#মুরগির মাংস বনাম পাঁঠার মাংস-নিয়ন্ত্রিত আহারে উভয়েই স্বাস্থ্য উপযোগী।#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ৩০ জুন, ২০২০। প্রতি রবিবার পাঁঠার মাংস দিয়ে এক থালা ভাত খাওয়ার সুখস্মৃতি অনেকের স্মৃতি তে ধরা থাকলেও স্বাস্থ্য সচেতক রা মুরগির মাংস, ভোজন রসিক রা পাঁঠার মাংস তে ভোট দেবেন এমনটাই হয়ে এসেছে। এই দুই মাংসের লড়াই চলতে থাকলেও মুরগির মাংস ও পাঁঠার মাংস উভয়েই পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত। ১০০গ্ৰাম মুরগির মাংসে ক্যালোরি ১১০, প্রোটিন ২৫গ্ৰাম, কার্বোহাইড্রেট ৪গ্ৰাম, ফ্যাট০. ৫, আয়রন ২মিলিগ্ৰাম, খনিজ লবন ও ভিটামিন থাকে।
মুরগির মাংস সহজ পাচ্য , পুষ্টি কর, কম ফ্যাট যুক্ত বলে অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করে, চিকিৎসকরা ও পরামর্শ দেন, কিন্তু, রোজ কতটা কিভাবে খাওয়া হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে তা স্বাস্থ্য উপযোগী কিনা। অন্যদিকে, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মুরগির মাংস থেকে পাঁঠার মাংস ঢের বেশী পুষ্টিকর। এই মাংসের ক্যালোরি ভ্যালু বেশী, সবরকমের আ্যমাইনো আ্যসিড যুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ পাঁঠার মাংস ফসফরাস, ভিটামিন বি-১২, জিংক, পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিপূর্ণ, এই মাংস বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী ও দরকারি। আ্যনিমিক রোগীদের জন্য পাঁঠার মাংস সপ্তাহে দুই দিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক রা। তবে, কচি কালো পাঁঠা যার ওজন ২৫ কেজি র বেশী নয়, তার মাংস সব থেকে ভালো।
শরীর গঠনের জন্য মুরগির মাংস থেকে পাঁঠার মাংস অনেক গুন বেশি উপযোগী কিন্তু, অতিরিক্ত খেলেই বিপদ। কারন, পাঁঠার মাংসের স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে টোটাল কোলেস্টেরল ও ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও রক্তচাপ বৃদ্ধি, সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস, রক্তে সুগারের বেড়ে যাওয়া, সেই সঙ্গে প্রস্টেট ক্যান্সার, গল স্টোন এর আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই যারা নিয়মিত মুরগির মাংস বা পাঁঠার মাংস খেয়ে থাকেন, তাদের প্রতি দিন ই কাজ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘাম ঝরানো উচিত। তা না হলে, প্রথমে বাড়বে ওজন, তারপর সুগার, কোলেস্টেরল, প্রেশার এবং নানা রোগের আশঙ্কা। পাঁঠার মাংস এ পুষ্টি মূল্য বেশী কিন্তু ফ্যাট বেশী থাকায় বিপদ ও আছে। এই ভয় মুরগির মাংস তে না থাকলে ও নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে যে কোনো সুস্থ মানুষ পাঁঠা, মুরগি যা ভালো লাগে তাই খেতে পারেন। গন্ডগোল দেখা দেয় বেশী পরিমাণ খেলেই। অনেকের ধারণা মুরগির মাংস খেলে সাত খুন মাফ, যে কোনো বয়সে যত খুশি খাওয়া যেতে পারে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শরীর গঠনের জন্য মাংস অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত, সপ্তাহে ৪-৫দিন যে কোনো মাংস খেলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে পরিমাণ হবে একশ গ্ৰামের কম। তবে, যাদের কিডনির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক আ্যসিডের সমস্যা আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার মাংস ই খাওয়া উচিত নয়। তবে খাদ্য সচেতন হয়ে চল্লিশের পর যদি কোনো ব্যক্তি নিজেই স্থির করেন, এবার পাঁঠার মাংস ছেড়ে চুটিয়ে মুরগির মাংস খাবেন তাহলে তা নিজের শরীরের পক্ষে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত হবে।
তাই একটা বয়সের পর খাওয়া সংক্রান্ত নিয়ম নীতি চিকিৎসকের পরামর্শ মতন গ্রহণ করলে ভালো হয়। যেকোনো মাংস অতিরিক্ত তেল মশলা ঝাল করে, ঝলসানো, পোড়ানো ভাবে না খাওয়া ই ভালো। মুরগির মাংস বা পাঁঠার মাংস সাধারণ উপায়ে রান্না করে খাওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্য কর। পাঁঠার মাংস বনাম মুরগির মাংসের অদৃশ্য লড়াই চলতে থাকলেও রসনা যেমন চাইবে তেমনি হবে কিন্তু একটু রয়ে সয়ে।
Be First to Comment