জন্মদিনে স্মরণঃ মোজার্ট
বাবলু ভট্টাচার্য : কিছু কিছু মানুষ আসেই বোধহয় সব লন্ডভন্ড করে দেয়ার জন্যে। মোজার্ট তেমন একজন লোক। সঙ্গীতের ইতিহাস নতুন করে লিখে গিয়েছেন মোজার্ট। তিনি কি লেভেলের প্রতিভা ছিলেন তা আসলে বোঝানো যাবে না। মাত্র তিন বছর বয়সেই “ক্ল্যাভিয়ার” নামক বিশেষ কি-বোর্ড বাজানো শিখে ফেলেছিলেন তিনি। পাঁচ বছর বয়সে ভায়োলিনে হাত পাকালেন। ভায়োলিনে তার দক্ষতা অবাক করে দিতো সবাইকে।
তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিম্ফোনি প্রকাশিত হয়েছিলো যখন, তখন তার বয়স সবে ৮ বছর! ১৪ বছর বয়সে বিখ্যাত অপেরা লিখে তোলপাড় লাগিয়ে দেন ইউরোপে। মানুষ প্রথমে পড়ালেখা শিখে তারপর অন্যকিছু। কিন্তু মোজার্টের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিলো ভিন্ন। কোনো শব্দ শেখার আগেই সংগীতে তার হাতেখড়ি হয়েছিলো।

তার জীবন বৈচিত্রতায় পূর্ণ। মানুষটার জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমা (Amadeus) অস্কারে পুরস্কৃত হয়েছে।
১৭৭৭ সাল। মোজার্ট প্রেমে পড়লেন। মেয়েটির নাম এলয়শিয়া ওয়েবার। তিনি ছিলেন ওই সময়কার নামকরা ওয়েবার পরিবারের চার কন্যার এক কন্যা। এই পরিবারটি ছিল সঙ্গীতচর্চায় বিখ্যাত।
এলয়শিয়া মোজার্টের সঙ্গীত শুনে প্রথমদিকে কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কিন্তু পরে পিছপা হন। কারণ, তখনো মোজার্ট শুধু একজন তরুণ সঙ্গীতজ্ঞ যার নাম জানে না অনেকেই। তাছাড়া এলয়শিয়া নিজেই একজন শিল্পী ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাকে গুণী শিল্পী হিসেবে অনেকেই বাড়তি সম্মান দিত। সবাই তাকে চিনত। তাই, মোজার্ট যখন এলয়শিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেন, এলয়শিয়া সেটা প্রত্যাখ্যান করলেন।
প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে মোজার্ট ভীষণ কষ্ট পেলেন, অপমানিত বোধ করলেন। তিনি কঠিন পরিশ্রম শুরু করলেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামমে। এর মধ্যেই, ১৭৮২ সালে যখন ওয়েবার পরিবারের কর্তা মারা গেল তখন তাদের দৈন্যদশা শুরু হল। এলয়শিয়া’রা নিজেদের বাড়ি ভাড়া দেয়া শুরু করলেন যেনো ভাড়ার টাকায় সংসার চালানো যায়। সেই বাড়িতেই ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠলেন মোজার্ট।
কিন্তু, কাহিনি মোড় নিল অন্যদিকে। মোজার্ট আবারো প্রেমে পড়লেন নতুন করে। কিন্তু এলয়শিয়া নয়, তার বোন কনসটাঞ্জে ওয়েবারের প্রেমে পড়লেন মোজার্ট।
এবার অবশ্য প্রেমে সফল হয়। তাদের বিয়ে হয় ১৭৮২ সালের আগস্ট মাসের ৪ তারিখে।
মোজার্ট সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে জার্মানী গেলেন। সেখানে, প্রথম রোমান এম্পেররে যোগ দেন। তার সঙ্গীত প্রতিভায় মারাত্মক রকমের মুগ্ধ হয়েছিলেন সেখানকার তৎকালীন প্রধান অপেরা কম্পোজার এন্তোনিও সালিয়েরী। কিন্তু, এই মুগ্ধতার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলো শুধুই হিংসা। কেউ এমন ঈশ্বরপ্রদত্ত ঐশ্বরিক প্রতিভা নিয়ে একের পর এক সৃষ্টি করে যাচ্ছে মহাকাব্যিক অপেরা- সেটা সালিয়েরী সহ্য করতে পারেননি।
যে প্রতিভা মোজার্টকে মৃত্যুর পর অসীম খ্যাতি আর পরিচিতি এনে দিয়েছিল, সেই প্রতিভা জীবদ্দশায় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে মিথ্যার জালে আটকাতে হয়েছে, ঈর্ষাকাতরতার শিকার হতে হয়েছে।

সঙ্গীতের ধারা পালটে দেয়া এই মানুষটা মাত্র ৩৫ বছর বেঁচেছিলেন। মারা গিয়েছেন নিঃসঙ্গতায়, হতদরিদ্র অবস্থায়। তার মৃত্যুর শেষকৃত্যে এসেছিল হাতে গোনা অল্প কয়েকজন লোক। তার কবরে কোনো নামফলক ছিল না। আরো কয়েকজনের সাথে তাকে কবর দেয়া হয়েছিল নিতান্ত অযত্নে, অবহেলায়।
মোজার্ট ১৭৫৬ সালের আজকের দিনে (২৭ জানুয়ারি) অস্ট্রিয়ার সালসবুর্গ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment