জন্মদিনে স্মরণঃ রাহুল সাংকৃত্যায়ন
বাবলু ভট্টাচার্য : পর্যটক, দর্শনের সুপণ্ডিত ও মার্ক্সীয় মতবাদে দীক্ষিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের প্রকৃত নাম কেদারনাথ পাণ্ডে। বৌদ্ধ ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে তিনি নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন (গৌতম বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে)। সাংকৃত্যায়ন অর্থ আত্তীকরণ করে যে।
তিনি জীবনের ৪৫ বছর ব্যয় করেছেন ভ্রমণ করে। কাশীর পণ্ডিতবর্গ তাঁকে ‘মহাপণ্ডিত’ বলে আখ্যায়িত করেন।
রাহুলের বাবা গোবর্ধন পাণ্ডে ছিলেন একজন কৃষক। শৈশবেই তাঁর মায়ের মৃত্যু ঘটে। গ্রামের পাঠশালায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন রাহুল। এটি ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।
উর্দু ও সংস্কৃতের ওপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করলেও তিনি হিন্দি, বাংলা, পালি, আরবি, ফার্সি, ইংরেজি, তিব্বতি, রুশ ইত্যাদি ভাষা শিখেছিলেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল ভোজপুরি, কিন্তু লেখালেখি করেছেন সংস্কৃত ভাষায়। তিনি ৩৬টি ভাষা জানতেন।
১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড রাহুলকে তীব্র ব্রিটিশবিরোধী করে তোলে। তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কর্মীতে পরিণত হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিন বছর কারাভোগের সময় তিনি কোরআন শরিফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহলি ভাষা শিখে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ, দর্শন পড়তে শুরু করেন।
রাহুলের অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শিক্ষকতার অনুরোধ করলে রাহুল তা গ্রহণ করেন। এরপর শ্রীলঙ্কার বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়িয়েছেন।
৯ বছর বয়সে রাহুল পৃথিবী দেখার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ২০ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন দিনলিপি রাখতেন সংস্কৃত ভাষায়। ইতিহাসবিশারদ রাহুল ভ্রমণ, সমাজ বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বই লিখেছেন।
এ ছাড়া জীবনী, আত্মজীবনী, সংকলন, অভিধান সম্পাদনা করেছেন। ‘ভলগা থেকে গঙ্গা’ ছাড়াও ‘দর্শন-দিকদর্শন’, ‘বুড্ডিজম’, ‘দুনিয়া কো বদলাও’, ‘ভবঘুরে শাস্ত্র’সহ শ’খানেক বই লিখেছেন তিনি। তাঁকে ভারতীয় ভ্রমণকাহিনীর জনক বলা হয়।
রাহুল সাংকৃত্যায়ন ১৯৫৮ সালে পেয়েছেন সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার। ১৯৬৩ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন।
১৯৬৩ সালের ১৪এপ্রিল রাহুল দার্জিলিং এ মৃত্যুবরণ করেন।
রাহুল সাংকৃত্যায়ন ১৮৯৩ সালের আজকের দিনে (৯ এপ্রিল) ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment