” মহানবমী “!
ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১৪ অক্টোবর ২০২১।
রাবণ বধ করে মহাসম্পদ সীতাকে রামচন্দ্র পুনরায় লাভ করায় এদিনটি ” মহানবমী” ৷ দেবী পক্ষের এই দিনে মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পুজো ৷ যদিও সন্ধিপুজোর শেষক্ষণ থেকেই
নবমী তিথি পড়ে গেছে ৷ নবমীতে মূলতঃ হয় হোম
ও যজ্ঞ ৷ ২৮টি বা ১০৮ টি নিখুঁত বেলপাতা লাগে ৷
যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বালি বেলকাঠ বা আমকাঠ নিয়ম মত সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে
ঘি দিয়ে বেলপাতাগুলি চুবিয়ে আহুতি ( নিবেদন) দেওয়া হয় ৷ ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে দেবীর পুজোয় ১০৮ টি পদ্ম ব্যবহৃত হয় ৷ এদিন ৭০০ শ্লোক বিশিষ্ট শ্রীশ্রীচন্ডী গ্রন্থের ত্রয়োদশ অধ্যায় পড়া উচিত ৷ তারপর এই পবিত্র বই থেকে রহস্য
ত্রয়ও অপরাধক্ষমাস্তোত্রম্ পড়া যেতে পারে ৷ মনে
করা হয় মহানবমী তিথিতে দেবীকে মহাস্নান করালে ধন , যশ , সন্তান সহ একশো যজ্ঞের ফল
লাভ হয় ৷ আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে আজ নবমী পর্যন্ত যে ” নবরাত্রি” অনুষ্ঠান ৷ তাতে দেবীর
ন’টি রূপের পুজো হয় ৷ দেবীর ন’টি রূপের নাম
দিয়েছিলেন ব্রহ্মা ৷ আজ দেবী হলেন “সিদ্ধিদাত্রী” ৷সিংহবাহিনী সিদ্ধিদাত্রীর চার হাতে থাকে আশীর্বাদী মুদ্রা ৷ ডান দিকের উপর হাতে গদা , নিচ হাতে চক্র ৷ বাঁ দিকের উপর হাতে পদ্ম আর নিচ হাতে শাঁখ ৷ মার্কন্ডেয় পুরাণে তাঁর আট হাত ৷ আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ১৮ হাতের দেবী সিদ্ধিদাত্রী ৷পুরণ মতে মহাদেব স্বয়ং এদিন ঐরূপে দেবীর আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন ৷ তাই , তিনি সর্ব সিদ্ধিদাত্রী ৷ নবরাত্রির এই দিন দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারীর
পুজোয় উচ্চমার্গের যোগসাধনা ৷ কারন , দুর্গার আজ বিশ্বরূপ দেখার যোগরাত্রি ৷ তিনি বিশ্বমাতা
আদিবিদ্যাস্বরূপিনী ৷ সন্ধিপূজার শেষ ২৪ মিনিট মানে নবমী তিথি পরার পর কিংবা মহানবমীর দিন সাধারণত বলিদান হয় ৷ এখন পশু বলির বদলে চাল কুমড়া , আঁখ , সিঁদুর লাগানো মাসকলাই ইত্যাদি বলিই বেশী হয় ৷কালিকা পুরাণ মতে রাবণ বধ হয় মহানবমী তিথিতে অর্থাৎ সন্ধিপূজার শেষে ৷পরদিন বিজয়া দশমীতে অশুভ শক্তির প্রতীক রাবণ বধের কারণে হয় বিজয়োৎসব ৷ বলতে গেলে এদিনই আমাদের মাকে প্রাণভরে দেখার শেষ দিন ৷ আনন্দের মধ্যে পড়ে বিষাদের ছায়া ৷হোমাগ্নিতে চলে দেবী দুর্গার স্তুতি ৷ মহা শব্দটি অষ্টমী ও নবমীর আগে বসে ৷ ষষ্ঠী বা সপ্তমীকে মহা ষষ্ঠী বা মহাসপ্তমী বলা ঠিক নয় ৷ আমাদের দুর্গাপুজোয় আজ রাতের আর্কষণ “আরতি” ! যা আনন্দের মধ্যে এনে দেয় বিষাদের সুর ৷আমাদের সঙ্গে দুর্গার মা -মেয়ের সম্বন্ধ ৷ ঘরের মেয়ে শ্বশুর বাড়ী ফিরে গেলে যেমন বাড়ীর সবাই বিষাদ গ্রস্ত হই তেমন হয় আমাদের হৃদয় ৷ গিরিজায়া মেনকার অপেক্ষোক্তি তো শাশ্বত সনাতনী মায়ের ৷খ্রিস্টান হলেও জন্মগত সংস্কার যায় নি মধু কবির ৷ নবমী নিশিতে লিখেছিলেন ,” যেয়ো না রজনী , আজি লয়ে তারাদলে , / গেলে তুমি , দয়াময়ী , এ পরাণ যাবে ৷/ উদিলে নির্দয় রবি উদয় -অচলে , / নয়নের মণি মোর নয়ন হারাবে “৷ সাধক কবি কমলাকান্ত লিখেছেন ,” “ওরে নবমী নিশি না হইও রে অবসান ৷/ শুনেছি দারুণ তুমি , না রাখ সতের মান “৷৷ অন্তর থেকে গেয়ে উঠি –
” নিশি যেন আর না পোহায় , তোকে পাবার ইচ্ছা মাগো কভু না ফুরায় ৷ রাত পোহালেই জানি আবার
হবে দশমীর ভোর , আবার তোকে পাবো মোরা একটি বছর পর ” !এই মনোকামনা ৷সমগ্র পূজা পদ্ধতিতে আমরা মায়ের কাছে কলুষমুক্ত জীবন প্রার্থনা করি ৷ জয় মা ৷
Be First to Comment