Press "Enter" to skip to content

“ষষ্ঠীতে দেবী কাত্যায়নী “! ( MAA KATYAYANI)….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১১ অক্টোবর ২০২১।
আমরা পূর্ব ভারতে যখন দুর্গাপুজোয় মেতে থাকি তখন পশ্চিম ভারতে ধূমধাম সহকারে মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ন’দিন ধরে চলে দুর্গার ন’টি পৃথক রূপের আরাধনা ৷ একেকদিন একেক দেবীর পূজা করেন হিন্দু , জৈন ও শিখ ভক্তরা ৷ বসন্তকালেও এমনটা হয় ৷ সেটা চৈত্র নবরাত্রি আর এখন অকাল বোধনের সময় শারদীয় নবরাত্রি ৷ সনাতন বিশ্বাস পার্বতীর নয়টি রূপ রয়েছে ৷ পিতামহ ব্রহ্মা নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন ৷এঁরা প্রত্যেকেই দেবীর নয়টি কায়াব্যূহ প্রতিমা তথা বৈচিত্রময় রূপভেদ ৷শ্রীশ্রী চন্ডীর দেবী কবচ অধ্যায়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্লোকে নবদুর্গার বর্ণনা ও মহিমা ব্যক্ত হয়েছে ৷ ৷” প্রথমং শৈলপুত্রীতি দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী ৷/ তৃতীয়ং চন্দ্রঘন্টেতি কুষ্মান্ডেতি চতুর্থকম্ ৷/ পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা ৷/ সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্ ৷৷/ নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গা প্রকীর্তিতাঃ ৷/ উক্তোন্যোতানি নামানি ব্রহ্মনৈবমহাত্মানা ৷৷” দশমীতে এই নবরাত্রির শক্তি আরাধনা শেষ হয় ৷ ষষ্ঠ দিনে বা ষষ্ঠীর দিনে পূজিত হন “দেবী কাত্যায়নী “৷পার্বতী বা দুর্গার এক বিশেষ রূপ “কাত্যায়নী “! তিনি নবরাত্রির ষষ্ঠ রূপ ৷এই রূপে তিনি মহিষাসুরকে বধ করেন ৷ কেউ বলেন ঋষি
কাত্যায়ন প্রথম দুর্গাকে পুজো করেছিলেন বলে নাম “কাত্যায়নী ” ৷ আবার কাত্য বংশীয় ঋষি কাত্যায়ন তপস্যা করে জগন্মাতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁর এক পুত্র থাকলেও কোন কন্যা নেই তাই দেবী যেন কাত্যায়নের মেয়ে হয়ে জন্মান ৷সেদিন ছিল আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী ৷এ তিথিতে ঋষি কাত্যায়নের ঘর আলো করে আসেন সাধকের মানস কন্যা দেবী কাত্যায়নী ৷ স্কন্দ পুরাণ মতে অসুরবধের সময় দেবীর ক্ষোভ থেকে কাত্যায়নীর জন্ম ৷ দুর্গার দ্বিতীয় নাম কাত্যায়নী ৷ যোগ ও তন্ত্র শাস্ত্রে ইনি আজ্ঞা চক্রের দেবী ৷ এই দেবীর পুজোয় নাকি হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পাওয়া যায় ৷মেলে দাম্পত্য শান্তি ৷ পশ্চিম ভারতে মা অম্বার রূপ হিসাবে কাত্যায়নীর পুজো হয় ৷ তিনি রক্তবর্ণা , ভীষণা যুদ্ধদেবী ৷কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যক , পতঞ্জলির মহাভাষ্য , মার্কন্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত শ্রীশ্রী চন্ডী , দেবী ভাগবত পুরাণ , কালিকা পুরাণ এবং বামন পুরানে কাত্যায়নীই দুর্গা বলা হয়েছে ৷ সাধারণ ভাবে দেবী চতুর্ভুজা ৷ যাঁর ডান দিকের উপর হাতে বর ও নিচ হাতে অভয় মুদ্রা এবং বাঁ দিকের উপর হাতে পদ্ম ও নিচ হাতে রয়েছে খড়্গ ৷ তবে , তন্ত্রসারের ধ্যানমন্ত্রে তিনি মা দুর্গার সাথে অভিন্ন ৷দশভূজা মহিষাসুরমর্দ্দিনী ৷ আবার হরিবংশে তাঁর আঠারোটি হাতের কথা পাই ৷কাশীতে আট হাতের কাত্যায়নী পূজিতা হন ৷ যাহোক মা ঋষি কাত্যায়নের কাছে সপ্তমী , অষ্টমী ও নবমীতে পূজা লাভের পর দশমীর দিন এই রূপেই দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন বলে জানা যায় ৷জি ভান্ডারকরের মতে তিনি কাত্য জাতি পূজিতা বলে কাত্যায়নী ৷ তামিল মহিলারা ভিজে বালি দিয়ে কাত্যায়নীর মূর্তি তৈরী করে তামিল পঞ্জিকার পয়লা তাই ( জানুয়ারি -ফেব্রুয়ারিতে) এই পুজো করেন ৷বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থেও কাত্যায়নীর উল্লেখ আছে ৷বেদে লেখা আছে শতপথ ব্রাহ্মণের রচয়িতা ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্যর দুই স্ত্রী একজন কাত্যায়নী ও অন্যজন মৈত্রেয়ী ৷ বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোরের মাগুরায় দুর্গা পূজার ঠিক এক মাস বাদে এখনও খুব জাঁকজমক সহকারে কাত্যায়নী পূজা হয় ৷ মৎস্যজীবি মানুষ আশ্বিনের দুর্গাপূজায় অংশ নিতে পারতেন না ৷ তাই মাগুরার পারনান্দুয়ালী গ্রামে জেলে সম্প্রদায়ের নেতা সতীশ মাঝি মাগুরায় কাত্যায়নী পুজোর প্রচলন করেন ৷ আমি দেখে এসেছি মাগুরা শহর সহ ঐ জেলায় ৮৯টি মন্ডপে কাত্যায়নী পুজো হতে ৷ দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনে এই ঠাকুর দেখতে ভীড় জমান ৷ নবদ্বীপের রাসে প্রভাত সংঘের এই ( ছবিতে দেওয়া )কাত্যায়নী পূজা দেখতে প্রচুর মানুষের ভীড় জমে ৷আমরা জানি স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী কাশীর আত্মবীরেশ্বর মন্দিরে দেবী কাত্যায়নী ও তাঁর ভৈরব শিবের কাছে মানত করে স্বামীজীকে পুত্র হিসাবে পান ৷ এখনও কাশীর আত্মবীরেশ্বর শিব ও কাত্যায়নীর ঐ মন্দিরে শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির ষষ্ঠ বা ষষ্ঠীর দিন বিশেষ পূজা অর্চনা হয় ৷ অনেকেই মনের মত স্বামী পাওয়ার জন্য এক মাস ধরে কাত্যায়নী ব্রত করেন ৷ ভাগবত পুরাণ মতে বৃন্দাবনের গোপিনীরা শ্রীকৃষ্ণকে পতি রূপে পেতে সারা মাঘ মাস ব্যাপী কাত্যায়নী ব্রত করেছিলেন ৷বৃন্দাবনে যে সতীপীঠ আছে তার দেবী কাত্যায়নী ৷ অবেরসা কর্ণাটকে ১৫১০ সালে নির্মীত কাত্যায়নী মন্দির দক্ষিণ ভারতে খুব জনপ্রিয় ৷ দিল্লীর ছাতারপুরেও রয়েছে সুরোম্য কাত্যায়নী মন্দির ৷বাংলার শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের সময় থেকে তাঁদের বাড়ীতে অর্থাৎ বড় গোস্বামী বাড়ীতে দুর্গাপূজার সময় কাত্যায়নী পুজো হয় ৷ এখানে যেহেতু বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তাই দেবীর দুটি বড় এবং আটটি ছোট হাত থাকলেও হাতগুলিতে কোন অস্ত্র থাকে না ৷আর সিংহ হয় সাদা রঙের ৷ এবারে ১১ অক্টোবর ২০২১ বাংলার ২৪ আশ্বিন সোমবার নবরাত্রির ষষ্ঠী তিথি ৷ ঐ দিন দুর্গা কাত্যায়নী রূপে হলুদ ফুলে পূজিতা হন ৷
“চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবাহধা ৷
কাত্যায়নী শুভং দদ্যাদ্দেবী দানবঘাতিনী “৷
সনাতন হিন্দু ধর্মে নবরাত্রি পালন বিশেষ শুভ ভাবা হয় ৷ নয় দিনের একেক দিন মা দুর্গার একেক রূপের পূজায় দেবী অনুযায়ী মন্ত্র পাঠ ও ভোগ হয় ৷ শৈলপুত্রী ,ব্রহ্মচারিণী , চন্দ্রঘন্টা , কুষ্মান্ডা , স্কন্দমাতা , কাত্যায়নী , কালরাত্রি ,মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রীর পুজো হয় পর্যায়ক্রমে পর পর দিন ৷ আবার ষষ্ঠীর দিন দেবীর ঘট স্থাপন করে দুর্গাপূজার সূচনা হয় ৷
“কাত্যায়নী মহামায়েমহায়োগিনাথেশ্বরী ৷
ননদোপুস্তম দেবীপাতিম মে কুরু তে নমহ ৷৷”
ওঁ হ্রিং কাত্যায়নী স্বাহা ৷
হ্রিং শ্রীং কাত্যায়নী স্বাহা ৷

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.