Press "Enter" to skip to content

যতো জানছি, ততোই বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি জানার ইচ্ছেটা। ম্যাজিকের ক্ষেত্রেও তাই। কতো নতুন নতুন কৌশল, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়ে চলেছে । এর কোনও শেষ নেই। হবেও না। সত্যি সত্যিই, তাই কি?……

Spread the love

/////////[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]\\\\\\\{{{{{{{{{{{{{{{{{{{{ পর্ব- ০৭৩ }}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}}
==[মনোবিজ্ঞানী,মায়াবী পি সি সরকার জুনিয়র]=
***(Dr. প্রদীপ চন্দ্র সরকার, M. Sc., Ph. D.) ****
[কলকাতা রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটির M. A. 4th semester course এর পাঠ্যক্রমের অংশ]

কলকাতা : ২৬ জুন, ২০২১। অজানাকে জানবার , আর তারপর তাকে জয় করবার ইচ্ছের পরিমাণটা মানুষের মনে অফুরন্ত। সেজন্যই মানুষ , সেই আদিম কাল থেকে, তখনকার আয়ত্ত করা বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে, পেঁয়াজের খোসার মতো ছাড়িয়ে , স্তরের পর স্তর জ্ঞানের গভীরে ঢুকে বিভিন্ন রহস্যকে জানতে শুরু করেছে। ‘গড পারটিকেল্স’ থেকে শুরু করে ‘সুপার কণ্ডাক্টার’, কতো অভাবনীয় আবিষ্কারই না করেছেন এবং করে চলেছেন। এর কোনও শেষ নেই। নতুনের খোঁজ, নতুনের ব্যবহার, তারপর তার উন্নততর সংস্করণ বানিয়ে , তাকে আরও সহজ গ্রাহ্য করা, শত কর্মব্যস্ততার মধ্যে জ্ঞানের বোঝা আরও বাড়ানো, এ সব চলেছে তো চলেছেই। গত শতকের গোড়ার দিকে, যখন স্টিভেনসন প্রথম ষ্টিম- ইঞ্জিন আবিষ্কার করলেন, মানে তৈরি করে দেখালেন যে জলের বাষ্পের শক্তি কেমন অসাধারণ শক্তিতে চাকা ঘোরাতে পারে, তখন অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বলেছিলেন, “যাঃ , বিজ্ঞান এবার ফুরিয়ে গেল। আর নতুন কিছু আবিষ্কার করার মতো জিনিস রইলো না।”
আসলে কি তাই ? একের পর এক আরও নতুন কত্তো কিছু, যেন প্রতিদ্বন্দীতা করে আবিষ্কার হয়েই চলেছে । যতো জানছি, ততোই বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি জানার ইচ্ছেটা।
ম্যাজিকের ক্ষেত্রেও তাই। কতো নতুন নতুন কৌশল, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়ে চলেছে । এর কোনও শেষ নেই। হবেও না।
সত্যি সত্যিই, তাই কি?
হ্যাঁ, তাই! ম্যাজিক শেষ হবার নয় ।

শেষ হবেও না, যদি না আমরা একে বোকা, কুশিক্ষা আর হিংসুটে ধর্মান্ধ কিছু প্রচারপ্রেমী মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে মানুষের ‘চমক-প্রীতি’র ‘quota’ বা আকণ্ঠ-তৃপ্তির চাহিদাটাকে ‘হত্যা’ বা বিকলাঙ্গ করি। বাজে ভাবে উপস্থাপন করলে এর মৃত্যু হবে অনিবার্য। এবং দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, অনেকেই এখন বোকার মতো সেই কাজটাই করে চলেছেন।

সন্দেহ হয়,কিছু মানুষ , নোংরা রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে, দূর থেকে বসে রিমোটে নির্বোধদের দিয়ে এই ‘হত্যাকাণ্ড’ ঘটাচ্ছে না তো?! তথাকথিত যুক্তিবাদীরা তো বলছে, ম্যাজিক নাকি সমাজে কুসংস্কারের জন্ম দিচ্ছে, তাই নষ্ট, ধ্বংস করো এই শিল্পটাকে। ফাঁস করে দাও এর সব কৌশল । কেউ আবার বলছে বা বলাচ্ছে, “ম্যাজিক কোনও আর্টই নয়। ধোকাবাজী। ধর্ম প্রচারের এক হাতিয়ার। আবার অন্য এক শ্রেণীর লোকেরা বলছেন, সর্বশক্তিমান ওপর ওয়ালাকে চ্যালেঞ্জ, মস্করা বা ব্যাঙ্গ করার এ এক অপমানজনক ছলাকলা। মূর্তি, চিত্রকলার মতো একেও ধ্বংস করা উচিত। সেজন্য, ধর্মের সম্মান রক্ষার্থে, ছলে-বলে কৌশলে এদের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করে মুছে দাও।

বলবেই তো। নইলে ওদের জালে তো আর মাছ উঠবে না। মানুষ সত্যিকারের জেগে বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠবে। সূর্য্য ওঠাতে তখন নিজের থেকেই যেমন পূজো-টুজো করা বন্ধ করেছে, তেমন ভাবেই করবে। শিক্ষিত মন আরও গভীরে ভাবতে শুরু করবে। নিজেই নিজেকে দার্শনিক প্রশ্ন, বিজ্ঞানের প্রশ্ন করতে শুরু করবে। উত্তর খুঁজবে নিজের অন্তরেই, কোনও এজেন্টের কাছে নয়। বিবর্তনের কোটি কোটি বছরের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারের লাইব্রেরি রয়েছে তার নিজেরই মনের অবচেতন অংশে। সেখানে সত্যি মিথ্যের তফাৎ নেই, এবং ‘মিথ্যে’র মধ্যেও সত্যির অস্তিত্বের ইঙ্গিত করা। ইন্দ্রজালের মায়ায় কুয়াশায় ঢাকার মতো আচ্ছন্ন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। তৃতীয় নেত্র দিয়ে দেখতে হয়। সেই ‘মায়াবাদ’-এর আধ্যাত্মিক দার্শনিকতার দৃষ্টির খোঁজে মানুষ ভুল করেও যেন ভারতের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। সেজন্য, নিন্দা করো ভারতের। সস্তা, কদর্য করে দাও ওর প্রতিটি মায়াবী আকর্ষক সব শিল্পকলাকে।

ওদের বস্তুবাদ একবার খুব চোট খেয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের প্রজ্ঞার কাছে।ভেবেছিলো “mystic” স্বামীজী অপদস্ত হবেন ওদের ‘সেরা’ প্রেম ধর্মের কাছে, যুক্তিতে। কিন্তু ফল হলো উল্টো। ওরাই হলো অপদস্ত। ওসব কথা ওরা বাপের জন্মে শোনেনি। তারপর আবার চোট খায় সর্বত্যাগী ‘হিপি’ কালচারের কাছে। ‘অতি বৈভবের অভিশাপে’ ওদের নতুন প্রজন্ম হলো সংসার বিমুখ। প্রেম করতে শুরু করলো ‘অভাব, দীনতা’-র সঙ্গে। ‘দীনতায় নাকি আনন্দ’।’দরিদ্র নারায়ণ’ হয়ে উঠলো ‘দারিদ্র-সুন্দর’ । তার বাস্তব নিশানী রেখে গেছে এখন ‘ছেঁড়া জিনস্ ‘-এ বড়লোকী প্রকাশের বিলাসে। তারপর,’হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ কালচার, ওদের স্যুট-বুট পড়া সোফেস্টিকেশনের ঘুম, খোল-করতালের আওয়াজে ছুটিয়ে দিয়েছিলো। এর পরে যদি মায়া-মুক্তির সন্ধানে, ম্যাজিক ফিলোজফিতে ভুল করেও ফেঁশে যায় তো তাহলে সেটা ছাড়ানো মুশকিল হবে। ভারতের প্রেমে পড়ে যাবে সবাই। এমনিতেই ছবি থেকে বিভূতি-ছাই আবির্ভাবের ম্যাজিকে অনেকেই ফেঁশে গিয়ে ছিলো, সে অভিজ্ঞতার উত্তাপ এখনও রয়েছে । সুতরাং ভারতের ম্যাজিককে আর ‘তোল্লাই’ দেওয়া ঠিক নয়। খুব রিস্কি। ফাঁকতালে, ওই দেখো, কট্টর ভারতীয় সংস্কৃতির আয়ুর্বেদ আর যোগভ্যাস- প্রাণায়াম বিশ্বব্যাপী মার্কেট করে বসে আছে। জনগণ সবাই খাবারে গাওয়া ‘গী ‘(ঘি) খাচ্ছে। , হলদির ভক্ত হয়ে উঠছে, দুধে গুলিয়ে খাচ্ছে। ‘ওঁ’ বলে শান্তি পাচ্ছে। না, না, আর ভুল করা ঠিক নয়। ওদের বদনাম করা শুরু করো। ব্যাঙ্গ করো।ম্যাজিকের মধ্যে বেনো জল ঢুকিয়ে দাও । জনগণ যেন শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে। লোকে যেন ভারতের ম্যাজিকের মায়ার মোহে আর গুণগান না করে, সে ব্যবস্থা করো। হরি পোদ্দার নয়, হ্যারি পটারকে দিয়ে রূপকথা সাজাও। তাতে যেন ভারতের নাম – গন্ধ না থাকে। সাবধান।
এখন সেই জিনিসই চলেছে। বিনা পয়সায়, বিনা যোগ্যতায়, ম্যাজিকের প্রতিযোগিতায়, কি তার মাপ-কাঠি, কি বা কোন যোগ্যতায় প্রতিভা মাপা হচ্ছে, কতটা ক্যামেরার সততা, কার আবিষ্কার, কিচ্ছু বিচার না করে, “আন্তর্জাতিক অন লাইন প্রতিযোগিতা” র নামে একের পর এক ‘Zombie”দের সংগঠন বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। তারা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে টি ভি আর্টিস্ট। প্রতিভার কোনও স্থানই নেই। কথিত আছে Zombieরা, বুদ্ধিহীন, বিবেকহীন, ব্রেণ-ডেড , অতৃপ্ত মৃত ব্যক্তি। লবণ খেলেই নাকি চেতনা, সম্বিত জেগে উঠে কবরে ফিরে, সদ্গতি পেয়ে যান। এখানে লবণ হচ্ছে ‘সুশিক্ষা’। অশিক্ষিতরা শিক্ষা পেলেই সদ্গতি পাবে। তখন ‘শিল্পী’ হিসেবেই ম্যাজিক দেখাবে। যদি না ততদিনে ম্যাজিক শিল্প তার সম্মান এবং সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলে। আমার মনে হয়, অজান্তে (?) এসবের আয়োজকরা সেই ভুলটাই করছেন। এতে দূর থেকে রিমোট টিপছে সেই সমস্ত দেশের কর্তা ব্যক্তিরা, যারা এই ভারতীয় উপমহাদেশের জাদুর রোম্যন্টিসিজমকে নষ্ট করতে চায়। এর আগে ওরা ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিকের পেছনে লেগেছিলো। বলেছিলো, সব মিথ্যে কথা। বাবা তখন উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন। তারপর থেকে আর কোনও ট্যাঁ- ফুও কেউ করে নি। করবে না। আমরা সজাগ আছি।

এবার অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে আলোচনা করা যাক। ম্যাজিক শিল্পকলা কেন সম্মান হারাচ্ছে?
ম্যাজিকের পেছনের বিজ্ঞান ভিত্তিক কৌশল খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললেও, সেই গতিতে আর্ট তার সঙ্গে সমণ্বয় রাখতে পারছে না। ম্যাজিক বিজ্ঞান দিয়ে ঘটলেও সে তো মুলতঃ একটা আর্ট! সেই আর্টের উন্নয়ন কিন্তু বিজ্ঞান এবং দর্শকের চেতনার সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে না পেরেই সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলছে। দর্শকের ‘আশার সীমানা’র অ-নে-ক তলায় তাদের বিচরণ স্থল। দর্শক সেটা চান না। রূপকথার জাদুকরের বাড়ি হচ্ছে চকোলেট, বিস্কুট দিয়ে তৈরি । ভাঙ্গা টিনের চাল আর কোঁচকানো বেড-কভার টাঙানো দৃশ্যপটে নয়। অলৌকিক শক্তিশালী জাদুকরের জাদু-ক্ষেত্র, দর্শক এরকম আশা করেন না। যিনি ফাঁকা বাক্স থেকে বিশাল এক সিল্কের রুমাল বের করতে পারেন, তাঁর বাড়ির পর্দা কি কোঁচকানো ময়লা বেড-কভার হওয়াটা মানান সই ? জাদুকরের গায়ে টেইল-কোট, তলায় ডোরাকাটা স্লিপিং পাজামা এবং খালি পা, দেখতে খারাপ লাগে। ম্যাজিক ঘটে কিন্তু সবের মিশ্রণে, সেই চেতনাই নেই।
চমকের মধ্যেও শ্রেণী বিভাগ আছে। (১) প্রথম দর্শনের চমক, (২) ঘোষিত চমক, (৩) আকাঙ্খিত চমক, (৪) পরিবর্তিত চমক, (৫) চিরন্তন চমক, (৬) কল্পনার বাইরের চমক, (৭) রসিকতায় বুদ্ধিমত্তার চমক, (৮) গতানুগতিক তায় মোচড় দেওয়া চমক,(৯) আতঙ্কের চমক আর (১০) চমক হীনতার চমক।
এটা এক বিশাল অধ্যায়। বারান্তরে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এগুলো আমার সব মৌলিক চিন্তা। কার কাজে লাগবে কে জানে?! “আমি যে গান গেয়ে ছিলেম, সেই কথাটি মনে রেখো। ”

সেতার যন্ত্রটাকে তৈরি করার গুণী ব্যক্তিটিকে যেমন আমরা ‘শিল্পী’ বলি; তেমনি আবার যিনি বাজিয়ে সুর সৃষ্টি করেন, রাগ-রাগিনীর পরিবেশন করেন, তাকেও আমরা বলি ‘শিল্পী’। কিন্তু, দুটো ‘শিল্পী’তে তফাৎ আছে। বিরাট তফাৎ। এতদিন এই নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি। এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, দেখা যাচ্ছে, এই দুই শিল্পীকে ছাপিয়ে আর এক নতুন শ্রেণীর শিল্পীর রাজত্ব
(উৎপাত ?) শুরু হয়েছে।
অনেকেই ‘সেতার’ যন্ত্রটাকে টাকা পয়সা খরচ করে কিনে ফেলেছেন, হয়তো বা টুং টাং কিছু আওয়াজও করতে পারেন । তিনি দাবি করছেন যে তাকেও শিল্পীর সমান মর্যাদা, সম্মান, আসন দিতে হবে । কারণ তিনি হচ্ছেন অনুষ্ঠানের স্পনসর।
এমন পরিস্থিতি এখন জাদুর জগতের ক্ষেত্রেও দাঁড়িয়েছে। পয়সা থাকলে যন্ত্র কেনো আর দৌড়ে গিয়ে একটা অন লাইন প্রতিযোগিতায় নাম দাও। ব্যাস্, তুমি হয়ে গেলে বিশ্বজোড়া নামী জাদুকর। সেটা সুনাম নাকি দুর্ণাম, সেটায় ‘ মারো গোলি’।

সেতারের মধ্যে ম্যাজিকের মতো রাখা ঢাকা কোনও গোপন বিজ্ঞান ভিত্তিক কলা-কৌশল নেই। সুরের মূর্ছনা থাকলেও, তাতে ম্যাজিকের মতো হতভম্ব করার মতো কাজ এবং চমকও নেই। সেজন্য একের পর এক, পরপর দুজন শিল্পী, একই সঙ্গীত সেতারে বাজালেও অনুষ্ঠান পরিবেশনায় কোনও অসুবিধা হয় না। বরঞ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা জমে ওঠে, সঠিক হয়। কিন্তু, ম্যাজিকের ক্ষেত্রে, কেউ যদি ওই চমকটার চমকানিটা আগে দেখিয়ে এঁটো করে দেন, তো পরের জাদুকরকে হবে ঠকানো, তাঁর প্রতিভাকে অবহেলা, প্রতারণা, অসম্মান করা হয়। ম্যজিকের ক্লাইম্যাক্স বা কী হতে চলেছে সেটা আগে জেনে গেলে চমকটা নষ্ট হয়। দর্শক মজাটা কম পান। বরঞ্চ কৌশল ফাঁশ হবার সম্ভাবনা থাকে।
To be continued as ‘প্রলাপ'(পর্ব-০৭৪)

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.