Last updated on September 25, 2022
স্মরণঃ শ্যা ম ল গ ঙ্গো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : একবার আরাম কেদারায় হেলান দিতে শিখলে মাদুরে বসার অভ্যাস ভুলে যেতে হয়। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন সেই বিরলপ্রজদের একজন, যিনি মাদুর না পেলে মাটিতেই আসন নিতে জানতেন।
ইস্পাত কারখানায় লোহাগলানোর কাজ করেছেন যৌবনের শুরুতে। এরপর ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় সতেরো-আঠারো বছর। পদোন্নতি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় ঊর্ধ্বতনের চেয়ারে- বসা অগ্রজ-ভাষাচিত্রী সন্তোষকুমার ঘোষকে ‘সন্তোষদা অফিসেই থাকো; তোমাকে পেটাতে আসছি’ বলে সত্যিই পিটিয়ে ছেড়ে দিলেন আনন্দবাজারের লোভনীয় চাকরিটি। কলকাতা ছেড়ে চলে গেলেন প্রান্তিকে। একেই বলে বুকের পাটা। সবার থাকে না।
১৯৩৩ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের খুলনা শহরে জন্ম নেয়া শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের শুরু হলো লোকাল ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারির জীবন। খবরের কাগজে খণ্ডকালীন চাকরি এবং ভূমিহীন চাষীদের নিয়ে সমবায়-চাষবাস ও ইটভাটার কাজ যুগপৎ। কয়েক বছর দেহাতি লোকজনের সঙ্গে ধুলোমাটি মাখামাখি করে ফিরে এলেন কলকাতার জীবনে। পূর্ণকালীন চাকরি নিলেন দৈনিক অমৃতবাজারে।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জানতেন– ‘সম্পাদকের থাকবে এই মুক্তমন। প্রসন্ন চিত্ত। জিজ্ঞাসু প্রাণ। তিনি হবেন অনুসন্ধানী। নবীন লেখকদের উৎসাহ দেবেন। নতুন-নতুন রাস্তা খুলে ধরবেন।’
‘কুবেরের বিষয় আশয়’, ‘ঈশ্বরীতলার রূপোকথা’, ‘পরীর সঙ্গে প্রেম’, ‘হাওয়াগাড়ি’, ‘অদ্য শেষ রজনী’, ‘গতজন্মের রাস্তা’সহ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কত না উপন্যাস অনেকের লেখক-সত্তা নির্মাণে শিক্ষকের মতো কাজ করেছে।
শৈশব কেটেছে পূর্ববঙ্গে। রাজনীতি করার অপরাধে কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। ওই সময়ে প্রথম গল্প লেখেন ‘চর’ ‘মহাকাল কেবিন’। উপন্যাস লেখেন ‘আড়িয়া হাফেজ’।
১৯৯৩ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান “শাহজাদা দারাশুকো” উপন্যাসের জন্য। এছাড়াও পেয়েছেন ভুয়ালকা, শিরোমণি, মতিলাল, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, গজেন্দ্রকুমার মিত্র, শরৎস্মৃতি, রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত কথা পুরস্কার।
আমেরিকা জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশ, বাংলাদেশে সরকারি অতিথি হয়ে ভ্রমণ করেছেন। উপন্যাস লিখেছেন সত্তরটির মতো। গল্প লিখেছেন প্রায় তিনশো।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ২০০১ সালের আজকের দিনে (২৪ সেপ্টেম্বর) আটষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment