Press "Enter" to skip to content

রবীন্দ্রসঙ্গীতে পারদর্শী বুদ্ধদেব গুহ টপ্পা গানেও পটু ছিলেন। বহুসময় অনেকেই তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ বু দ্ধ দে ব গু হ

বাবলু ভট্টাচার্য : খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছেন জঙ্গলের জীবন, মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের। তাই সেই জঙ্গলপ্রেম, সেই অভিজ্ঞতাই বারবার উঠে এসেছে তাঁর কলমে। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক চরিত্র।

তাঁর কাহিনিতে নায়ক ঘন জঙ্গলের ঘ্রাণকে ভালবাসে। তাঁর উপন্যাসে এক প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা ‘হলুদ বসন্ত’। কেউ তাঁকে চেনেন শিকারের কাহিনিকার হিসেবে। কেউ আবার চেনেন অরণ্যপ্রেমী এক লেখক হিসেবে। তিনি বুদ্ধদেব গুহ।

বাংলাদেশের রংপুরে জন্মেছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। সেখানেই বেড়ে ওঠা। প্রথমে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, তারপরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা। একদিকে পড়াশোনা আর অন্যদিকে গান।

রবীন্দ্রসঙ্গীতে পারদর্শী বুদ্ধদেব গুহ টপ্পা গানেও পটু ছিলেন। বহুসময় অনেকেই তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গানের সূত্রেই ভালবাসা- বিয়েও করেন গায়িকা ঋতু গুহকে। গান যেমন তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে ছিল, তেমনই পেশাগত জীবনেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পাশ করে বাবার চার্টার্ড ফার্মে যোগ দিয়েছিলেন।

বুদ্ধদেবকে বলা চলে আরণ্যক এক ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাস যেন পরিপূর্ণই হয়ে ওঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর গল্পের প্লটজুড়ে ভেসে উঠছে নাগরিক-ক্লেশমুক্ত এক অরণ্যময় প্রকৃতি! পালামৌর বুনো হাতি, পৌরুষ মাখানো বাঘিনী অথবা পাকদন্ডীর কুয়াশার রাস্তা, ম্যাকলাস্কিগঞ্জের সেই সকালের আগমন- এই তো বুদ্ধদেবের উপন্যাস।

চিঠির প্রতিও বুদ্ধদেবের একটা গভীর আকর্ষণ দেখা যায়। প্রায় উপন্যাসেই এ ওকে চিঠি পাঠায়, সেই চিঠি পুরো সময় জুড়ে একটা সুরেলা গান হয়ে বাজতে থাকে। বুদ্ধদেব খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারেন, তাঁর যেকোনো উপন্যাস পড়লেই তা বোঝা যায়!

‘সবিনয় নিবেদন’ উপন্যাসটি তো পুরোটাই চিঠিপোন্যাস! ঋতি ও রাজর্ষি একজন আরেকজনকে না দেখে না শুনে চিঠির এক অদ্ভুত ব্যাকরণে বুনতে থাকে তাদের সম্পর্ককাব্য। অদেখাকেও যে চিঠি লিখে প্রিয় ব্যক্তিতে রূপ দেওয়া যায়, তার সাথে খুনসুটি করা যায়, করা যায় অভিমানী অভিযোগ, চিঠি লিখে যে কাউকে ভালোবাসাও যায়- তার এক অনবদ্য প্রমাণ ‘সবিনয় নিবেদন’।

তাঁর ছোট গল্প ও উপন্যাসে পাঠক পায় এক স্বপ্নালু বিমূর্ততা আর রোমান্টিক আবেদন। গল্পের চরিত্রগুলোর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে পাঠক তাই খুব সহজেই যখন-তখন ডুব দিতে পারে বুদ্ধদেবের লেখায়।

ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকাসহ বহু জায়গায় ঘুরেছেন এই মানুষটি। বিভিন্ন জায়গা, তাতে বাস করা মানুষের ভিন্ন জীবনের বিপরীতমুখী মাত্রা- সবকিছুর স্বাদই গ্রহণ করেছেন বুদ্ধদেব। তার এই সম্পর্কগুলোকে তার গল্প-উপন্যাসের মধ্যে দেখতে পাই।

বুদ্ধদেব ‘ঋজুদা’ বলে একটি চরিত্রের স্রষ্টা। এই ঋজুদা যখন-তখন রুদ্রকে সাথে নিয়ে চলে যান জঙ্গলে! বুদ্ধদেবের ভ্রমণগুলো ঋজুদা ও রুদ্রের ছলেই পাঠক গোগ্রাসে গিলতে থাকে। ঋজুদা নিয়ে একটি বই হলো ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’।

১৯৭৬ সালে আনন্দ পুরস্কার ছাড়াও বুদ্ধদেব পেয়েছেন শিরোমণি ও শরৎ পুরস্কার।

২৯ আগস্ট ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে বুদ্ধদেব গুহ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

বুদ্ধদেব গুহ ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে (২৯ জুন) বাংলাদেশের রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.