Press "Enter" to skip to content

‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রের কাহিনি রচনা করেছিলেন কথাকার শক্তিপদ রাজগুরু। চিত্রনাট্যও তিনিই রচনা করেছিলেন………।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ শক্তিপদ রাজগুরু

বাবলু ভট্টাচার্য : দেশভাগের প্রেক্ষিতে উদ্বাস্তু মানুষের জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’ এবং ‘সুবর্ণরেখা’। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রের কাহিনি রচনা করেছিলেন কথাকার শক্তিপদ রাজগুরু। চিত্রনাট্যও তিনিই রচনা করেছিলেন।

শক্তিপদ নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ‘উদ্বাস্তু’ ছিলেন না। এ পার বাংলায় বাঁকুড়া জেলায় তাঁদের পুরুষানুক্রমিক বসবাস। কিন্তু মানুষের শিকড় ছিন্ন হওয়ার বেদনা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ভিন্ন প্রেক্ষিতে।

তাঁর বাল্যকাল কেটেছিল মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচথুপি গ্রামে। বাবার চাকরিসূত্রে বাল্যের শিকড়ভূমি এই গ্রামে বন্ধু-বান্ধব, খেলার সঙ্গী, নদীনালা, খাল-বিলের স্মৃতিমেদুর ক্রীড়াভূমি ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল কলকাতায়।

তাঁর বাবা ‘ডাক ও তার বিভাগে’ চাকরি করতেন। বাবার কর্মক্ষেত্র ছিল মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপিতে। লেখাপড়ার সুবিধার জন্যে সেখানেই চলে আসেন শক্তিপদ। এখানেই তাঁর বাল্য ও কৈশোরকাল অতিবাহিত হয়। গ্রামটি বেশ প্রাচীন।

বালক শক্তিপদ যখন এই গ্রামে আসে তখন এই গ্রাম শিক্ষা- দীক্ষায় বেশ উন্নত ছিল। বর্ষায় এই গ্রামের চারপাশ জলবন্দি থাকত আর চারদিক সবুজে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। শীতকালে এই গ্রামে মেলা হত। বাল্যসখা ন্যাড়া ছিল শক্তিপদর সর্বক্ষণের সঙ্গী। মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়িয়েছে দু’জনে। পাখি ধরেছে, পুষেছে। গ্রামে বাউল-বোষ্টমদের গান হত। হত নানা কিসিমের গ্রাম্য খেলা।

শক্তিপদ পাঁচথুপি গ্রামের ত্রৈলোক্যনাথ ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় চলে যান উচ্চ শিক্ষার জন্যে। তাঁর বাবা তখন চাকরি নিয়ে অন্যত্র চলে গেলে শক্তিপদ কলকাতার মেসে থেকে লেখাপড়া করার সময় থেকেই সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। সেই সময়ে ‘দেশ’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘প্রবাসী’, ‘উল্টোরথ’ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠান। কোথাও কোথাও তা প্রকাশিত হয়।

সেই সময়ে ‘আবর্তন’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের সান্নিধ্যে চলে আসেন তিনি। ধীরে ধীরে লেখালেখির সূত্রে তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসতে থাকেন। লেখক জীবনের প্রথম পর্বেই চলচ্চিত্রের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন।

শক্তিপদ রাজগুরু’র উল্লেখযোগ্য উপন্যাস সমূহঃ মেঘে ঢাকা তারা, অনুসন্ধান, অমানুষ, জনপদ, অধিগ্রহণ, স্বপ্নের শেষ নেই, স্মৃতি টুকু থাক, অচিন পাখি, ভাঙাগড়ার পালা, দিনের প্রথম আলো, দূরের মানুষ, নবজন্ম, বাঘা বায়েন, পটলা সমগ্র, পথের বাউল।

সাংস্কৃতিক জগতে তাঁর অভিনব অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শক্তিপদবাবু। সাহিত্যে বিশেষ কীর্তির জন্য বিভূতিভূষণ পদক, ‘অমানুষ’ ছবির চিত্রনাট্যের জন্য অল ইন্ডিয়া লায়ন’স অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৯ সালে ‘হল অফ ফেম সাহিত্যব্রহ্ম’ শিরোপায় ভূষিত হন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে তাঁকে ‘বঙ্গ বিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত হন।

১২ জুন ২০১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শক্তিপদ রাজগুরু ১৯২২ সালের আজকের দিনে (১ ফেব্রু) বাঁকুড়া জেলার গোপবন্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.