Press "Enter" to skip to content

মানবতাবাদী শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় খালি গলায় বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন জাদুকরের মত………

Spread the love

————শুভ জন্মদিন প্রতুল মুখোপাধ্যায়——–

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, গাইতে গাইতে শিখেছেন, গুরু মেনেছেন ‘সবাইকে’, অভাবের কখনো ‘অভাব হয়নি’। বাজনাহীন সেই অভাবের দুনিয়ায় পথ খুঁজতে খুঁজতে গায়কীর যে কায়দা রপ্ত করেছেন, তাতেই তিনি হয়ে উঠেছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে প্রতুল মুখার্জির সবচেয়ে পরিচিত গান সম্ভবত ‘আমি বাংলায় গান গাই’। তবে এপার-ওপারের লোকগান আর গণসংগীতের সুর যাদের কানে গেছে, তাদের অনেকেই প্রতুলের কণ্ঠের ‘লং মার্চ’ শুনে পৌঁছে গেছেন বিপ্লবের চীনে। ‘ছোকড়া চাঁদের’ সঙ্গে আফ্রিকার খনি শ্রমিকের রাতভর কী কথা- সে গল্প প্রতুল তাদের শুনিয়েছেন। ‘ছোট্ট দুটি পায়ে’ চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে তিনি শ্রোতাকে দুনিয়া ঘুরিয়েছেন। ‘স্লোগান’ গানে বুঝতে শিখিয়েছেন, কে ভাই, আর কে দুশমন।

এক সময়ের নকশাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক, ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড লং রেঞ্জ প্ল্যানিং বিভাগের সাবেক প্রধান ব‌্যবস্থাপক প্রতুল গানকেই করেছেন সমাজ বদলের হাতিয়ার। ছিয়াত্তর বছর বয়সে পা রাখা এই গানের কবির ভাষায়, গান তিনি গান না, বলেন। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ছিলেন গৃহিণী। দেশবিভাগের সময় পরিবারের সাথে চলে যান ভারতে। সেখানে শৈশব কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুচুড়ায়। ছোটবেলা থেকেই নিজের লেখা ও সুরে গান গাইতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম সুরারোপ করেন। নিজের লেখা গানের পাশাপাশি ছড়া, কবিতায়ও তিনি বিভিন্ন সময় সুরারোপ করেছেন।

১৯৮২ সালে এক বন্ধুর অনুরোধে আসেন পর্দার সামনে; সেই থেকে চলছে তার মগ্নযাত্রা। মাত্র ১১/১২ বছর বয়সেই প্রতুল মুখোপাধ্যায় কবিতায় সুর দিয়ে তা গেয়ে সবাইকে অবাক করে দিতেন। তারপর সরকারি চাকরি ছেড়ে নেমেছেন গানের মঞ্চে, বলে গেছেন মানুষের মুক্তির কথা। প্রতুল মুখোপাধ্যায়, সর্বজন নন্দিত ভারতীয় গায়ক; সংগীত যাত্রা শুরু করেন প্রায় চার দশক আগে। একটি লক্ষ নিয়ে তিনি আজও তাঁর যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন তা হল ‘সমস্ত আলোচনা এবং যুক্তি শেষ হওয়ার পরে সংগীত মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে’। মানবতাবাদী এ শিল্পী খালি গলায় কোন বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন জাদুকরের মত। প্রতুল মুখোপাধ্যায় জীবনে, কর্মে, সাধনায় অন্যান্য গণসংগীতশিল্পীদের চেয়ে একটু ভিন্ন বৈকি। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। প্রযুক্তির এই যুগেও তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তাকে কেউ কখনো কোনো জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরতে দেখেননি। খদ্দরের পাজামা আর সুতি পাঞ্জাবি- এই হলো তার সব সময়ের পোশাক।

গণমানুষের এই শিল্পী কোনো পুরস্কার পাননি। তবে তিনি পেয়েছেন অজস্র সংগীতপ্রেমী মানুষের ভালোবাসা। এই তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় জন্ম ১৯৪২ সালের আজকের দিনে (২৬ জুন) বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.