডাই’-এর মাধ্যমে বন্ড জগতে প্রবেশ রজার মুরের, যে যাত্রা সফলভাবে টিকেছিল পরবর্তী এক যুগ!
প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার পুলিশ বাবা জর্জ আলফ্রেড মুর একটি ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েছিলেন নির্মাতা ব্রায়ান ডেসমোন্ড হারস্টের বাড়িতে। সেখানেই পরিচালকের সঙ্গে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দেন জর্জ।
পরে ১৯৪৫ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’র জন্য অতিরিক্ত শিল্পী (এক্সট্রা) হিসেবে সেই তরুণকে নির্বাচন করেন ব্রায়ান। অভিনয়ের সুবাদে নারী দর্শকদের হৃদয় অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর জাতীয় পরিষেবার জন্য সশস্ত্র হন মুর। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। ১৯৪৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে রয়েল আর্মি সার্ভিস কর্পসে যোগ দেন।
১৯৫০ সালে মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেন মুর। এ সময় বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে তাকে। তবে নিজের লেখা বই ‘লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং: টেলস ফর্ম টিনসেলটাউন’-এ তিনি লিখেছেন, ১৯৪৯ সালের ২৭ মার্চ নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক পেট্রিক হেমিলটনের ‘দ্য গভারনেস’ শো’তে বব ড্রিউ নামে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সে সময় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিলো সেটি।
১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এ সিরিজে তিনি অভিনয় করেন। এ সময়েই তিনি জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পান। কিন্তু টেলিভিশনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকায় তা ফিরিয়ে দেন। অবশেষে শন কনারি জেমস বন্ড চরিত্রে আর অভিনয় করবেন না বলে ঘোষণা দিলে ১৯৭৩ সালে জনপ্রিয় এই ব্রিটিশ গুপ্তচরের চরিত্রে দেখা যায় রজার মুরকে। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এই সিরিজের সাতটি ছবিতে তিনি জেমস বন্ড হয়েছেন মুর। এতেই খ্যাতির চূড়ান্ত শিখড়ে পৌঁছে যান তিনি।
‘জেমস বন্ড’ সিরিজ থেকে বিদায় নেওয়ার পর পাঁচ বছর তিনি আর অভিনয় করেননি। ১৯৯০ সালে টিভি সিরিজের মাধ্যমে ফের অভিনয় জগতে ফিরে আসেন। ২০১১ সালে করা ‘দ্য প্রিন্সেস ফর ক্রিসমাস’ তার অভিনীত শেষ ছবি।
রজার মুর ২০০৩ সালে ‘স্যার’ উপাধি পান। লম্বা সময় ধরে তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৭ সালের ২২ মে ৮৯ বছর বয়সে স্যার রজার মুর মারা যান।
রজার মুর ১৯২৭ সালের আজকের দিনে (১৪ অক্টোবর) লন্ডনের স্টকওয়েলে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment