ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। শুধু ম্যাজিক নয়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার সাফল্যের মূল মন্ত্র হলো ‘ডিসিপ্লিন’। কথাটা আমরা সবাই জানি, সবাই অন্যেকে উপদেশ দিই, কিন্তু মানি ক’জন? বাবা বলতেন, এই উপলব্ধি যার হয়নি, তার জীবনে কিস্যু সফল হবে না। চোট্টামি করেও না। সেখানেও একটু ডিসিপ্লিন লাগে।
“বৃক্ষ, তোমার নাম কি?…ফলে পরিচয়।” বাবার জীবনটাই তার প্রত্যক্ষ প্রমান। কক্ষণো হারেন নি।শুরু থেকে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জিতেই গেছেন। কারুর অনুকম্পার তোয়াক্কা করেন নি। তিনি সফল। ভারতবর্ষের আর কোন শিল্পী পেরেছিলেন "ফলি বার্জে"র মতো 'উলঙ্গ নারীর বদমায়েসী রুচী'র রগরগে লাইভ মঞ্চানুষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, ওদের থেকেও ভালো ব্যবসা করে জিতে, অস্ট্রেলিয়ার মতো বর্ণ বিদ্বেষী দেশে, মাসের পর মাস 'ইন্দ্রজাল' প্রদর্শনী করে, মানুষের মন জয় করে, সদর্পে বুক চিতিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিতে ? কেউই নয়। ফাঁকা। খবরও রাখে নি, 'ফলি বার্জে' কি ?..খায় না, মাথায় দেয়!!?? সেটাও অজানা। কচু বনের শেয়ার রাজা নিয়ে লম্ফ-ঝম্প করেছেন ।

আমাদের মাথার ওপর যারা আছেন, তাঁরাও তাই।মুম্বাই-এর সিনেমার হিরো এসে তাদের থুতনি ঝাঁকিয়ে চুমু খেলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙ্গার দুঃখটা তাদের মুছে যায়। এইতো বাস্তবের চেহারাটা।
সেজন্য ষে কেউ আমাদের দেশে ,নিন্দে করলে, ক্ষতি ,অবজ্ঞা, অথবা অসহযোগিতা করার চেষ্টা করলে, বাবা বাড়িতে আমাদের এসে বলতেন, “তার মানেই তো ও হেরে গেছে, ওদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ওরা করেই থাকে। ওদের লেভেল”

সত্যিই তাই! তাঁরা কোথায় ? ওদের সন্তানেরাও ওদের সম্মান করে না। কথা তুললে এড়িয়ে যায়। ওরা নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে থেকে এক একটা দল পাকায়। যেন কুষ্ঠ রুগীর দল। সমবেত হয়েছে। “তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। যতটা কাজ করলে, ততটাই এগুলে।সত্য প্রকাশ পাবেই।”
বিদেশ যাবার আগে, বাবা আমাদের ক্লাস নিতেন।বলতেন ,”আমরা ভারতের সাংস্কৃতিক সৈন্য। সবাই তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। আমাদের মধ্য দিয়েই দেশকে, ভারতবর্ষের শিক্ষা,সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার, স—ব দেখবে। সজাগ থেকো…”

সম্প্রতি লণ্ডনে এক ভারতীয় বিচিত্রানুষ্ঠানে আমরাও মনোনিত হয়ে গিয়েছিলাম। বাঘা বাঘা, বিশাল বড় বড় শিল্পী । খবরের কাগজে প্রায় রোজই তাদের বড় বড় ছবি ছাপা হয়। কসম খেয়েছি, আর এই ভুলটা করবো না। আমাদের ডিসিপ্লিন নিয়ে তাদের কি হাসাহাসি। তাঁরা মদ খেয়ে, বমি করে, হোটেলে ফিরে চিৎকার করে ঝগড়া করে..টেবিলে বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে, তবলা বাজিয়ে, বোতল ছুঁড়ে মেরে, ওদিকে শিল্পীরাও অর্ধেক নেচে, মাঝপথে ঝগড়া- অপমান .... না ,না, সব মিথ্যে কথা। এসব কি সত্যি হতে পারে ? বানিয়ে বলছি। কোথাও কোনো কাগজে কি প্রকাশ পেয়েছে ? পায়নি।
সুতরাং হয়নি।


Be First to Comment