সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। বর্তমান বছরে সবার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। করোনার তৃতীয় ঢেউ অমিক্রন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে চায়, ইতিমধ্যে এই দেশের কোটি কোটি মানুষের ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হয়েছে। এই সময় বেশিরভাগ মানুষ ডিকোশন, জুস বা গ্রিন টি পান করছেন। স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকেই খুব উদ্বিগ্ন থাকেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে শীতকালে ফ্লু বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া সাধারণ ঘটনা, তাই এই অতিমারির সময়ে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ারও একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তবে শীতের মরশুমে এমন কিছু ফল পাওয়া যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এই ফলগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। এখানে তেমন পাঁচটি ফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. পেয়ারা : আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি ফল। সহজলভ্য এই ফলটির অনেক পুষ্টিগুণ। শুধু ফল নয়, পেয়ারা পাতায় রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ : পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন – সি এবং ভিটামিন- এ। একটি পেয়ারাতে চারগুণ বেশি ভিটামিন -সি থাকে একটি মাঝারি আকৃতির কমলালেবুর থেকে। দশগুণ বেশি ভিটামিন -এ রয়েছে লেবুর তুলনায়। এছাড়া ভিটামিন বি২ ,ই ,কে, ফাইবার ,ক্যালসিয়াম , কপার , আয়রন , ফসফরাস এবং পটাসিয়াম রয়েছে।
উপকারিতা :
(১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
(২) ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস।
(৩) হার্ট সুস্থ রাখে।
(৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
(৫) ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে।
(৬) রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
(৭) দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
(৮) মাসিকের ব্যথা নিরাময় হয়।
(৯) পেটের সমস্যা দূর করে।
(১০) ত্বক ও চুলের পরিচর্যা করে।
(১১) ওজন কমাতে সাহায্য করে।
(১২)বয়সের ছাপ কমায়।
২. কমলালেবু : শীতকাল মানেই কমলালেবু। এই ফল একদিকে যেমন সুস্বাদু ,তেমন অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্য ও অত্যন্ত পুষ্টিকর।তাই চিকিৎসকরা সুস্থ থাকতে শীতকালে রোজ কমলালেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই সুমিষ্ট রসালো ফলের বিভিন্ন পুষ্টিগুনের পাশাপাশি রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। জেনে নেওয়া যাক এই ফলের নানা উপকারিতা।
(১) হাই-ব্লাডপ্রেশার : উচ্চ রক্তচাপের রোগী প্রতিদিন একটি করে কমলালেবু খেতে পারেন। এরমধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম , ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন -বি এবং হেসপিরিডিন নামে যৌগ রক্তের উচ্চচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(২) দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি : ভিটামিন -এ থাকায় এই ফল রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।বয়স সংক্রান্ত চোখের সমস্যাও প্রতিরোধে সাহায্য করে।
(৩) হৃদরোগ : কমলালেবুতে থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ,কোলিন , পটাশিয়াম , ডায়েটারি ফাইবার থাকে। যা স্ট্রোক, অ্যাথমিয়া এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
(৪) ক্যানসার : ত্বক, মুখের ভিতর , ব্রেস্ট , ফুসফুস , পাকস্থলী ও আরো বিভিন্ন স্থানের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। লিউকোমিয়া প্রতিরোধেও কমলালেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
(৫) স্হূলত্ব : ওজন কমাতে হলে নিয়মিত একটি কমলালেবু খেতে হবে। ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফল কম ক্যালরির।
(৬) অরুচি , বদহজম এবং কোষ্ঠবদ্ধতায় : এই তিনটি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
(৭) ডায়াবেটিস : কমলালেবুর ডায়েটারি ফাইবার এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
(৮) ক্ষতস্থান নিরাময় : অন্যান্য যে কোনও সাইট্রাস ফলের মতো কমলালেবু ও দ্রুত ক্ষতস্থান নিরাময়ে সাহায্য করে।
(৯) ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা : ঝকঝকে ত্বকের জন্য ভিটামিন- সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কমলালেবু অনবদ্য। ব্রন , সানবার্ন ,ত্বকের শুষ্কতা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থেকে ত্বককে রক্ষা করে কমলালেবু।
(১০) মানসিক অবসাদ : কমলালেবু স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে মুড বুস্টিং হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। স্মৃতি শক্তি বাড়াতে কমলালেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
৩. বেদানা : একাধিক গবেষনার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে, আজকের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে শরীর বাঁচাতে বেদনার রসের কোন বিকল্প নেই। আসলে বেদানার ভিতরে উপস্থিত ভিটামিন- সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং আর ও নানাবিধ শক্তিশালী উপাদান দেহে প্রবেশ করা মাত্র প্রতিটি কোষ , শিরা এবং উপশিরাকে , সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে।ফলে কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে আয়ু বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এখন দেখে নেওয়া যাক এই ফলের বহুবিধ গুনাবলী।
(১) ব্রেন ডিজিজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
(২) ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়।
(৩) নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে।
(৪) হার্টের ক্ষমতা বাড়ে।
(৫) চুল পড়ার হার কমে।
(৬) ক্যানসারের মতো মারন রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
(৭) ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
(৮) অ্যানিমিয়ার মতো রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না।
(৯) ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে থাকে।
(১০) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
(১১) জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধি পায়।
(১২) দাঁত শক্তপোক্ত হয়।
৪ . ন্যাসপাতি : আমাদের খুব কাছের এবং অতি পরিচিত একটি ফল ন্যাসপাতি। ন্যাসপাতি গাছে থাকা অবস্থায় ভালো ভাবে পাকে না। ফলটি সাধারণত রসালো হয়। এই ফলের ৮৩ শতাংশই জলে পরিপূর্ণ। ফলে মধ্যভাগটি বেশ নরম। আবরণ অংশটি সবুজ অথবা লালচে প্রকৃতির হয়ে থাকে।
ন্যাসপাতিতে রয়েছে ভিটামিন – এ , বি- ১,বি-২ ,ফলিক অ্যাসিড এবং নিয়াসিন নামক পুষ্টিকর উপাদান।এছাড়া ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম , কপার , আয়রনসহ অন্যান্য মিনারেলের উৎকৃষ্ট উৎস। এই ফলের নানা উপকারিতা।
(১) অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
(২) হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
(৩) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
(৪) হৃদরোগে খুবই উপকারী।
(৫) মাড়ির ক্ষয় রোধ করে।
(৬) খুশকি ও চুল পড়া দূর করে।
(৭)রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা কমায়।
(৮) ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
(৯) গর্ভাবস্থায় খুবই উপকারী।
৫. আপেল : একটি আপেল শরীরকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে। আপেলে ফাইবার , ভিটামিন- সি এবং কে থাকে।এখন দেখে নেওয়া যাক এই ফলের বিভিন্ন পুষ্টিগুন।
(১) আপেল রোগ প্রতিরোধক ও পুষ্টিকর একটি ফল , যা সুস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
(২) এতে আছে শর্করা , ভিটামিন , খনিজ লবণ, পেকটিন ও ম্যালিক অ্যাসিড। ভিটামিনের মধ্যে আছে ভিটামিন -এ এবং ভিটামিন- সি ।
(৩) আপেলের খোসায় ভেতরের থেকে প্রায় পাঁচ গুন বেশি ভিটামিন -এ আছে।
(৪) আপেল ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আপেলের মধ্যে পেকটিন -জাতীয় একটি উপাদান থাকে, যা শরীরকে কোলন ক্যানসার থেকে দূরে রাখে। ফুসফুসের ক্যানসার ও লিভার ক্যানসার প্রতিরোধেও আপেলের ভূমিকা আছে।
(৫) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
(৬) আপেল খেলে মেদ জমে না।
(৭) এটি দাঁতের মাড়ির জন্য উপকারী। আপেলের রস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে দাঁত ভালো থাকে।
(৮) আপেল হজম শক্তি বাড়ায়।
(৯) শরীরের জন্য সবুজ আপেল সবচেয়ে ভালো।
সব ফলেরই নানা গুনাগুন থাকলেও , কোন ফলই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, তাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ফল নির্বাচন করাটাই উচিত কাজ হবে।
Be First to Comment