পারিজাত মোল্লা : মঙ্গলকোট, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির গড়ে গেছেন একদা মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ ( হামিদ বাঙালি), সেই সম্প্রীতির মেলবন্ধন এখনও অক্ষত মঙ্গলকোটের বুকে।এখানে কালিপুজোর সূচনা ঘটে পীরের মাজারে চাদর চাপিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মঙ্গলকোটের পুরাতন থানায় পীর পাঞ্জাতন বাবার মাজারে চাদর চাপিয়ে মঙ্গলকোট থানার কালীপুজোর শুভ সূচনা করলেন আইসি মধুসূদন ঘোষ সহ অন্যান্য অতিথিবর্গরা। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার শতাধিক বছরের ধর্মীয় রীতি মেনে পীর পাঞ্জাতন বাবার মাজারে চাদর চাপিয়ে কালীপুজোর শুভ সূচনা হলো এদিন । এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।আগামী রবিবার পুরাতন থানার মাঠে পীর বাবার জলসা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে বসে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হবে বলে জানান মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ ।প্রসঙ্গত, ‘আঠারো অলি’ খ্যাত মঙ্গলকোটে সূদুর পারস্য থেকে পায়ে হেঁটে এই মঙ্গলকোটে এসেছিলেন সুফি আব্দুল হামিদ দানেশখন্দ।পরবর্তীতে আফগান – মুঘল যুদ্ধের সময় বর্ধমান মহারাজার কাছে এসেছিলেন শাহজাদা খুরহম,যিনি পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশা হিসাবে পরিচিত পান।সেসময় শাহজাদা খুরহম মঙ্গলকোটে সুফি আব্দুল হামিদ দানেশখন্দের সান্নিধ্যে আসেন।দীক্ষাও নেন সেসময়। পরবর্তীতে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সুদূর দিল্লি থেকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশা পায়ে হেঁটে আসেন এই মঙ্গলকোটেই। গুরুর প্রতি এহে শ্রদ্ধা নিবেদন ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল এক অধ্যায় ।আব্দুল হামিদ দানেশখন্দ নিজে একজন পারস্যের বাসিন্দা, মুঘল আমলের শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু হলেও বাংলা – বাঙালি কে ভালোবেসে নিজের পরিচয় দিতেন ‘বাঙালি’ হিসাবে। তাই তো এই সুফি কে আপামর বাঙালি চিনে ‘হামিদ বাঙালি’ হিসাবে। দক্ষিণ বঙ্গের আঞ্চলিক গবেষক তথা বর্ষীয়ান সাংবাদিক রণদেব মুখার্জি জানান -” মঙ্গলকোটের কুনুর নদীর তীরবর্তী এলাকায় দানিশমন্দের মাজারে প্রার্থনা করার পর মাকালী পুজো শুরু করা হয়। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রথা সম্প্রীতির অনন্যধারা হিসেবে মঙ্গলকোটে বজায় আছে। দেশজুড়ে ধর্মীয় হানাহানির আকচা আকচির মাঝেও মঙ্গলকোটের দানিশমন্দের বারদুয়ারি মসজিদের পাশে মাজারে চাদর চড়িয়ে দেবী আরাধনায় মাতেন মঙ্গলকোটের বাসিন্দারা”।মঙ্গলকোটের পুরনো থানা চত্বর লাগোয়া এলাকায় এসে আজও এই অনিন্দ্যসুন্দর সম্প্রীতির চিহ্ন আপনাদের চোখ টানবে। হাজার বছর ধরে আঠারো আউলিয়ার দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পুজো বা উৎসবে আউলিয়া বা আলিদের সক্রিয় উপিস্থিতি ছিল নজির বিহীন। রণদেব বাবু আরও জানিয়েছেন -” ধর্মপররায়ণ বাঙালি দানিশমন্দের সান্নিধ্যলাভে বহু হিন্দু রাজা উপকৃত হয়েছেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। ১৬৫৪-৫৫ খ্রিস্টাব্দে দানিশমন্দ বাদশাহ খুররমের আর্থিক সাহায্যে বারোদুয়ারি নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।এলাকার হিন্দু মুসলিম সকলেই বাঙালি দানিশমন্দের বানী শুনতে তাঁর কাছে আসতেন। সপ্তম শতকে পারস্য থেকে আঠারো জন আউলিয়া এসেছিলেন। মঙ্গলকোট সেসময় গৌড়দেশের অধীনে ছিল। সপ্তম খ্রিস্টাব্দে মঙ্গলকোট হিন্দু রাজার বিক্রম কেশরী শাসনে থাকলেও পারস্য থেকে আসা ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা নির্দ্বিধায় তাদের কাজ করে যেতে পেরেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। ধর্মীয় পরিমণ্ডলে দেশের মধ্যে আঠারো আউলিয়ার দেশ মঙ্গলকোট আজও সুরক্ষিত স্থান”।এহেন মঙ্গলকোটে থানার কালিপুজো সূচনা ঘটে পীরের মাজারে চাদর চাপিয়ে। মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ জানিয়েছেন -” এহেন মাহাত্ম্যপূর্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন অটুট থাকুক অনন্তকাল “।
শতাধিক বছরের রীতি মেনে পীরের মাজারে চাদর চাপিয়ে মঙ্গলকোট থানার কালীপুজোর সূচনা হলো….।

More from GeneralMore posts in General »
- মঙ্গলকোট পুলিশ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করলেন….।
- লিলুয়া হোমের আবাসিকাদের জন্য তিনদিনের মৃৎশিল্পের প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালা….।
- Bridging the Knowledge Gap: How Parents Can Stay Ahead of the Curve and Support Their Kid’s Learning….
- Minimally Invasive Robotic Surgery at Narayana Hospital RN Tagore Hospital, Mukundupur, Offers Life-Changing Results for Ureteric Stone Patient….
- H.E. Dr. C.V. Ananda Bose, Hon’ble Governor of West Bengal, Inaugurates the AIU East Zone Vice Chancellors Meet 2024-2025 with JIS University as the Host University….
- আদিবাসী শিশু কল্যাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগে এবার গোবরডাঙ্গা নকসা।
Be First to Comment