#শরীর ও মন তরতাজা রাখতে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট অদ্বিতীয়।#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ২৪ জুন, ২০২০।
মানবজীবনের চারটি পর্যায় শুরু হয় শৈশব দিয়ে, আর শেষ হয় বার্ধক্য তে এসে। এই অনিবার্য অধ্যায় যাতে একটু দেরী করে আসে এমন ইচ্ছে নারী পুরুষ সকলের। প্রকৃতি র স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মানবদেহের এই বার্ধক্য কে ঠেকানো সম্ভব একমাত্র আ্যন্টি অক্সিডেন্ট এর সাহায্যে। এই প্রকার রক্ষক কে পাওয়া যাবে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারলে এবং আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্ৰহনের মাধ্যমে। মানবশরীরে যে কোনো অসুখ, ত্বকের অসুখ, বার্ধক্য এই সবের জন্য দায়ী ফ্রিরাডিক্যালস। মানবদেহে নিয়মিত চলছে বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম। যার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি উৎপন্ন হওয়ার প্রচুর ফ্রি রাডিক্যালস তৈরি হয় যাকে প্রশমিত করে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট। এযুগের জীবন প্রবাহে মানসিক চাপ, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, নিয়মিত সুষম আহার না করা ইত্যাদি র জন্য শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি রাডিক্যালস তৈরি হয়। ফ্রি রাডিক্যালস প্রশমনকারী এনজাইমার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আ্যন্টি অক্সিডেন্ট এদের নিরস্ত্র না করতে পারে ততদিন পর্যন্ত এরা শরীরে ধ্বংস লীলা চালিয়ে যায়। আমাদের শরীরের মধ্যে কিছু আ্যন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যেমনঃ সুপার অক্সাইড ডিসমিউটেড, গ্লুটামিক পার অক্সিডেন্ট ইত্যাদি। তবে শরীরে নানা অনিয়ম পরিস্থিতি তৈরি হলে এই নিজস্ব আ্যন্টি অক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। তাই দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস যেন আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয় তার দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি।
খুব পরিচিত রোজকার খাবারের মধ্যেই এই আ্যন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন, ক্রিপটোজ্যানথিন, ক্যানজামাইন, পলিফিনলিক আ্যসিড, ভিটামিন এ, সি, ই, কপার, জিঙ্ক ইত্যাদি আ্যন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলোর নাম যতই কঠিন হোক পাওয়া যায় খুব সহজেই। যেমন -পালংশাক, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, নেশা, পুঁইশাক , সজনে ডাঁটা, মেথিশাক ইত্যাদি র মধ্যে। এই সমস্ত প্রকার সবুজ শাকে থাকে বিটা ক্যারোটিন। ঢ্যাঁরশ, সয়াবিন, মটরশুঁটি তে থাকে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট। তাছাড়া, সবুজ শাকসবজি তে প্রচুর ভিটামিন থাকে। বিভিন্ন ফল যেমনঃ পাকা পেঁপে, কমলালেবু, পাকা আম, নাশপাতি, আঙুর, জাম সব ফলেই প্রচুর আ্যন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। কালো গমে থাকে লিউটেন। আনারস, টমেটো, বাতাবিলেবু তে আছে ভিটামিন সি। নানা রকমের শষ্য, গম, চাল, ডাল, কিশমিশ, আখরোট, খেজুর, বাদাম ইত্যাদি কপার সমৃদ্ধ খাদ্য। দুধ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস এই সব খাদ্যে থাকে সেলেনিয়াম। যা, এক প্রকার আ্যন্টি অক্সিডেন্ট।
অতিরিক্ত মাছ মাংস শরীরের পক্ষে ক্ষতি কর।বিশেষ করে রেডমিট, বেশি খেলে রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়, বাড়তি আয়রন অক্সিডেন্ট নষ্ট করে। তাই বেশি মাছ মাংস খেলে তার সাথে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার সমপরিমাণ খাওয়া দরকার। তবে শাকসবজি, মাছ মাংস , বিভিন্ন প্রকার ফল সবকিছুই ভারসাম্য রেখে খাওয়া উচিত। কোনোটাই একক ভাবে শরীরের জন্য উপযোগী নয়।
অনেকে, দেহের ব্যাথা যন্ত্রনা কমানোর জন্য আ্যন্টি অক্সিডেন্ট ক্যাপসুল খাওয়া অভ্যাস করেন , এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো ই খাওয়া উচিত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের মাধ্যমে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় শতকরা একশ ভাগ, অন্যদিকে ট্যাবলেট, ক্যাপসুলে কাজ হয় মাত্র ২৫ শতাংশ। শরীর সুস্থ, তরতাজা এবং তারুণ্য ধরে রাখতে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রোজ খেতে ই হবে।
Be First to Comment