শুভ জন্মদিন শবনম
বাবলু ভট্টাচার্য : অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের লিপে মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ গানটির কথা মনে আছে? এখনো দারুণ জনপ্রিয় গানটি। এ সিনেমার নায়িকা ছিলেন ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শবনম।
তারপর শুধুই দর্শকমন জয় করে এগিয়ে যাওয়া। নব্বই দশক পর্যন্ত পাকিস্তান আর বাংলাদেশে প্রায় ১৮৫টি ছবিতে অভিনয় করেন।
বাংলার পাশাপাশি উর্দু ও পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রেও রয়েছে তার সুনিপুণ অভিনয়ের ছাপ।
তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি কিনা পাকিস্তান চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা নিগার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন ১২ বার। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে অসংখ্য নানা সম্মাননায় সমৃদ্ধ হয় তার অর্জনের ঝুলি।
ষাটের দশকের জনপ্রিয় এই তারকার প্রকৃত নাম ঝর্ণা বসাক। তার বাবা ননী বসাক ছিলেন একজন স্কাউট প্রশিক্ষক ও ফুটবল রেফারী। ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বনামধন্য সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষকে বিয়ে করেন তিনি।
বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ক্যাপ্টেন এহতেশামের ‘চান্দা’ ছবিতে ১৯৬২ সালে অভিনয় করেন শবনম। এই নির্মাতাই ‘হারানো দিন’ ছবিতে তাকে ‘শবনম’ নামটি দেন। শবনম নামের অর্থ হলো- ফুলের মধ্যে বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পড়া।
‘চান্দা’ ছবিটিও দর্শক বিপুলভাবে গ্রহণ করলে অভিনেত্রী শবনমের শুরু হয় রুপালি পর্দায় শুধুই সাফল্যের সিঁড়িতে ওঠা।
১৯৬৮ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন। সত্তর দশকের শুরুতে শবনম ললিউডে (লাহোর) পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেন। ১৯৮৮ সালে শবনম ঢাকা ও লাহোরের চলচ্চিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করতে থাকেন।
শবনম অভিনীত বাংলা সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘আমার সংসার’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘আম্মাজান’, ‘কখনো আসেনি’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘নাচের পুতুল’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সহধর্মিনী’ ইত্যাদি।
তার অভিনীত উর্দু সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘আখেরি স্টেশন’, ‘আসরা’, ‘আনমল মোহাব্বত’, ‘আনারি’, ‘আনোখী’, ‘আয়না’, ‘আবশার’, ‘আখো আখো মে’, ‘ইন্তিখাব’, ‘কারাবান’, ‘ক্যয়সে কাহু’, ‘কসম আজ ওয়াক্ত কি’, ‘কাভি আলভিদা না ক্যাহনা’, ‘চান্দা’, ‘চালো মান গায়ে’, ‘জাঞ্জীর’, ‘জাগীর’, ‘তালাশ’, ‘তুম মেরে’, ‘দোস্তী’, ‘দিল্লাগী’, ‘দিল নাশীন’, ‘নয়া আন্দাজ’, ‘নারাজ’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘পেহচান’, বেগানা’, ‘বিন্দাস’, ‘রিশতা’, ‘হাম দোনো’, ‘শরীক-ই-হায়াত’, ‘শরাফত’, ‘সাগর’ ও ‘সমন্দার’।
১৯৯৯ সালে সর্বশেষ কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং শবনম এ প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে শবনম বলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে, আমার অভিনীত প্রথম ও শেষ ছবি ছিল আমার ক্যারিয়ারের সেরা ছবি।’
শবনম (ঝর্ণা বসাক) ১৯৪০ সালের আজকের দিনে (১৭ আগস্ট) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment