মৃদুলা ঘোষ : কলকাতা, ১৬ জুলাই, ২০২০।
করোনা অতিমারি র আবহ থেকে যদি একটু পিছনে তাকাই, তাহলে দেখব, কদিন আগেই ডেঙ্গু জ্বর এর মোকাবেলা করতে অনুচক্রিকা চিকিৎসা পরিবেশে, প্রথম সারি তে স্থান পেয়েছিল। কিন্তু, প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা রক্তের এমন এক উপাদান কণিকা যা ডেঙ্গু ছাড়া ও লিউকেমিয়া, হিমোলাইটিক আ্যনিমিয়া, কেমোথেরাপি ড্রাগস, অতিরিক্ত মদ্যপান, ভাইরাল বা ব্যকটেরিয়াল ইনফেকশন, এবং অটো ইমিউন অসুখের কারনে ও প্রয়োজন হয়। মানব শরীরে রক্ত লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট এর সমন্বয়ে গঠিত। ক্ষুদ্র, বর্নহীন, নিউক্লিয়াস বিহীন এই প্লেটলেটস, অনুচক্রিকা, বা থ্রম্বোসাইট নামক রক্তকণিকা গুলির প্রধান রক্ত তঞ্চন অর্থাৎ ক্ষতস্থান থেকে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। এই কণিকার গড় আয়ু ৫-৯ দিন এবং দেহের অস্থিমজ্জায় তৈরি হয়ে প্লীহা ও অন্যান্য রেটিকিউলো এন্ডোথেলিয়াল কোষে ধ্বংস হয়। প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে প্লেটলেট এর স্বাভাবিক সংখ্যা ২,৫০,০০০-৪, ৫০,০০০। কিন্তু, বিভিন্ন অসুখের কারনে অনুচক্রিকা যখন প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে কমে ১,৫০,০০০বা তার নিচে নেমে যায় তখন সেই অবস্থাকে বলে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল এমারজেন্সি যা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। রক্তে প্লেটলেট ভীষণ ভাবে কমে গেলে শরীরে রক্ত বা অনুচক্রিকা দিয়ে ঘাটতি দ্রুত পূরন করে রোগীকে স্থিতিশীল করলে ও শরীরের ভেতর থেকে খাদ্য ও পুষ্টি র মাধ্যমে তার উৎপাদনের ব্যবস্থা না করলে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে।
তাই সেইসব জীবনদায়ী খাবার খাওয়ার দিকে নজর দেওয়া জরুরি যেখানে অনুচক্রিকা বেড়ে যাবে। যেমন: আনারদানা যার রস এক কাপ করে দুসপ্তাহ খেতে হবে। খেজুর কিসমিস: প্রতি দিন অন্তত ৫-৬টা খেজুর এবং ১০-১৫টা কিসমিস ভিজিয়ে রেখে খেতে পারলে অনুচক্রিকা বাড়তে থাকে। দুধ, দুগ্ধজাত খাবারের ক্যলশিয়াম এবং প্রোটিন রক্তের ফাইব্রিনোজেন তৈরি তে সাহায্য করে এবং প্লেটলেট কাউন্ট বাড়ায়। মাছ, ডিম, চিকেন, ইত্যাদি লিন প্রোটিন, লো ফ্যাট প্রোটিন, জিংক ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া র ক্ষেত্রে উপকারী।
এছাড়াও ফোলিক আ্যন্ড সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ মসুর ডাল, মটরশুঁটি, বিনস, পালংশাক, কমলালেবু, বাদাম, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বিভিন্ন লেবু, আমলকি, গাঢ় সবুজ শাক রক্তে অনুচক্রিকা বৃদ্ধি তে দ্রুত সাহায্য করে। ভিটামিন এ যুক্ত যাবতীয় সবজি, ভিটামিন কে যুক্ত বিভিন্ন শাক, ডিম, মাংসের মেটে ইত্যাদি যেমন অনুচক্রিকা র সংখ্যা বাড়ায় তেমন অকাল ধ্বংসের হার কমিয়ে অনুচক্রিকা র সংখ্যা কে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, তিল তেল, কুমড়োর বীজ ইত্যাদি খাবার থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া র সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। প্লেটলেটস এর উৎপাদন বাড়াতে ও রক্ত সঞ্চালন ভালো করতে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রসুন প্রতিদিন খাওয়া দরকার একজন কম সংখ্যক অনুচক্রিকা সম্পন্ন ব্যাক্তির।
এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি র গবেষকদের মতে পেঁপে ও তার পাতা রক্তে প্লেটলেটস এর পরিমাণ বাড়ানোর সহায়ক। তাই থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া র রোগী র দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পাকা পেঁপে, পেঁপে র সরবত, পেঁপে পাতা রস, থাকবে অবশ্যই। এইভাবেই প্লেটলেটস বা অনুচক্রিকা সংখ্যা রক্তে বাড়িয়ে নেবার জন্য নিয়মিত ডায়েট ও মেডিকেশন এর পাশাপাশি প্রচুর জল পান করুন। শরীর কে সজল ও সচল রেখে অনুচক্রিকা র উপস্থিতি জোরালো করুন।
Be First to Comment