Press "Enter" to skip to content

শর্মিলা ঠাকুর ডায়োসেসান এবং লরেটোর ছাত্রী ছিলেন। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন………।

Spread the love

শুভ জন্মদিন শর্মিলা ঠাকুর

বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি সেইসব গুটিকয়েক নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম, যার অসাধারণ সৌন্দর্য ও আবেদনময়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে তার অভিনয়গুণ ও ব্যক্তিত্ব।

‘পৃথিবী বদলে গেছে’, ‘মেরে সাপনো কি রানি’, ‘যেও না সাথী’— এমন অনেক জনপ্রিয় গানে আবির্ভূত হয়ে যিনি দর্শকচিত্তকে উদ্বেলিত করেছেন তিনি শর্মিলা ঠাকুর।

তার অনেক পরিচয়। তিনি ঠাকুর বাড়ির মেয়ে। পতৌদির নবাব পরিবারের বধূ। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি শর্মিলা ঠাকুর— ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সুন্দরী ও সুঅভিনেত্রী।

বাবা গীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সন্তান, গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়। মা ইরা বড়ুয়া ছিলেন আসামের বিখ্যাত লেখক জ্ঞানদাভিরাম বড়ুয়ার কন্যা।

শর্মিলা ঠাকুর ডায়োসেসান এবং লরেটোর ছাত্রী ছিলেন। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ছবিতে তার অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল অপর্ণা। তার নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সুন্দরী ও সুঅভিনেত্রী শর্মিলা এক ছবিতেই দর্শকদের মন জয় করে নেন, প্রশংসা পান সমালোচকদেরও।

১৯৬০ সালে মুক্তি পায় ‘দেবী’। সত্যজিৎ রায়ের এ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। দয়াময়ী চরিত্রের মানসিক টানাপড়েন, অতিপ্রাকৃত প্রভাবের সংকট সার্থকভাবে পর্দায় তুলে ধরে সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা পান।

১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় তার তিনটি ছবি। ‘শেষ অঙ্ক’ ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। তপন সিংহ পরিচালিত ‘নির্জন সৈকতে’ ছবিতেও তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। দুটি ছবিই বাণিজ্যিক সফলতা পায়। ‘ছায়া সূর্য’ ছবিতে ঘেঁটু নামে এক ভাগ্যবিড়ম্বিত তরুণীর চরিত্রে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। যদিও শিল্পধারার ছবি বলে সেটি বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি।

১৯৬৪ সালে পরিচালক শক্তি সামন্তর ‘কাশ্মির কি কলি’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি প্রবেশ করেন হিন্দি ছবির জগতে। বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্যের সুবাদে তিনি রাতারাতি তারকা হয়ে যান। একের পর এক মুক্তি পায় ‘ওয়াক্ত’, ‘অনুপমা’, ‘দেবর’ ‘শাওয়ান কি ঘাটা’। সবগুলোই বাণিজ্যিকভাবে সফল।

১৯৬৬তে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’। উত্তম কুমারের বিপরীতে অদিতি নামে এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন শর্মিলা ঠাকুর।

১৯৬৭তে মুক্তি পায় ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’। শক্তি সামন্ত পরিচালিত এ ছবিতে বিকিনি পরে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দেন তিনি। রক্ষণশীলরা সমালোচনা করলেও লাস্যময়ী নারীর ভূমিকায় দুর্দান্ত সফল হন তিনি। ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও বিকিনি পরা অবস্থায় দেখা যায় তাকে। সে সময় শর্মিলা ঠাকুর মানেই ছবির বাণিজ্যিক সফলতা ছিল নিশ্চিত।

‘আমনে সামনে’, ‘মেরে হামদাম মেরে দোস্ত’, ‘হামসায়া’, ‘সত্যকাম’, ‘তালাশ’— সব কটি ছবিই সফল। তবে সব সাফল্য ছাড়িয়ে যায় ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুপার-ডুপার হিট ‘আরাধনা’। বাংলা-হিন্দি দুটি ভাষাতে মুক্তি পাওয়া ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফল হয়। আর এ ছবির সুবাদে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ঘরে তোলেন তিনি। এ ছবিতে নায়ক ছিলেন রাজেশ খান্না। এ ছবির মাধ্যমে রাজেশ-শর্মিলা জুটির জয়যাত্রা শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদি ও শর্মিলা ঠাকুর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সে সময় অনেকেই মন্তব্য করেন যে, এ বিয়ে টিকবে না। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বলিউডের সুখী দম্পতির তকমা গায়ে জড়ান তারা। পতৌদির নবাব পরিবারের বধূ হিসেবে শর্মিলা ছিলেন আদর্শ। বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হতে হয় তাকে। নাম গ্রহণ করেন বেগম আয়শা সুলতানা।

বিয়ের পরও শর্মিলার ক্যারিয়ারে ভাটা পড়েনি। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে অপর্ণা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭১ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতেও কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে ছিলেন তিনি।

বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দিতে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবিতে ছিলেন দারুণ সফল। রাজেশ খান্নার বিপরীতে ‘সফর’, ‘অমর প্রেম’, ‘রাজারানি’, ‘দাগ’, শশী কাপুরের বিপরীতে ‘আ গালে লাগ যা’, দিলিপ কুমারের বিপরীতে ‘দাস্তান’ দারুণ ব্যবসাসফল হয়।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় গুলজার পরিচালিত ‘মওসাম’। এ ছবিতে মা ও মেয়ের দ্বৈত ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করেন শর্মিলা। এ ছবিতে তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন সঞ্জীব কুমার। এ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তোলেন শর্মিলা ঠাকুর।

বাংলা ছবি ‘ছদ্মবেশী’র হিন্দি রিমেইক ‘চুপকে চুপকে’তে ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে দারুণ কমেডি উপহার দেন তিনি। অন্যদিকে অমিতাভ বচ্চনের বিরীতে রোমান্টিক থ্রিলার ‘ফারার’ ছবিতেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়।

১৯৭৭ সালে শক্তি সামন্ত নির্মাণ করেন ‘অমানুষ’ ও ‘আনন্দ আশ্রম’ নামে দুটি দ্বিভাষিক ছবি। দুটি ছবিতেই প্রধান চরিত্রে ছিলেন উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর। দুটি ছবিই বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘গেহরি চোট’(বাংলা নাম ‘দূরদেশ’) মুক্তি পায় ১৯৮৩ সালে। এ ছবিতে শর্মিলা-শশী কাপুর জুটি অভিনয় করেছিলেন। বাংলাদেশেও ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।

২০০৩ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘আবার অরণ্যে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

শর্মিলা ঠাকুর ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মভূষণ লাভ করেন। তিনি ভারতের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। বর্তমানে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

শর্মিলা ঠাকুর ১৯৪৬ সালের আজকের দিনে (৮ ডিসেম্বর) হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *