মধুমিতা শাস্ত্রী: ১৩ এপ্রিল ২০২০। রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ। আর এই বৈশাখকে বরন করে নেওয়ার জন্য এবছর বাঙালি কী প্রস্তুত। এক কথায় বাঙালিরা এর উত্তর দিতে পারবে না। কারণ ভির ঠেলে চৈত্রের সেলে এবছর কেনাকাটা যে হয়নি। অন্যান্য বছরে পয়লা বৈশাখের আগে থেকেই সাধারণ মানুষ, ব্যাবসায়ীরা তোরজোর করে। চলতি বছরে লকডাউনের ফলে সে সবকিছুই বন্ধ।মানুষের নিত্য দিন গুজরানের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিতে পারছে না। বাঙালিরা জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবাই পয়লা বৈশাখ পালন করে। বাংলা বছরের প্রথম দিন টাকে হালখাতা হিসেবে ব্যাবহার করেন ব্যাবসায়ীরা আগের বছরের দেনা পওনার হিসেব সমম্বয় করে এদিন নতুন করে হিসেবের খাতা খোলেন তাঁরা।
এই উপলক্ষে দোকানে আসা ক্রেতাকে মিষ্টি মুখও করান।বাংলা নববর্ষের সাথে অঙ্গা অঙ্গি ভাবে জ্বড়িত হালখাতা উৎযাপন। তবে বর্তমান কালে হালখাতার উৎযাপন আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। আগে রীতিমতো নিমন্ত্রন পত্র ছাপিয়ে উৎসবের আয়োজন করতেন ব্যবসায়ীরা। এখনও অনেক জাগায় দোকান পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে লক্ষী গনেশের পুজো দিয়ে শুরু হয় হালখাতা। অনলাইন শপিং মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের দাপটে হালখাতা আগের মতো পালিত না হলেও
এদিনও দোকানে দোকানে ক্রেতাদের জন্য মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা থাকে। সঙ্গে উপহার হিসেবে অন্তত একটি বাংলা ক্যালেন্ডার থাকবেই।
বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখের এক তারিখ সকল বাঙালি জাতীর ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলাদেশ ও ত্রিপুরাবাসীরাও পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রাসুর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালিত হয়। এ দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। অনেকেই পয়লা বৈশাখকে হাজার বছরের পুরানো সংস্কৃতি বলে মনে করেন। এই বাংলা নববর্ষ গণনা বা উদযাপন কীভাবে শুরু হল? অতীতে বাংলা নববর্ষ ছিল কৃষি নির্ভর ও অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জমিদার খাজনা আদায় থেকে দোকানের হালখাতা সবক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক হিসেব নিকেশই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে খাজনা আদায় করা হতো। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সাথে তার কোনও মিল ছিল না। ফলে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোর্তিবিদ ফতেহ উল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই মার্চ থেকে বাংলার সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গননা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের বছর ১৫৫৬ সালের ৫ ই নভেম্বর থেকে। সে সময় ৯৬৩ চন্দ্র সনকে ৯৬৩ বাংলা সনে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয়।
অর্থাৎ বাংলা বছর গণনা ১ থেকে শুরু না হয়ে ৯৬৩ থেকে শুরু হয়। এই হিসেবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বয়স ৪৬২ বছর।
মোঘল আমল থেকেই পয়লা বৈশাখে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। তখন প্রজারা বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সমস্ত খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এরপর দিন পয়লা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন ও কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার ব্যবসায়ী ও দোকানীরা লাল মলাটের খাতা অর্থাৎ হালখাতা খুলতেন।
প্রথম শহুরে বর্ষবরণ শুরু হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এস হে বৈশাখ ‘ গানের মধ্য দিয়ে।
Be First to Comment