জন্মদিনে স্মরণঃ রিচার্ড অ্যাটেনবরো
বাবলু ভট্টাচার্য : ১৯৮২ সালের ৩০ নভেম্বর গোটা ভারতে মুক্তি পায় ‘গান্ধী’। ব্রিটেনে ৩ ডিসেম্বর ও আমেরিকায় ৬ ডিসেম্বর। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক সেরা অভিনেতা-সহ মোট আটটি অস্কার জিতে নিয়েছিল মহাত্মার জীবনাশ্রিত ছবি ‘গান্ধী’। মনোনয়ন পেয়েছিল ১১টি বিভাগে। জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়ে যাওয়া এই ছবির চিত্রনাট্য পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। কার্যত ‘গান্ধী’ থেকেই সারা বিশ্বের কাছে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর স্বীকৃতি জোটে সেরা পরিচালকের। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি পয়েণ্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নাথুরাম গডসের গুলি এসে লাগল অহিংসার প্রচারক তথা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর বুকে। ‘হে রাম’ উচ্চারণে ভূপতিত মহাত্মা। রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’ ছবির সূত্রপাত ঠিক এখান থেকেই। চলচ্চিত্র যার কাছে কেবলমাত্র গ্রাসাচ্ছাদনের উপায় ছিল না, ছিল ধর্ম, ছিল নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার একমাত্র অবলম্বন, সেই মানুষটির সামনে বিশ্ব নতজানু হয়েছে পুরস্কারের ঝুলি নিয়ে। ১৯৮৩ সালে রিচার্ড অ্যাটেনবরোকে ভারত সম্মানিত করে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান দিয়ে।
১৯৬২ সালে গান্ধীর জীবনী পড়ার পর থেকেই অদম্য কৌতূহল গড়ে ওঠে মানুষটিকে ঘিরে। এরপর তো কেবল অনুসন্ধান। সেই পরশপাথরটিকে খুঁজে ফেরা। দীর্ঘ ২০ বছরের অনলস সাধনার ফল অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’। ‘দ্য টাইমস অফ লন্ডন’ ১৯৯৩ সালে ছবিটি সম্পর্কে বলেছিল, ‘গান্ধী’ ছবির আগে আর কোনও ব্রিটিশ ফিল্ম এতোগুলি অস্কার ও আন্তর্জাতিক বাজারে সাফল্য পায়নি। বাকি ছবিগুলি! ‘ইয়ং উইনস্টন’, ‘আ ব্রিজ টু ফার’, ‘ম্যাজিক’, ‘আ কোরাস লাইন’, ‘ক্রাই ফ্রিডম’, ‘চ্যাপলিন’, ‘শ্যাডোল্যান্ডস’ – কালের অতলে যদি তলিয়েও যায়, তলিয়ে যাবে না ‘গান্ধী’। তার কট্টর সমালোচকরা অন্তত তাই বলেছেন। আর বেন কিংসলে! তাঁর কথায়— ‘তোমার কথা খুব মনে পড়বে। ছবির মুখ্য চরিত্রে নির্বাচনের সময় আমার উপর যেভাবে আস্থা রেখেছিলেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। এটা আমার কাছে একইসঙ্গে আনন্দ ও গর্বের।’
ডেভিড ক্যামেরনের ট্যুইট— ‘ব্রাইটন রক’ ছবিতে অ্যাটেনবরোর অভিনয় এককথায় দুর্দান্ত। হতবাক হয়ে গিয়েছি ‘গান্ধী’ ছবিতে তাঁর পরিচালনার মুন্সিয়ানায়। মহান পরিচালক। ভূমিপুত্রকে ১৯৭৬ সালে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে ব্রিটেন। ১৯৯৩ সালে রিচার্ড অ্যাটেনবরো পান ‘লর্ড’ সম্মান। নিজেকে কোনদিন ‘পাইরোটেকনিক্যাল’ পরিচালক বলেননি অ্যাটেনবরো। তিনি কৌশলী ছিলেন না। সহজে কার্যসিদ্ধি, না তাঁর দ্বারা এটা কখনও সম্ভব হয়নি। অভিনয় যদি দর্শকের মন ছুঁয়ে না যায়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করতেন তিনি।
‘জুরাসিক পার্ক’, ‘দ্য গ্রেট এসকেপ’, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’- ছবিগুলোতে তিনি অভিনয় করেছেন।
২৫ আগস্ট ২০১৪ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রিচার্ড অ্যাটেনবরো ১৯২৩ সালের আজকের দিনে (২৯ আগস্ট) কেমব্রিজে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment