বাবলু ভট্টাচার্য : শ্রীদেবীকে বলা হয় বলিউডের প্রথম সুপারস্টার অভিনেত্রী। তিনি ছিলেন সেই বিরল অভিনেত্রীদের একজন, কোনো প্রতিষ্ঠিত নায়কের উপস্থিতি ছাড়াই যার সিনেমা বক্সঅফিসে ব্যবসাসফল হত। শ্রীদেবীর পারিবারিক নাম শ্রী আম্মা আয়াঙ্গার ইয়াপ্পান। শিশুশিল্পী হিসেবে তামিল ছবি ‘থুনাইভান’য়ে তার অভিনয়ের শুরু। প্রথম ছবিতেই দর্শকদের মন জয় করে এই অভিনেত্রী খ্যাতি পান ‘বেবি ডল’ নামে। মালায়ালাম সিনেমা ‘পুমপাত্তা’তে অভিনয় করে পান কেরালার সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার।পাঁচ দশকের অভিনয় জীবনে ভারতের বিভিন্ন ভাষার দেড় শতাধিক চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন শ্রীদেবী। এর মধ্যে রয়েছে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘লামহে’, ‘চাঁদনী’, ‘চালবাজ’, ‘নাগিনা’ ও ‘সাদমা’র মতো তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।১৯৭৫ সালে সুপারহিট হিন্দি সিনেমা ‘জুলি’তে নায়িকার ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডের পরিচালকদের দৃষ্টি কাড়েন শ্রীদেবী। পরের বছরই তামিল সিনেমায় তাকে দেখা যায় নায়িকার চরিত্রে। কমল হাসান ও রজনীকান্তের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে তার জুটি দর্শকপ্রিয়তা পায়।

‘সোলভা সাওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে হিন্দি চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিষেক ঘটে শ্রীদেবীর। তবে ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হিম্মতওয়ালা’র মাধ্যমে বলিউডে তার জয়যাত্রা শুরু হয়। জিতেন্দ্রর বিপরীতে শ্রীদেবীর অভিনয়, বিশেষ করে তার নাচ ঝড় তোলে দর্শক-হৃদয়ে। ওই সিনেমায় ‘নয়নে সে স্বপনা’ গানের সঙ্গে শ্রীদেবীর নাচ এখনও স্মরণ করেন পুরানো দিনের হিন্দি ছবির দর্শকরা। এরপর একের পর এক মুক্তি পায় শ্রীদেবী অভিনীত ‘তোহফা’, ‘মাওয়ালি’, ‘মাকসুদ’, ‘জাস্টিস চৌধুরি’। প্রতিটি ছবিই বাণিজ্যিক সাফল্য পায়। ১৯৮৩ সালে মুক্তিপাওয়া ‘সদমা’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান শ্রীদেবী। এ সিনেমা ছিল ‘মুনদ্রাম পিলাই’ এর হিন্দি রিমেক। স্মৃতি হারানো তরুণী চরিত্রে শ্রীদেবীর সেই অভিনয় এখনও হিন্দি সিনেমার দর্শকরা মনে রেখেছেন।আশির দশকে বলিউডে যখন আজগুবি কাহিনী, মারদাঙ্গা চিত্রায়ন আর যৌনতার রমরমা, অবস্থান টিকিয়ে রাখতে শ্রীদেবীকেও সেই দৌড়ে অংশ নিতে হয়। তবে তার মধ্যেও শ্রীদেবী তার অভিনয় দক্ষতার ঝলক দেখিয়ে প্রশংসা কুড়ান। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘নাগিনা’। ঋষি কাপুরের বিপরীতে সেই সিনেমায় শ্রীদেবীর অসামান্য সৌন্দর্য, তার নাচ ও অভিনয় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। ছবিটি ছিল ব্লকবাস্টর হিট। এর সিকুয়েল‘ নিগাহে নাগিন’ও ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল।

ক্যারিয়ারের ওই সময়েই শ্রীদেবী হয়ে ওঠেন হিন্দি সিনেমার সুপারস্টার। ‘কার্মা’, ‘জাঁবাজ’-এর মতো বহু তারকা অভিনেতার সিনেমাতেও মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠেন তিনি। রোমান্স, অ্যাকশন, কমেডি- তিন ধরনের অভিনয়েই বলিউডে তিনি তখন সেরা। অনিল কাপুরের সঙ্গে শ্রীদেবীর কমেডি সিনেমা ‘মি. ইন্ডিয়া’ দর্শকপ্রিয় হওয়ার পর এ দুই তারকার জুটিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘চালবাজ’ সিনেমায় অঞ্জু-মঞ্জু দুই যমজ বোনের চরিত্রে শ্রীদেবী দুর্দান্ত অভিনয় করেন। ছবিটি ছিল ‘সীতা আউর গীতা’র রিমেক। কিন্তু শ্রীদেবীর অভিনয় গুণে মূল সিনেমাকেও ছড়িয়ে যায় ‘চালবাজ’।ইয়াশ চোপড়ার রোমান্টিক সিনেমাতেও শ্রীদেবী ছিলেন অনবদ্য। ‘চাঁদনি’ সিনেমার পর্দায় সাদা সালোয়ার কামিজ এবং হলুদ জর্জেট শাড়ির শ্রীদেবী হয়ে ওঠেন দর্শকের স্বপ্নের প্রেমিকা।ইয়াশ চোপড়ার ‘লামহে’ শ্রীদেবীর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা। এ চলচ্চিত্রে মা ও মেয়ের ভূমিকায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জিতেন্দ্র, মিঠুন চক্রবর্ত্তী, অনিল কাপুর, ঋষি কাপুর, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে শ্রীদেবী উপহার দেন ব্লকবাস্টার সব সিনেমা। ‘খুদা গাওয়া’তে তরুণী বেনজীরের ভূমিকায় তিনি হয়ে ওঠেন শক্তিময়ী ও কোমল আফগান নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক। ‘লাডলা’ সিনেমায় অহকাংরী শিল্পপতির চরিত্রে শ্রীদেবী ছিলেন আবেদনময়ী। ‘জুদাই’ ছবিতে লোভী গৃহবধূ কাজলের চরিত্রেও তার অভিনয় ছিল নজরকাড়া। বৈচিত্র্যময় এ অভিনয়শিল্পী ১৯৯৭ সালে ‘জুদাই’ চলচ্চিত্রের মুক্তির পর বিরতি নেন। ২০১২ সালে চলচ্চিত্রে ফেরেন ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ নিয়ে। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন পাঁচবার। ২০১৫ সালে পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড। তিনি ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ারের বাথরুমের বাথটাবের পানিতে দম আটকে মৃত্যু বরণ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ছিল শুধুই একটি দুর্ঘটনা।
শ্রীদেবী ১৯৬৩ সালে (১৩ আগস্ট) তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment