Press "Enter" to skip to content

মৃণাল সেন পরিচালিত ‘খারিজ’ চলচ্চিত্রতে অঞ্জন দত্ত প্রথম অভিনয় করেন। এই অভিনয়ের জন্য তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা নবাগত অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন….।

Spread the love

শু ভ জ ন্ম দি ন অ ঞ্জ ন দ ত্ত

বাবলু ভট্টাচার্য : গান শুধু গান নয়, একেকটি গল্প। জীবন থেকে কুড়িয়ে আনা খন্ড খন্ড ঘটনা কিংবা অতীতের নস্টালজিয়া। খুব রাতে ঘুম করে গেলেও জেগে থাকার মতো তন্দ্রা, জমে যাওয়া হোমটাস্ক, ডায়াল করা রং নাম্বার, তিনশো বছরের শহরে প্রেমিকের কাঁধে প্রেমিকার মাথা রাখার হয়তো একটিই জায়গা।

“তোমার সাজানো শরীরের ভেতরে, মালা তুমি কার?” এ উত্তর মালা নিজেও দিতে পারে না। অনুত্তরের আফসোস নিয়েই কোনো এক শ্রোতা তার প্লে-লিস্টের পরের গানটিতে যান। এখানে হয়তো বেলা বোসকে খুঁজে চলছে সদ্য চাকরি পেয়ে হাতে চাঁদ পাওয়া প্রেমিকটি। কিন্তু হায়, বেলা বোস কই? রং নাম্বারের সারিতে একটিই খোঁজ– “হ্যালো… এটা কি ২৪৪১১৩৯? দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার/ মিটারে যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনে/ জরুরি খুব জরুরি দরকার!”

বেলা বোস কি কাঁদছে? সে কি শুনছে? নাকি শুনেও না শোনার ভান করছে! জানা হয় না, রয়ে যায় আরেক আঁচলা আক্ষেপ।

ঘুরতে ঘুরতে চলে যাওয়াই যায় ‘দাস কেবিন’ এ। সপ্তাহের একেকদিন একেক যুগল হানা দেয় এখানে। পকেটের ভার বুঝে সময় কাটায় তারা। আর কোথাও যাওয়া হয় না। প্রেমে নিমজ্জিত হবার বিলাসিতা করার আর কোনো ঠাঁই পায় না তারা। তাই তো অঞ্জন দত্ত গেয়ে ওঠেন– “জায়গা নেই যে আমাদের আর কোনো এই তিনশো বছরের শহরে”। জায়গা নেই, একদম জায়গা নেই! জায়গা নেই বলেই– “রাস্তার কোনো সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী দু’জনে/ রুদ্ধশ্বাস কত প্রতীক্ষা!”

তিনি আক্ষেপ আঁকেন। আফসোসের সুরে প্রাণদান করেন। চোখ বন্ধ করে ডুবে থাকা শ্রোতার কানে নয়, মনে ঢেলে দেন গল্পের নির্যাস। এক এক করে তারা সবাই আমাদেরও চেনা হয়ে যায়। মনে হয় পুরনো চেনাজানা মানুষের কথাই বলা হচ্ছে। প্রশ্নও যে জাগে না এমন নয় তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে!

“মা গো আমার মা গো জানি, অনেক কষ্ট পাবে তুমি/ তবু আমার নেই কোনো উপায়…”– ট্যাক্সিতে বসে থাকা প্রেমিকের হাত ধরে পালাতে চাওয়া মেয়েটি মাকে চিঠি লিখেছিল। নাম তার রমা। রমা কি পেরেছিল সেদিন পালাতে? নাকি বাবা-কাকার পছন্দের বরের হাতেই পড়তে হয়েছিল সিঁথির সিঁদুর? জিজ্ঞাসা রয়েই যায়, উত্তর মেলে না।

“ছোট্টবেলার প্রেম/ আমার কালো মেম/ কোথায় গেলে হারিয়ে?” বুকফাটা আর্তনাদে মেরি অ্যানকে সে দেখে রিকশায় দুলে দুলে যেতে। মেরী অ্যানের “হাত দুটো গেছে ক্ষয়ে, গাল দুটো গেছে ঝুলে, নিয়মিত অবহেলায়”। রিপন স্ট্রিট আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকা মেরী অ্যানের প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ কমেনি ছেলেটির।

“একটা সবুজ রঙের সালোয়ার, জয়িতা/ একটা কোনোমতে টিকে থাকা সংসার… জয়িতা!” জানালার এপাশ থেকে প্রেমে পড়া জয়িতার, তাকিয়ে দেখা তার ভঙ্গুর সংসার। জয়িতার জীবন সংগ্রামের অংশ হওয়া হয় না, নীরব দর্শক হয়েই থেকে যেতে হয়। একদিন জয়িতা জানালার পাশে টেবিলটাতে পড়তে বসাও ছেড়ে দেয়। ওপাশে কতখানি দীর্ঘশ্বাস পড়ে কে জানে! কে জানে ওপাশের হাহাকার কতখানি তীব্রতা পায়?

“রঞ্জনা আমি আর আসবো না/ তাই দুপুরবেলাতে ঘুমিও/ আসতে হবে না আর বারান্দায়”– বলা ছেলেটির না আসার পেছনে তার ভীরুতাই হয়তো ধরা পড়ে, কিন্তু দিনশেষে ঘরে ফিরে এই ছেলেটিই যখন বলে- “সত্যিকারের প্রেম জানি না তো কী তা/ যাচ্ছে জমে হোমটাস্ক/ লাগছে না ভালো আর মেট্রো চ্যানেলটাও/ কান্না পাচ্ছে সারারাত!” তখন নিজের কৈশোর প্রেম মনে করে কত রঞ্জনা, কত হোমটাস্ক জমানো কান্না পাওয়া ছেলে নিজেকে গুলিয়ে ফেলে গানের সাথে, কে জানে?

মুগ্ধতা বাড়তে বাধ্য হয়, যখন গল্পের রচয়িতা নিজেই গল্পে শামিল হন। অঞ্জন দত্তের অভিনয়গুণের প্রকাশও আমরা বেশ কয়েকবার দেখেছি ‘খারিজ’, ‘একদিন আচানক’, ‘যুগান্ত’, ‘অন্তরীণ’, ‘নির্বাক’, ‘জানি দেখা হবে’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘দেখা’, ‘মিস্টার এন্ড মিসেস আইয়ার’ সহ আরো বেশ কিছু সিনেমায়।

মৃণাল সেন পরিচালিত ‘খারিজ’ চলচ্চিত্রতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এই অভিনয়ের জন্য তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা নবাগত অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।

অঞ্জন দত্ত পরিচালনা করেছেন ‘দ্য বং কানেকশন’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’, ‘চলো… লেট’স গো’, ‘দত্ত ভার্সাস দত্ত’, ‘ম্যাডলি বাঙালি’, ‘শেষ বলে কিছু নেই’, ‘মনবাক্স’ ইত্যাদি সহ ব্যোমকেশ সিরিজের বেশ কিছু সিনেমা।

‘দার্জিলিংয়ের রাস্তা’ গান গাওয়া অঞ্জন বেড়ে উঠেছিলেন দার্জিলিংয়েরই রাস্তায়। সেখানকার পাহাড়ের ধারে সেইন্ট পল’স স্কুলে তার শিক্ষাজীবনের শুরু।

শৈশবস্মৃতির প্রতি আবেগমন্থন থেকেই তিনি ‘দার্জিলিংয়ের রাস্তা’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন ২০১৩ সালে। তিনি নিজেই বলেন, সিনেমাটি তার গল্প দিয়েই তৈরি।

একসময় কাজের অভাবের কারণে তাকে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক ‘দ্য স্টেটসম্যান’-এ সাংবাদিকের কাজ নিতে হয়। এতেও অবশ্য তার অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো সমৃদ্ধই হয়, তবু বাণিজ্যিক মাত্রার দিকে কোনো আগ্রহ দেখাননি অঞ্জন দত্ত।

অঞ্জন দত্ত ১৯৫৩ সালের আজকের দিনে (১৯ জানুয়ারি) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.