Press "Enter" to skip to content

মান্টোকে বলিউডের আধুনিক চিত্রনাট্যের জনক বলা হয়। তিনি ১৯৩১ সালে অমৃতসরে হিন্দুসভা কলেজে পড়ার সময় ‘তামাশা’ গল্প লেখেন…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ সা দ ত হা সা ন মা ন্টো

বাবলু ভট্টাচার্য : ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯৩৬-১৯৫৬ পর্বে একটা সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমরা বাঙালিরা তাকে ‘প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘ’ নামে জানি। সেই সাহিত্য- আন্দোলনের ঘূর্ণাবর্তে যে লেখক-সাহিত্যিকরা এসে পড়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সাদাত হাসান মান্টো।

তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ক্ষণজন্মা গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, অনুবাদক এবং একইসঙ্গে সংলাপ রচয়িতা। বিংশ শতকে এমন ক্ষণজন্মা প্রতিভাধর শক্তিশালী লেখকদের অগ্রজ প্রতিনিধি বলা হয় তাঁকে।

মান্টোকে বলিউডের আধুনিক চিত্রনাট্যের জনক বলা হয়। তিনি ১৯৩১ সালে অমৃতসরে হিন্দুসভা কলেজে পড়ার সময় ‘তামাশা’ গল্প লেখেন। গল্পটি ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে রচিত।

পণ্ডিত আবদুল বারী আলিগের পরামর্শে মান্টো অনুবাদের কাজ শুরু করেন। মান্টো তখন ২১ বছরের তরুণ। পরে নিজের ভিতের ওপর শুরু করেন স্বকীয় লেখা, যা তাকে ভারতীয় উপমহাদেশে শ্রেষ্ঠ লেখকদের কাতারে দাঁড় করিয়েছে।

মান্টো সাহিত্যকর্মে আরও বেশি মনোনিবেশ করার জন্য ভারতীয় প্রগতিশীল লেখক সংঘের সদস্যপদ লাভ করেন। সেখানে তিনি নতুন করে আবিষ্কার করেন এবং লেখেন, ‘ইনকিলাব পছন্দ’— যা ১৯৩৫ সালের মার্চ মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এরপর অবশ্য মান্টোকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর মান্টো আলীগড় ছেড়ে পাড়ি জমান লাহোরে, পরে বোম্বে।

চলচ্চিত্রের প্রতি ছিল তার অসামান্য ঝোঁক। সেই ঝোঁক থেকে ১৯৩৬ সালে মূলত তার মুম্বাই শহরে আসা। কয়েক বছর তিনি মুম্বাইয়ে কাটান। সেখানে তিনি ‘মুসাফির’ নামে একটি মাসিক চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। একইসঙ্গে তিনি শুরু করেন চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার কাজ।

১৯৩৬ সালে হিন্দি ছবি ‘কিষান কানাইয়া’ এবং ১৯৩৯ সালে ‘আপনি নাগরিয়া’র চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৪৮ সালে তিনি যখন ভারত ত্যাগ করেন, তখন অনেকেই তাকে পাকিস্তানে ফিরতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অশোক কুমার, নূরজাহান নাসিমসহ অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী। এছাড়া বিখ্যাত লেখিকা ইসমত চুগতাইও ছিলেন তার অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী।

জানা যায়, চুগতাইয়ের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। সে সময় তাদের সম্পর্ক বেশ আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিল। অবশ্য শেষ পর্যন্ত মান্টোর নীরবতা ও চলে যাওয়ায় সেই আলোচনায় যবনিকাপাত ঘটে।

দেশে ফেরার পর তিনি লেখেন তার বহুল বিতর্কিত ‘খুল দো’ এবং ‘ঠাণ্ডা গোশত’ নামে দু’টি আক্রমণাত্মক গল্প। ওই সময় দেশজুড়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে এ নিয়ে।

দেশ ভাগ হলে মান্টো সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানে লাহোরে ফেরার। ১৯৪৮ সালে বন্ধুদের অনুরোধ সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে জন্মভূমে ফেরেন।

এখানে শুরু হলো মান্টোর তৃতীয় এবং শেষ অধ্যায়। তিনি ভেবেছিলেন, দেশ ভাগ হলে সাম্প্রদায়িক চেতনা ও শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু খ্যাতি-যশ মুম্বাই ফেলে মান্টো পাকিস্তানে মারাত্মক অর্থকষ্টে পড়েন। দেশে তখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এমন উপলব্ধি থেকে তিনি রচনা করেন রাজনৈতিক প্রহসনমূলক গল্প ‘তোবা টেক সিংহ’।

এ সময় অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যাপক ও অনেকটা এলোমেলোভাবে লেখালেখি শুরু করেন, যা তাঁর খ্যাতিতে কিছুটা কালিমা দেয়। শেষদিকে তিনি কখনোই কারও থেকে নিজের সমালোচনা শুনতে পারতেন না। এজন্য পরে সবাই তাঁকে এড়িয়ে গেছে।

তার জীবনী নিয়ে পাকিস্তানে ২০১৫ সালে “মান্টো” চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ভারতেও ২০১৮ সালে নন্দিতা দাস তার জীবনের উপর নির্মাণ করেন একই নামের চলচ্চিত্র।

১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি মাত্র ৪২ বছর বয়সে তাঁর অকাল প্রয়াণ ঘটে লাহোরে।

সাদত হাসান মান্টো ১৯১২ সালের আজকের দিনে (১১ মে) পাঞ্জাবের (বর্তমান পাকিস্তান) লুধানিয়া জেলার সামরালা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.