শান্তনু বসু : গায়ক ও সুরকার। ২১ জুলাই, ২০২০। সমস্ত বাজে বকা, ধানাইপানাই, ওমুক জোন তমুক জোন এর কায়দা কানুন বন্ধ করে অচিরেই টোটাল লকডাউন ডিক্লেয়ার না করলে এখন হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না এরপরে শ্মশানে আর কবর স্থানেও জায়গা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। ইতালি, স্পেন সহ বিদেশের বহু নিদর্শন তাই বলে!
সরকারি হাসপাতাল বা বাড়িতে ‘করোনা’ র চিকিৎসা করা না গেলে, বেসরকারি হাসপাতালের খপ্পরে গিয়ে পড়লে খরচ অন্তত নূন্যতম ৫ – ১০লাখ। তবে এ দরজায় ও দরজায় লাট খেতে খেতে বেঁচে থাকলে তবেই সে খরচ। আর তা না হলে ব্যয় বলতে – বাড়ির লোক তার আপনজন হারাবে, এটুকুই ব্যাস। কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারেরই তাতে কিছু যাবে আসবে না। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসকের দুজনেরই চিন্তা শুধুমাত্র বিনে পয়সায় রেশন বন্টন নিয়ে। তার বাইরেও যে বৃহৎ শ্রেণী আছে তারা কি কলা চুষবে ?
তবে এ কথা ঠিকই যে এ যাত্রায় কোনও রকমে টিকে গেলে ভোটের আগে তাদের কপালে অবশ্যই গাল ভরা অজস্র মিথ্যে প্রতিশ্রুতি জুটবে। সুতরাং এখন বাঁচতে হবেই। না হলে সেই মহামূল্যবান মিথ্যের ঝুড়িও জুটবে না আর এত সুন্দর জীবন যাপনের জন্য ফের “ভোট” ও দেওয়া যাবে না। যে সব শিল্পী বন্ধুদের সরকারি আহ্বানে মঞ্চ আলো করে বসে থাকতে দেখা যেত তাঁরা এখন কোথায় গেলেন ? অন্য সময়ে দিদির পাশে একটা ছবি তোলার জন্যে যাদের ব্যস্ততার অন্ত থাকে না আজ এই দুর্দিনে তাঁদের কারো চেহারা দেখছি না! সেই সব গুণীজন কে সরকারের কাছে আমাদের গোষ্ঠীর উপকারের বা সুরাহার স্বার্থে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হতে দেখবো তাও নৈব নৈব চ।পাছে বিরাগভাজন হয়ে পড়েন! আরে বিপদে তো আপনারাও আছেন! অনলাইন কনসার্ট এর সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক আর আপনাদের লব্ধ প্রতিষ্ঠাকে দশের স্বার্থে একটু কাজে লাগান! যাঁরা সরকারি সবরকম পুরস্কার পেয়ে গেছেন এখন তাঁরা হঠাৎ সরব হয়েছেন এমন সকাল দেখলে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়-এর “এ কোন সকাল রাতের চেয়ে অন্ধকার” গানের লাইন মনে পড়ে যাবে। আপনারা এখন চুপ থেকে পরের পুরস্কার নিশ্চিত করুন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন তার জন্য কিন্তু আগামীদিনে বেঁচে থাকতে হবে দাদা দিদিদের।সিনেমা আর টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্তরা যে বেশি সুযোগ সুবিধা পাবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ ভোটের প্রচারে তাদের গ্ল্যামার কে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু আমার বন্ধু গায়ক গায়িকারা আর যন্ত্র শিল্পীরা না থাকলে কি ‘মেলা’র পর ‘মেলা’ বা উৎসবের পরে উৎসব জমজমাট হতো? আপাতত মেলা বা উৎসব বন্ধ থাকলেও ‘ভোট’ কিন্তু আসন্ন। অগত্যা ……।
অপদার্থতার দায়ভার মানতে না চাওয়া কোনও সরকারেরই হিম্মত নেই যে দেশবাসীকে ‘কাঁসর ঘন্টা বাজাতে’ না বলে বা ‘কেন্দ্র থেকে কি পেলাম না’ তার ফিরিস্তি না দিয়ে বলবে – ‘এই সময়ে আপনারা শুধু ঘরে থাকুন। আপনারা আমার দেশের বা রাজ্যের নাগরিক। আমার দায়িত্ব আপনাদের বাঁচিয়ে রাখা। এইসব কিছুই নেই। সকাল থেকে রাত অবধি শুধু অসভ্য রাজনীতির কোন্দল। আমরা আকাঠের দল তাই দেখে জীবনের এক একটা দিন পার করে দিচ্ছি। রাজ্যের বিভিন্ন সেক্টর এর হাজার হাজার সরোজগেরে (প্রফেশনাল) মানুষ বিগত চার মাস যাবত কোনও রোজগারের মুখ না দেখে আজ হ্যান্ড টু মাউথ সিচুয়েশন এ দাঁড়িয়ে। কেউ কেউ সব ভুলে পেটের টানে অন্য পেশা গ্রহণ করে রাস্তায়ও নেমে পড়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে গলাগলি আর ‘লন্ডন’ বানানোর স্বপ্নের যদি এই শেষ দশা হয় তাহলে দেশবাসী কি ‘ভোট’ দিয়ে অপরাধ করেছেন? এর উত্তর কে দেবেন? আম পাবলিকের জানা নেই। সঙ্গীত জগতের হাজার হাজার মানুষ (নানা শ্রেণীর) আমরা বিগত চারমাস ধরে প্রায় রোজগারহীন থাকার পরেও কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকারের কাছ থেকে কোনও আশাব্যঞ্জক কিছুই শুনতে পাই নি। তারপরে এই লেখা। উপরের সমস্ত বক্তব্য একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তার ফলশ্রুতি। এর মধ্যে কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের গন্ধ পান তাহলে তার দায়িত্ব অবশ্যই সেই ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর।
Be First to Comment