জন্মদিনে স্মরণঃ মা ত ঙ্গি নী হা জ রা
বাবলু ভট্টাচার্য : মাতঙ্গিনী হাজরা। একটি বিপ্লবী জীবন। একটি ইতিহাস। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে যার অবদান অনস্বীকার্য। ভারত বর্ষের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই মহান বিপ্লবী নেত্রীর।
অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে। ১৮ বছর বয়সেই স্বামীকে হারান মাতঙ্গিনী। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। মাতঙ্গিনী ছিলেন গান্ধীর অনুসারী। তার আরেক পরিচয় গড়ে উঠেছিল ‘গান্ধী বুড়ি’ নামে। ১৯০৫ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।
তার বিপ্লবী জীবন ছিল ক্ষুরধার। ব্রিটিশের লবণনীতির প্রতিবাদে তার লড়াই ছিল দুরন্ত। তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেরও সদস্য ছিলেন। গান্ধী আদর্শমতে, নিজের হাতে চরকা কেটে খাদি কাপড়ও বানিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর সময়ও তিনি কংগ্রেসের পতাকা উঁচু হাতে ধরেছিলেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কংগ্রেস সদস্যেরা মেদিনীপুর জেলার সকল থানা ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় দখল করে নেওয়ার পরিকল্পনা নেয়। উদ্দেশ্য ছিল জেলা থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। প্রধানত মহিলা স্বেচ্ছাসেবক সহ ছয় হাজার সমর্থক তমলুক থানা দখলের উদ্দেশ্যে একটি মিছিল বের করে। প্রাণবিনাশী এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন মাতঙ্গিনী হাজরা।
১৯৩০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে শুরু হল লবণ সত্যাগ্রহ আইন অমান্য আন্দোলন। মেদিনীপুরের কাঁথিতেই প্রথম লবণ তৈরি শুরু হল। খবর পেয়েই পুলিশ গ্রামে ঢুকল। ঘর-বাড়ি সব জ্বালিয়ে দিল। নানান অত্যাচার শুরু করে দিল।
এ অবস্থায় মাতঙ্গিনী হাজরা দলবল নিয়ে থানা আক্রমণের চেষ্টা করে। তারা থানার কাছাকাছি আসতেই পুলিশ ও মিলিটারি অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে দেয়। বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন কিছুটা পিছু হঠে গিয়েছিল। তাদের সতর্ক করে দিয়ে মাতঙ্গিনী বললেন, ‘এগিয়ে চলো। হয় থানা দখল করো, নয়ত মরো। বলো, ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’— ‘বন্দে মাতরম্।’
মাতঙ্গিনী দলটির পুরোভাগে। ছুটে চলেছেন উল্কার বেগে। বাঁ-হাতে বিজয় শঙ্খ, ডান হাতে জাতীয় পতাকা। আর মুখে ধ্বনি- ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো-করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে-বন্দে মাতরম্।’
একটি বুলেট পায়ে লাগতেই হাতের শাঁখটি মাটিতে পড়ে গেল। দ্বিতীয় বুলেটের আঘাতে বাঁ-হাতটা নুয়ে পড়ল। কিন্তু ওই অবস্থাতেও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে বলে চলেছেন, ‘ব্রিটিশের গোলামি ছেড়ে গুলি ছোঁড়া বন্ধ করো- তোমরা সব আমাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে হাত মেলাও।’
প্রত্যুত্তরে উপহার পেয়েছিলেন কপালবিদ্ধ করা তৃতীয় বুলেটটি। প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু জাতীয় পতাকাটি তখনও তাঁর হাতের মুঠোয় ধরা।
মাতঙ্গিনী হাজরা ১৮৭০ সালের আজকের দিনে (১৯ অক্টো) মেদিনীপুরের তমলুকের হোগলায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment