Press "Enter" to skip to content

মোহনবাগান-এর গোঁড়া ভক্ত নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাসের (ব্রিজ) নেশায় ছিলেন মশগুল। আবার, এই সমুদ্রভক্ত মানুষটি বাংলা কবিতার প্রতিনিধিত্ব করতে বহু বার পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে, ভারত উৎসবে……।

Spread the love

স্মরণঃ নী রে ন্দ্র না থ চ ক্র ব র্তী

‘’বেঁচে থাকো, যে আছ যেখানে/ বেঁচে থাকো।/ যেমন করেই হোক,/ মরতে-মরতে জোড়া-পায়ে মৃত্যুর পাঁজরে লাথি মেরে/ বেঁচে থাকাটাই বড় কথা।’’

—— নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা কবিতার যে-সময়ে তাঁর আবির্ভাব, রবীন্দ্রনাথের প্রভা ও প্রভাব থেকে তখনও এই ভাষার কবিকুল পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি। অনেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন রবীন্দ্রপ্রভাব মুক্ত হতে, কিন্তু সফল হচ্ছেন না! ক্রমে ঘরে বাইরে বহুমাত্রিক সঙ্কট, আর সেই সঙ্কটের বাতাবরণেই যেন জন্ম হল ত্রিশ-পরবর্তী কবিকুলের। নীরেন্দ্রনাথেরও।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

নীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘… সেখান থেকে সব চেয়ে কাছের রেল-ইস্টিশানটিও ছিল চব্বিশ মাইল দূরে।… বাড়ির সংখ্যা বিশ থেকে বাইশের মধ্যে। পাকা বাড়ি কুল্যে একটি। তাও দোতলা নয়, একতলা।…’’

এমন এক পরিবেশই হয়তো সে দিন প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর কবিতার এই দুই সত্তাকে রোপণ করে দিয়েছিল তাঁর মধ্যে। পরে এক সময় বলেছিলেন, ‘‘যেমন বিশ্বপ্রকৃতি, তেমনি মানবপ্রকৃতি। এ-দুয়ের যোগসম্পর্ক এতই নিবিড় যে, একটায় যখন আস্থা হারাই, তখন অন্যটাতেও আস্থা থাকে না।’’

আর, হয়তো সেই কারণেই তাঁর কবিতার বইয়ের নাম দেন ‘নীরক্ত করবী’, ‘উলঙ্গ রাজা’ কিংবা ‘অন্ধকার বারান্দা’। ‘‘কোনও কোনও ঘটনায় ক্রুদ্ধ না হলে লিখতেই পারি না’’ এমন সহজ স্বীকারোক্তি কিংবা ‘‘আর না, মানুষ আর না’’ কথনের পরেও সাবলীল, ‘‘ওটা আসলে অভিমানের কথা। মানুষকে বড় ভালবাসি।’’

দীর্ঘকায় মানুষটির কাজের খতিয়ানও কম দীর্ঘ নয়! শিক্ষা- শেষে শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতার কাজ। ‘প্রত্যহ’, ‘মাতৃভূমি’, ‘অ্যাডভান্স’, ‘ভারত’, ‘কিশোর’, ‘সত্যযুগ’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় কাজের পর ১৯৫১-তে আনন্দবাজার সংস্থায় যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীরেন্দ্রনাথকে দেখা গেল তুখোড় সাংবাদিক হিসেবেই।

ক্রিকেট ও ফুটবল-পাগল মানুষটি যৌবনে খেলার মাঠে যতখানি ক্ষিপ্র, ঠিক ততখানিই তাঁর ক্ষিপ্রতা, যখন তিনি ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকার সম্পাদক। কঠিন সম্পাদক কিংবা কোমল মানুষ ছাড়াও নীরেন্দ্রনাথের আরও বহু কাজের জন্য শুধু বাংলা কবিতার মানুষ নন, বাংলাভাষার প্রত্যেকেই চিরকাল ঋণী থাকবেন হয়তো।

বাংলা ভাষার বানানরীতি ও সাধারণ-মান্য ব্যাকরণের ভাবনায় তিনি আজীবন কাজ করে গিয়েছেন। ‘বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ কিংবা সম্পাদক ও লেখকদের জন্য একটি অভিধান রচনা ও সঙ্কলন তার সাক্ষ্য বহন করে।

তাঁর ‘কবিতার ক্লাস’ বা ‘কবিতার কী ও কেন’ বই দু’টিও কবিতার অনুরাগীর কাছে মূল্যবান। বাংলা ও ইংরেজি, দুই ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি সর্বজনবিদিত। অনুবাদের ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য, বিশেষ করে ছোটদের জন্য অনুবাদের বেলায় তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভার বিকাশ আজও অবাক করে দেয়।

মোহনবাগান-এর গোঁড়া ভক্ত নীরেন্দ্রনাথ তাসের (ব্রিজ) নেশায় ছিলেন মশগুল। আবার, এই সমুদ্রভক্ত মানুষটি বাংলা কবিতার প্রতিনিধিত্ব করতে বহু বার পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে, ভারত উৎসবে। হয়তো সে কারণেই ক্রমশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিষ্ঠান-প্রতিম। অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে তাই তাঁকেই দেখা যায়।

সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (’৭৪), আনন্দ পুরস্কার (’৭৬), শরৎস্মৃতি পুরস্কার (’৯৬), প্রভৃতি অজস্র সম্মানে বাংলা ও বাঙালি তাঁকে ভূষিত করেছে তাঁর নানাবিধ সাহিত্যকীর্তির জন্য। পেয়েছেন ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারও।

এই কবিই লিখেছেন অজস্র গদ্য, তা সে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান শোনার অভিজ্ঞতাই হোক বা সত্যজিতের চিত্র-আলোচনা। লিখেছেন অজস্র গ্রন্থ সমালোচনা, প্রথম জীবনের আত্মকাহিনি ‘নীরবিন্দু’, একাধিক রহস্য উপন্যাস।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ২০১৮ সালের আজকের দিনে (২৫ ডিসেম্বর) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.