Press "Enter" to skip to content

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের অসহায় ও নিপীড়িত জনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। ২৭ মার্চ লোকসভায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে ভাষণ দেন….।

Last updated on November 23, 2021

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ শ্রী ম তী ই ন্দি রা গা ন্ধী

বাবলু ভট্টাচার্য : ভারত তথা বিশ্ব রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী এক বিশ্বনন্দিত নাম।

ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। তার পিতা জওহরলাল নেহরু ও মা কমলা নেহরু। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা।

১৯৩৪-৩৫ সালের দিকে কিছুকাল তিনি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে অধ্যয়ন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আদর করে তাকে ‘প্রিয়দর্শিনী’ নামে ডাকতেন। পরে অক্সফোর্ডের সামারভিল কলেজে পড়াশোনা করেন। বিষয় ছিল ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।

রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেহরু পরিবারের সদস্য হিসেবে শৈশবেই ইন্দিরা গান্ধীর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৩৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করেন। ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে ১৯৪২ সালে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। পরে কুল নাম হিসেবে পারিবারিক পদবির পরিবর্তে স্বামীর পদবি ব্যবহার করেন।

তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৭ ও ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মোট পনেরো বছর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, মানবিকতাবোধ ও আদর্শিক অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তার নীতি স্থির করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই তিনি বাংলাদেশের অসহায় ও নিপীড়িত জনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। ২৭ মার্চ লোকসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে ভাষণ দেন।

বলা যায় দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে আদর্শগত সাদৃশ্যতা, বিশেষত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে তাকে অনুপ্রাণিত করে।

এটা স্বাভাবিক, মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক জনমত ও পরাশক্তির ভূমিকা ভারত সরকারের নীতি ও কর্মপরিকল্পনায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে নারী, শিশু, বয়স্ক লোকজন– সবার ওপর বর্বর অত্যাচার, নির্যাতন, গণহত্যা চালানোর কারণে লাখো বাঙালি নর-নারী জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষায় বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এক সময় শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি।

এই বিপুলসংখ্যক অসহায় মানুষের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয় ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। শরণার্থী সমস্যার বহুমাত্রিক প্রভাবে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি ব্যয় নির্বাহের জন্য ভারতের জনগণকে অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারতের উত্তর ও পশ্চিম বিমান ঘাঁটি আক্রমণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথ কমান্ড গঠন করে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

৬ ডিসেম্বর লোকসভায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে ইন্দিরা গান্ধী ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের আকাঙ্ক্ষার কোনো গুরুত্ব নেই। বাংলাদেশের জনগণ তাদের অস্তিত্বের সংগ্রামে লিপ্ত আর ভারতের জনগণ যুদ্ধ করছে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তারা বর্তমানে একই শত্রুর বিরুদ্ধে সহযাত্রী। আমি আনন্দের সঙ্গে এই সংসদকে অবহিত করতে চাই যে, বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অত্যন্ত সতর্ক বিবেচনার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

মহীয়সী এই নারী ও প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে করবে তাকে।

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, শ্রীমতী গান্ধী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

শ্রীমতী গান্ধী ১৯১৭ সালের আজকের দিনে (১৯ নভেম্বর) এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার – ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »
More from PoliticalMore posts in Political »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.