Press "Enter" to skip to content

মামলায় অব্যাহতি নিয়েই ‘বিচারব্যবস্থা কে কলুষিত করার জন্য মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রীর ৫ লক্ষ টাকার জরিমানা’র  নির্দেশ…….। 

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ৮ জুলাই, ২০২১। গত ৭ জুলাই  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে উঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা পুনরায় গননা চেয়ে মামলাটি।আজ এই মামলা থেকে অব্যাহতি নিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। তিনি এই মামলাটি পুনরায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে পাঠিয়ে দেন।পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতিই আবার বিচারের জন্য অন্য কোন বিচারপতির এজলাসে পাঠাবেন এই মামলাটি। oiদিন বিচারপতি কৌশিক চন্দ এই মামলার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন – ‘ মামলাকারী অভিযোগ তোলার জন্য তিনি এই মামলা থেকে সরছেন না, সরছেন এই মামলায় বহু সুবিধাবাদীদের তৈরি করা বিতর্ক থেকে অবসান করাতে।এই মামলার শুনানির প্রথম দিনেই এজলাসের আপত্তির কথা জানাতে হত তাঁকেই।তা না করে সরাসরি প্রধান বিচারপতির কে চিঠি লিখে আপত্তি জানানো আইনগত ঠিক নয়’। এই মামলায় মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে বিচারব্যবস্থা কে কলুষিত করার জন্য ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস।এই জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল কে। বার কাউন্সিল এই অর্থ করোনা মোকাবিলায় খরচ করবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে। এদিন বিচারপতি পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন – ‘ আদালতের ভেতর ও বাইরে প্রকাশ্যে যেভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তা সঠিক নয়।মামলাকারীর এই ব্যবহারের জন্যই আদালত তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দিলো। এই টাকা জমা করতে হবে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে।তারা এই টাকা দুস্থ আইনজীবীদের করোনা মোকাবিলায় কাজ করবে।’ বিচারপতি এই মামলার পর্যবেক্ষণে আরও জানান –  সংশ্লিষ্ট মামলায় আমি দুতরফের কাউকে  ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা।তা সত্বেও আদালতের বাইরে এবং ভেতরে পরিকল্পিত ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়েছে। এই ধরনের কাজ সঠিক নয়। আমার বিচারপতি পদ স্বায়ীকরণ নিয়ে প্রকাশ্যে এনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শপথগ্রহণ এর শর্ত ভঙ্গ করেছেন’। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হবে দল বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম বিধানসভার নির্বাচনে নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান। একদিকে যেমন সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক এড়াতে দুই বাঙালি বিচারপতি বাংলার মামলা থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন অনেক আগেই। ঠিক অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ কে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে বারবার তোপ দেগে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীরা।কখনো প্রধান বিচারপতি কে লিখিত আবেদন করে নন্দীগ্রাম মামলায় এজলাস বদলের আবেদন। আবার কখনো সরাসরি বিচারপতি কে তাঁর এজলাসেই রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা।সাম্প্রতিককালে কোন বিচারপতি ঘিরে এমন রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ সেভাবে শোনা যায়নি।তবে বিচারপতিও আগের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে চলেছিল নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত দুটি পিটিশনের শুনানি। সেসময় ভার্চুয়াল হাজিরায় ছিলেন মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাছাড়া সশরীরে হাইকোর্ট চত্বরে উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রাম বিধানসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান।গত মাসে হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সরাসরি বিচারপতি কে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ তোলে ছিলেন।তাই এই মামলায় নিরপেক্ষতা এবং রাজ্যের পক্ষে সুবিচার পাওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি ছিল অভিষেক মনু সিংভির।বিচারপতি কৌশিক চন্দ পেশাগত আইনজীবী জীবনে বহু মামলা লড়েছেন এবং লিগ্যাল সেলের সাথে যুক্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর অভিযোগ। বিচারপতি তখন এজলাসে জানিয়েছিলেন – ‘ নিদিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মামলা করলেই তাঁকে সেই দলের কর্মী সমর্থক হতে হবে? তা আমার জানা নেই!’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তিন আইনজীবীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি। অভিষেক মনু সিংভি জাতীয় কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা, তবে তৃণমূলের ভোটে রাজ্যসভার সাংসদ। অপরদিকে গোপাল মুখোপাধ্যায় এবং সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামে দুজন আইনজীবীর রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেন বিচারপতি। গত শুনানিতে বিচারপতি এজলাসে সওয়াল-জবাব পর্বে জানান – ‘ গত ১৬ জুন প্রধান বিচারপতির কাছে এই মামলার বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হয়েছিল।১৮ জুন এই মামলার যখন শুনানি হয়েছিল আমার এজলাসে তখন কেন বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হলোনা? ‘ এরপর অবশ্য বেঞ্চ বদলের আবেদন জানানো হয়েছিল এই এজলাসেই।তাই দুটি আবেদন একই সাথে চালানো যায়না বলে মতপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ” সাধারণত কোন বিচারপতি ঘিরে মামলাকারীর কোন প্রশ্ন থাকলে তা সরাসরি সেই এজলাসেই লিখিতভাবে জানাতে হয় “। একুশে বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে হাইপ্রোফাইল আসন ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম বিধানসভা।ফলাফল প্রকাশের দিন ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রথম পর্বে তৃনমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১২০০ ভোটে জেতার ঘোষণা করা হলেও একটু রাতে জানানো হয়েছিল – ‘ তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয় ,  জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তাও ১৯০০ এর বেশি কিছু ভোটে’। সেইদিনই  গননায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মমতা।তিনি আদালতে যাওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে উঠেছিল এই মামলা।তবে মামলাকারী আদালতে সশরীরে উপস্থিত না থাকায় এই মামলার শুনানি ২৪ জুন রেখেছিলেন বিচারপতি। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী ৮১ নং ধারায় এই ধরনের মামলার শুনানিতে এজলাসে উপস্থিত থাকতে হয়। তাই বিচারপতি এই মামলায় শুনানি রেখেছিলেন ২৪ জুন। তৃনমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানিয়েছিলেন – ‘ যা নিয়ম আছে, তা মানা হবে ‘। অপরদিকে এই হাইভোল্টেজ মামলায় বিচারপতি কৌশিক চন্দ কে ঘিরে শাসকদলের মধ্যে  শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে  তৃণমূল লিগ্যাল সেলের পক্ষে আইনজীবীরা মুখে কালো মাস্ক এবং পোস্টার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। বিক্ষোভরত আইনজীবী অচিন্ত্য কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন – ” বিচারব্যবস্থার সাথে রাজনীতি কখনোই কাম্য নয়”। পাশাপাশি কয়েকজন আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে চিঠি লিখে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারপতি কৌশিক চন্দের বদলী চেয়েছিলেন ।এই প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ‘” সাধারণত  সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে এইসব জানাতে হয়।  এই দাবি ওই বিচারপতি কে জানালে, তিনিই এই মামলায় রিলিজ নিয়ে নিতেন কোনরকম বিতর্ক তে না জড়াতে।এই ভাবে এজলাস বদল করা যায় না ! এজলাস বদল করতে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির কাছে আবেদন করতে হয়। তখন সেই বিচারপতি তার এজলাস থেকে মামলাটি রিলিজ করেন এবং প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতি তখন অন্য কোনো বিচারপতি কে মামলাটি   দেন। সরাসরি প্রধান বিচারপতিকে এভাবে চিঠি করে বিচারপতি বদল নিয়মানুগ নয়”।তৃণমূল লিগ্যাল সেলের পক্ষে জানানো হয়েছিল – ‘বিচারপতি কৌশিক চন্দ একসময় বিজেপির লিগ্যাল সেলের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের অতিরিক্ত সলিটর জেনারেল পদেও ছিলেন এই বিচারপতি। সিবিআই সহ কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন কলকাতা হাইকোর্টে।তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ইমামভাতা নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় বিজেপির আইনজীবী এস.কে কপূরের জুনিয়র ছিলেন।পাশাপাশি বিজেপি নেতা অমিত শাহের ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালহলের সামনে সভা নিয়ে মামলায় আইনজীবী ছিলেন এই কৌশিক চন্দ।এই দুটি মামলাতেই আইনজীবী হিসাবে জয় এনে ছিলেন কৌশিক চন্দ।তবে বিচারপতির গেরুয়া যোগ নিয়ে সরব বর্ষীয়ান আইনজীবীরদের বড় অংশ ।তাঁরা জানিয়েছেন – ” উনি কোনদিনই বিজেপির সদস্য ছিলেন না,তবে বিজেপির পক্ষে মামলা লড়েছেন। তাতে কি তিনি বিজেপি হয়ে গেলেন? পেশাদার আইনজীবীদের কাছে মক্কেল কোন রাজনৈতিক দলের তা বিবেচিত নয়”। আইনজীবীদের বড় অংশ জানাচ্ছেন – ‘ অনেক বিচারপতিই কর্মজীবনের আগে আইনজীবী হিসাবে বিভিন্ন মামলা লড়েছেন। তবে বিচারপতির চেয়ারে বসলে তার প্রভাব বিচারের  ক্ষেত্রে পড়েনা’। গত মাসে এই মামলার শুনানি চলেছিল। সেখানে হাইকোর্ট চত্বরে ছিলেন নন্দীগ্রাম বিধান সভার তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন – ” ভোট গননায় কারচুপি হয়েছে। রিটানিং অফিসার কে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম।তবে কোন কাজ হয়নি।তাই আদালতে সুবিচার চাইতে এসেছি”৷ পাশাপাশি বিচারপতি কে নিয়ে কোনরকম রাজনৈতিক ছোঁয়া না লাগে তার দাবি তুলেছেন শেখ সুফিয়ান।বুধবার এই মামলার যাবতীয় বিতর্ক এড়াতে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।তবে বিচারব্যবস্থা কে কলুষিত করার জন্য ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন মামলাকারী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.