Press "Enter" to skip to content

মুকেশ ছিলেন হিন্দি-বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদপ্রতীম গায়ক-নায়ক কুন্দলাল সায়গলের ভক্ত…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মুকেশ

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘কাভি কাভি মেরে দিল মে’, ‘দোস্ত দোস্ত না রাহা’, ‘মুঝকো ইস রাত কি তানহাই মে’ ‘এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়’সহ অসংখ্য হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গান গেয়ে যিনি হিন্দি ছবির দর্শকদের মনে ভালোবাসার আসন স্থায়ী করে নিয়েছেন তিনি মুকেশ।

হিন্দি ছবির স্বর্ণযুগের এই গায়কের কণ্ঠ আজও শ্রোতার মনে দোলা দিয়ে যায়।

মুকেশের পুরো নাম মুকেশ চান্দ মাথুর। ছোটবেলায় তার বড় বোনকে গান শেখাতে আসতেন শিক্ষক। ছোট্ট মুকেশের গান শুনে প্রতিভা চিনে নিতে ভুল হয়নি তার। বাড়িতে সে সময় থেকেই গান শিখতে থাকেন মুকেশ। পরবর্তিতে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন তিনি।

 

একবার এক আত্মীয়ের বিয়ের আসরে গান গাইছিলেন কিশোর মুকেশ। ওই বিয়ের আসরে উপস্থিত ছিলেন তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মোতিলাল। মোতিলাল সে সময় হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন।

মোতিলাল মুকেশ-এর গান শুনে মুগ্ধ হলেন। তিনি মুকেশকে মুম্বাই নিয়ে যান এবং পণ্ডিত জগন্নাথ প্রসাদের কাছে গান শেখার ব্যবস্থা করেন। সেসময় তিনি ‘নির্দোষ’ নামে একটি ছবিতে অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে সুযোগ পান।

 

‘নির্দোষ’ মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে। এই ছবিতেই প্রথম তরুণ মুকেশের স্বর্ণকণ্ঠ শোনেন দর্শক-শ্রোতারা। ১৯৪৫ সালে ‘পেহলি নজর’ ছবিতে প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন মুকেশ।

মুকেশ ছিলেন হিন্দি-বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদপ্রতীম গায়ক-নায়ক কুন্দলাল সায়গলের ভক্ত। সায়গলের ধরনেই গান গাইতেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, বিভিন্ন গানের জলসাতেও সায়গলের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতেন তিনি। পরবর্তিতে অবশ্য সায়গলের এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নিজস্ব গায়কী অবলম্বন করেন মুকেশ।

‘পেহলি নজর’ ছবির গান ‘দিল জ্বলতা হ্যায়’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর পর কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক নওশাদের সুরে ‘আনোখি আদা’, ‘মেলা’, ‘আন্দাজ’ ইত্যাদি জনপ্রিয় ছবিতে গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন মুকেশ।

তিনি দিলিপ কুমার ও রাজকাপুরের প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পান। বিশেষ করে রাজকাপুরের সঙ্গে তার কণ্ঠ বেশি মানানসই ছিল। ‘আওয়ারা’ ছবিতে পর্দায় রাজ কাপুরের বিখ্যাত গান ‘আওয়ারা হু’ গেয়েছিলেন মুকেশ। ‘শ্রী ৪২০’ ছবির ‘মেরা জুতা হায় জাপানি’ও তারই গাওয়া। ‘মেরা নাম জোকার’ ছবিতে ‘জিনা ইহা মরনা ইহা’ গানটি মুকেশের কণ্ঠে হয়ে ওঠে অনবদ্য।

মুকেশ অনিল বিশ্বাস, নওশাদ, শংকর জয়কিশান, সলিল চৌধুরির মতো বিখ্যাত সংগীত পরিচালকদের প্রিয় শিল্পী ছিলেন। ‘সুহানা সফর’, ‘মধুমতি’ ইত্যাদি ছবিতে তার কণ্ঠে শোনা যায় হৃদয়ছোঁয়া সব গান।

মুকেশ চার বার সেরা গায়কের ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে ‘আনাড়ি’ ছবিতে ‘সব কুছ শিখা হামনে’, ১৯৭০ সালে ‘পেহচান’ ‘সবসে বড়া নাদান’ এবং ১৯৭২ সালে ‘বেইমান’ ছবিতে ‘জয় বলো বেইমান কি’গানের জন্য পুরস্কার পান তিনি। এই তিনটি ছবিরই সংগীত পরিচালক ছিলেন শংকর জয়কিশান।

১৯৭৬ সালে খৈয়ামের সুরে ‘কাভি কাভি’ ছবির ‘কাভি কাভি মেরে দিলমে’ গানের সুবাদে ফিল্মফেয়ার জয় করেন তিনি। এ ছবির আরেকটি গান ‘ম্যায় পল দো পলকা শায়ের হু’ গানটিও শ্রোতা-প্রিয় হয়। ‘কাভি কাভি’তে নায়ক ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। রাজকাপুরের মতো অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও তার কণ্ঠ ভীষণ মানানসই বলে মনে হয়।

১৯৭৪ সালে ‘রজনীগন্ধা’ ছবির ‘কায়ি বার ইউহি দেখা হ্যায়’ গানের সুবাদে সেরা গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন মুকেশ।

রাজকাপুরের অনেক ছবিতেই গান গেয়েছেন মুকেশ। ‘আগ’, ‘আওয়ারা’, ‘সংগম’, ‘জিস দেশমে গঙ্গা বেহতি হ্যায়’, ‘মেরা নাম জোকার’ ইত্যাদি ছবিতে তার কণ্ঠের গানগুলো পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

পরবর্তিতে সুপার স্টার রাজেশ খান্নার প্লে-ব্যাক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা পান তিনি। ‘আনন্দ’ ছবিতে সলিল চৌধুরীর সুরে স্মরণীয় গান ‘কাহি দূর যব দিন ঢল যায়ে’ (বাংলায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’র সুরে) মুকেশের কণ্ঠে ও রাজেশের অভিনয়ে অমর হয়ে আছে।

‘ছালিয়া’, ‘দারিন্দা’, ‘বেদরদ জমানা কেয়া জানে’, ‘তেসরি কসম’, ‘মিলান’, ‘ইশারা’, ‘হিমালয় কি গোদ মে’, ‘দিল হি তো হ্যায়’, ‘শোর’, ‘আনন্দ’, ‘বোম্বাই কা বাবু’, ‘আশিক’, ‘বারাসাত’, ‘ছোটি ছোটি বাতে’, ‘হাম হিন্দুস্থানি’, ‘হানিমুন’, ‘রাত আউর দিন’, ‘সামবান্ধ’, ‘কাটি পাতাং’, ‘ছোটি সি বাত’, ‘সত্যম শিভাম সুন্দরম’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে শোনা যায় মুকেশের স্বর্ণকণ্ঠের গান।

মুকেশের হৃদরোগ ছিল। ১৯৭৬ সালের ২৭ অগাস্ট মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মুকেশ।

সে সময় তিনি আমেরিকার ডেট্রয়েটে একটি কনসার্টে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন লতা মঙ্গেশকার। ভোরবেলায় হোটেলের কক্ষেই তীব্র বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হন মুকেশ। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তার।

তবে মুকেশ বেশ বেছে কাজ করতেন। একটু খেয়ালিও ছিলেন। প্রায় ১৩০০ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। অন্যদের তুলনায় এই সংখ্যা বিষ্ময়করভাবে কম। বিশেষ করে তার প্রতিভা ও জনপ্রিয়তার বিবেচনায়।

কয়েকটি বাংলা গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া বাংলা গানগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো, ‘আমার মনের কত সুখ নিয়ে’, ‘দেহেরই পিঞ্জিরায় প্রাণ পাখি কাঁদে’, ‘মন্দ বলে লোকে বলুক না’ ইত্যাদি।

মুকেশ (মুকেশচাঁদ মাথুর) ১৯২৩ সালের আজকের দিনে (২২ জুলাই) দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.