Press "Enter" to skip to content

“যেতে নাহি দিব” বাণিজ্যিকতার ঘেরাটোপে এক অভিমুন্যু !! ……..

Spread the love

প্রবীর রায় : বিশিষ্ট প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১। উত্তমকুমারকে নিয়ে দুটি ছবি তৈরি হচ্ছে দুটি প্রোডাকশন হাউস থেকে ! সম্প্রতি  নজরে এলো প্রথম সংস্থা থেকে মহানায়ক -পৌত্র গৌরব চ্যাটার্জির কাছে এবং দ্বিতীয় সংস্থা ও পরিচালকের কাছে শর্তভঙ্গের দায়ে আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মহানায়কের পরিবারের দুঃসহ স্পর্ধা দেখে আমি স্তম্ভিত। আজ ৪১ বছর হলো, উত্তমকুমার আমাদের মধ্যে নেই। এতোগুলো বছর ধরে তাঁর পরিবার তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে কি করলেন? এতোগুলো বছর ধরে উত্তমকুমার এখনও ওই পরিবারের source of income…!

আমার অতি তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। বাংলা চলচ্চিত্রের শতবর্ষের প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালে আমি একটি ছবির কাজ শুরু করি। উত্তমকুমারের জীবনালেখ্য “যেতে নাহি দিব”। পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি.. উত্তমকুমারের সঙ্গে ১৯৭২ থেকে ৮০, এই কয়েক বছরের ব্যক্তিগত পরিচয়, তাঁকে কাছ থেকে দেখা, তাঁর প্রকাশিত আত্মজীবনী, বুড়ো মামুর (তরুণ কুমার) লেখা বই… এ সবই ছিলো আমার ছবির উৎস।

আমি এবং আমার চিত্রনাট্যকার অশোক রায় ভবানীপুরের বাড়িতে গিয়েছিলাম প্রাথমিক আলোচনার জন্য। প্রথম দিনেই ওঁরা অর্থের দাবী করেন। আমি বলেছিলাম,” অবশ্যই টাকা দেব, যদি আপনারা মহানায়কের জন্য কোনো আর্কাইভ তৈরি করতে উদ্যোগী হন।” প্রাথমিক কথাবার্তার পর আমি Agreement paper তৈরি করার ব্যবস্থা নিতে শুরু করি। ওনারা আরো একটা শর্ত দিয়েছিলেন যে সুপ্রিয়া দেবীকে এই ছবিতে দেখানো যাবে না ! আমি রাজি হইনি কারণ সুপ্রিয়া দেবী ছাড়া উত্তমকুমারের জীবন অসম্পূর্ণ ! আর তা ছাড়া যে মানুষটা নিজের জীবিতকালে শেষ দিন পৰ্যন্ত সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে থেকেছেন, সম্মান দিয়েছেন, তাঁকে বাদ দিয়ে উত্তমকুমারের উপর ছবি করার অধিকার আমাদের কারোর নেই বলে আমার বিশ্বাস ! প্রসঙ্গত জানাই – আমি গৌরব চ্যাটার্জীকেও এই ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিক সেই সময় কোনো চ্যানেলের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট থাকার দরুন, উনি করতে পারেননি !

উত্তমকুমারের স্মৃতি নিয়ে নাকি ওনারা বেঁচে আছেন !… সেই উত্তমকুমারকে অমন কুৎসিত ভাবে টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থাপিত করতে পরিবারের কারো কোনো দ্বিধা দ্বন্দ হয় নি।

এরপর অনেক যত্ন করে, তিল তিল অর্থের যোগান দিয়ে ছবিটা শেষ করি। Censor Board ছবিটা দেখে Uncut “U” Certificate দেয়। ২০১৯ এর ২২শে নভেম্বরে ছবিটি রিলিজ করার প্রস্তুতি শেষ হবার পরেই … এতোদিন যাঁরা বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না, কোনো খোঁজখবর, যোগাযোগ রাখেন নি, তাঁরা হঠাৎ আদালত থেকে ছবি রিলিজের উপর Injunction জারি করেন। ছবিটার একটাও দৃশ্য কেউ দেখে নি, একটা লাইন চিত্রনাট্যও কেউ শোনেন নি কিন্তু অভিযোগ হলো, ৬০ / ৭০ লাখ খরচা করে আমি নাকি ছবিতে মহানায়ককে অবমাননা করেছি। ধিক্কার !!!!!

যে মানুষটার সঙ্গে ৮ বছর ধরে এতো কাছ থেকে মিশলাম, তাঁকে আমি অপমান করবো আর যাঁরা ওকে চোখেই দেখেনি, তাঁদের নাকি দরদ উঠলে উঠছে শুধুমাত্র পরিবারের মানুষ বলে ! আমি ওনাদের একজন কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম “কিছু মনে করবেন না , আপনি কোন বছরে জন্মেছেন ? উনি উত্তর দিয়েছিলেন ১৯৬৫ তে !” আমি বললাম উত্তমকুমার এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন ১৯৬৩ সালে, আপনি উত্তমকুমার সম্বন্ধে কি জানেন যে সব জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছেন??
উত্তমকুমারের ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র … এ সব আম বাঙালির বড়ো গর্বের জায়গা। এ শহরে উত্তমকুমারকে নিয়ে একটা আর্কাইভ করা যেতো না? সে সব না করে শুধু বড়ো বড়ো কথা “ আমরা অতো টাকা নিই নি …” আহা, কি মহৎ আত্মত্যাগ !!!

তার উপর মহামান্য আদালত একটা তিন মাসের Injunction কে টেনে নিয়ে গেলেন প্রায় ২ বছরে ! আমরা কিছুই জানি না কি চলছে ভেতরে ভেতরে ! শুধু এই টুকু জানি আমরা বাস করি এক অদ্ভুত দ্যাশে !

এখন আবার দুটো নির্মিয়মান ছবি ওনাদের সামনে উপার্জনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। সত্যিই!! উত্তমকুমার, তরণকুমারের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের বাড়ির মানুষের এই চেহারা দেখব বা দেখতে হবে সত্যি কথা বলতে কি – কখনো ভাবিনি।

 

More from CinemaMore posts in Cinema »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.