Press "Enter" to skip to content

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়…..।

Spread the love

আজকের দিনে মুক্তি পেয়েছিল “চারুলতা” ছবিটি

বাবলু ভট্টাচার্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি মূল গল্প থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন। এই কাহিনিচিত্রটিকে অনেকেই মনে করেন সত্যজিত রায়ের সবচেয়ে ত্রুটিহীন ছবিগুলোর একটি।

অনেকের দৃষ্টিতে, ছবিটিতে ‘চারুলতা’ নামের এক নিঃসঙ্গ গৃহবধুর বেদনা এবং পরবর্তীতে তার দেওরের প্রতি ভালোবাসার অন্তর্দহন সত্যজিত যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা ছাড়িয়ে গেছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সুনিপুণ কাব্যময়তাকেও।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে The Lonely Wife বলে পরিচিত এ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে দাম্পত্য সম্পর্ক ও প্রেমকে উপজীব্য করে। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটির কাহিনি ১৮৭৯ সালের। উচ্চবিত্ত এক বাঙালি পরিবারকে কেন্দ্র করে এর কাহিনি রচিত হয়েছে।

পরিবারের কর্তা ভূপতি বিশুদ্ধ রাজনৈতিক চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার বাড়িতেই “Sentinnel” নামে পত্রিকাটির কাজ শুরু হয়। পত্রিকার কাজে দিনরাত মগ্ন থাকায় সদ্য যৌবনে পদার্পণকারী স্ত্রীর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার সময় পাননা।

স্ত্রী চারুলতার সময় কাটে একা একা। অবসরে চারু সাহিত্য চর্চা করে সময় কাটায়। স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা স্বাভাবিকভাবেই ভূপতির চোখে পড়ে। তাই চারুর ভাই উমাপদকে চিঠি লিখে সস্ত্রীক চলে আসার জন্য বলেন। উমাপদকে নিজের পত্রিকার ম্যানেজার নিযুক্ত করেন। উমাপদর স্ত্রী মন্দাকিনীর সাথে চারুর চরিত্রের আকাশ-পাতাল ফারাক। তাই চারুর নিঃসঙ্গতা খুব কমই প্রশমিত হয়। এমন সময় আগমন ঘটে ভূপতির পিসতুতো ভাই অমলের।

অমলের সাথে চারুর সম্পর্ক আগে থেকেই বেশ ঘনিষ্ঠ। তবে প্রথম দিকে তাদের সম্পর্কে বৌঠান-ঠাকুরপোর স্বাভাবিকতা ছাড়া অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। ভূপতি অমলকে নিজ স্ত্রীর মধ্যে লুক্কায়িত সাহিত্যিক প্রতিভা বের করে আনার দায়িত্ব দেয়। অবশ্য সাহিত্য চর্চা ছাড়া অন্য কিছুতে অমলের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি।

অমল চারুর সাথে সাহিত্য চর্চা শুরু করে তার মধ্যের লুক্কায়িত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটানোর জন্য। এর সাথে শুরু হয় অমল, চারুলতা ও মন্দাকিনীর পারষ্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন। চারু, অমলকে দেখাতে চেয়েছে মন্দার চেয়ে সে কতোটা গুণবতী। অমলের লেখা পত্রিকায় ছাপা হবার পর সেও সেই পত্রিকায় লেখা পাঠায়। চারুর লেখাও ছাপা হয় এবং দেখা যায় সাহিত্যিক প্রতিভা অমলের চেয়ে চারুরই বেশি।

ইতিমধ্যে অমলের বিয়ের প্রস্তাব আসে বর্ধমান থেকে। বিয়ের পর শ্বশুর জামাইকে বিলেত পাঠাবেন। এক মাস সময় চেয়ে নেয় অমল। সাথে সাথে রাজি না হওয়ায় চারু সাময়িকভাবে স্বস্তি বোধ করে। চারুর আচরণ দেখে অমল অচিরেই বুঝতে পারে দাদার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে তাকে সরে পড়তে হবে।

অমল দাদার উদ্দেশ্য একটা ছোট চিঠি রেখে পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে। পত্রিকা ছেড়ে স্ত্রীর দিকে মনোযোগী হয় ভূপতি। কিন্তু তাদের মিল হওয়াটা তখন অসম্ভবের পর্যায়ে, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বিচ্ছেদও অস্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত তাদের হাত মেলেনি। তাদের মিলন না বিচ্ছেদ হবে তা মুখ্য নয়। সেই দিনটি বা সে সময়টিতে তাদের নীড় যে ভেঙে গেছে চলচ্চিত্রে তা-ই মুখ্যভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে।

‘চারুলতা’ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং সিনেমাটি ১৯৬৪ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালে পুরস্কার পেয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আরও নানা পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে।

চিত্রনাট্য, সঙ্গীত ও পরিচালনাঃ সত্যজিৎ রায়/ মূল গল্পঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/ চিত্রগ্রহণঃ সুব্রত মিত্র/ দৈর্ঘ্যঃ ১১৭ মিনিট/ সাদা-কালো/ ভাষাঃ বাংলা/ দেশঃ ভারত/ প্রযোজনাঃ আরডিবি প্রোডাকশন্স/ অভিনয়েঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, শ্যামল ঘোষাল।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.