Press "Enter" to skip to content

লেনিন বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং অক্টোবর ও মহান নভেম্বর বিপ্লব-এ বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন…….।

Spread the love

স্মরণঃ ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন

বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। সাইবেরিয়ার ‘লেনা’ নদীর নামানুসারে তিনি নিজের নাম রাখেন ‘লেনিন’। তিনি বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং অক্টোবর ও মহান নভেম্বর বিপ্লব-এ বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন।

ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ১৮৭০ সালে ২২শে এপ্রিল রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

সিমবির্স্ক শহরটি রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ১,৫০০ মাইল দুরত্বে অবস্থিত ছিল। ভ্লাদিমির ইলিচ-এর পিতা ল্যা নিকোলয়েভিচ্ উলিয়ানভ ছিলেন একজন বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং গণতন্ত্রবাদ-এর কট্টর সমর্থক। তাঁর মা মারিয়া আলেক্সান্ড্রাভনা উলিয়ানভা ছিলেন এক প্রথিতযশা চিকিত্সকের বিদুষী কন্যা এবং একজন বিশিষ্ট শিক্ষিকা।

পিতামাতা-র বিচার বিবেচনা, লেনিন এবং তাঁর ভাইবোনদের মধ্যে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর দাদা আলেক্সান্ডারকে জার হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়। বিপ্লবী অ্যানা ইলিচনিনা ছিলেন লেনিন-এর দিদি এবং সহযোদ্ধা। ১৮৮৬ সালে ভ্লাদিমির ইলিচ-এর পিতৃ বিয়োগ হলে তাঁর মায়ের উপর সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পড়ে।

লেনিন ১৮৮৭ সালে সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু ছাত্রদের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিস্কার করে। ১৮৮৯ সালে তিনি সামারা যান এবং স্থানীয় মার্ক্সবাদীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে, সামারাতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ চলে আসেন এবং শীঘ্রই সেখানকার মার্ক্সবাদীদের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

এখানেই লেনিন ক্রুপস্কায়া-র সাথে পরিচিত হন। ক্রুপস্কায়া শ্রমিক এবং কৃষকদের মধ্যে সাম্যবাদ এবং বিপ্লবী আদর্শের প্রচারে ব্রতী ছিলেন। ১৮৯৫ সালে লেনিন কারারুদ্ধ হন এবং ১৮৯৭ এ তাঁকে পূর্ব সাইবেরিয়ার এক নির্জন স্থানে নির্বাসিত করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে ক্রুপস্কায়াকেও সেখানে নির্বাসিত করা হয়। পরবর্তীকালে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৯০০ সালে নির্বাসন থেকে মুক্তিলাভ করে একটি সংবাদপত্র (বিপ্লবী প্রচারপত্র) প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে লেনিন পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় শহর গুলিতে (মিউনিখ ১৯০০-০২, লন্ডন ১৯০২-০৩, জেনেভা ১৯০৩-০৫) সফর করেন।

১৯০২ সালে তিনি ‘আমাদের কি করতে হবে’ শীর্ষক একটি পুস্তক রচনা করেন, যাতে বলা হয়- ‘বিপ্লবের নেতৃত্ব এমন এক অনুশাসিত দলের হাতে থাকা উচিত, যাদের প্রধান কাজ হবে অধিকারের জন্য লড়াই করা’।

নির্বাসনে থাকাকালীন লেনিন ৩০টি পুস্তক রচনা করেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’— যা মার্ক্সবাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করে রাশিয়ার অর্থনীতি সম্বন্ধে বিচার বিশ্লেষন করেছিল। এই সময়েই তিনি রাশিয়ার শোষিত শ্রমিক এবং সর্বহারা গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি দল গঠনে উদ্যোগী হন। সকল কলকারখানা থেকে ব্যক্তিমালিকানা প্রত্যাহার করে সেগুলোতে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ছিলো এর মূল উদ্দেশ্য।

তিনি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব দেন, তা ‘লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ নামে পরিচিত। তাঁর ভাবধারাকে ‘লেনিনবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়— যা মার্কসবাদের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত।

ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ১৯২৪ সালের আজকের দিনে (২১ জানুয়ারি) মস্কোয় মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.