Last updated on August 30, 2022
জন্মদিনে স্মরণঃ মা ই কে ল জ্যা ক স ন
বাবলু ভট্টাচার্য : জনপ্রিয়তায় যিনি নিজেই পূর্ণাঙ্গ একটা আকাশ। তাকে বলা হয় তারকাদের তারকা। খুব বেশি দিনের জীবন নয় তার। অথচ রেখে গিয়েছেন অবিশ্বাস্য সাফল্যের গল্পকথা। যা হার মানায় রূপকথাকেও। তিনি মাইকেল জ্যাকসন।
বিশ্ব সংগীতের জনপ্রিয়তার রাজা। ‘দ্য কিং অব পপ’। নৃত্য, সংগীত, অভিনয়, মানবতা ও ভালোবাসার ভুবনে মাইকেল একজন মুগ্ধ জাদুকরের নাম।
জীবন তাঁকে হাত ভরে দিয়েছিল ঐশ্বর্য। পেয়েছিলেন ১৫টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। লাখো ক্যাসেট আর সিডি বিক্রি হয়েছে তাঁর। মাইকেল জ্যাকসন শুধু গান-গাওয়া তারকা ছিলেন না; তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেতা। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বদলে দিয়েছিলেন সংগীতবিশ্ব।
গায়ক হিসেবে জ্যাকসনের উত্থান কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই। ১৯৬৩ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাইকেল জ্যাকসন পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন ‘জ্যাকসন ফাইভ’ নামের সঙ্গীত গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে গান গাইতেন। সেখান থেকেই প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ ১৯৬৯ সালে প্রকাশ পায়।
সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আমেরিকার পপ সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে মাইকেল জ্যাকসন যে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তখন মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়।
১৯৭২ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তার পরবর্তী অ্যালবাম বের হয়। এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘অফ দ্য ওয়াল’। যার ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গান দুটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি।
এক দশকের মাথায় জ্যাকসন হয়ে ওঠেন বিশ্বের পপসঙ্গীত শ্রোতাদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী। শুরু হয় তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তারকাখ্যাতির সঙ্গে অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যে রূপকথার জীবন কাটাতে লাগলেন মাইকেল জ্যাকসন।
১৯৮২ সালে তার ‘থ্রিলার’ অ্যালবামটি সারাবিশ্বে বেস্ট সেলিং অ্যালবাম হিসেবেই ইতিহাস গড়ে। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সঙ্গীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকডের্র মধ্যে রয়েছে। সেগুলো হলো- ‘অফ দ্য ওয়াল’ (১৯৭৯), ‘থ্রিলার’ (১৯৮২), ‘ব্যাড’ (১৯৮৭), ‘ডেঞ্জারাস’ (১৯৯১) ও ‘হিস্টরি’ (১৯৯৫)।
১৯৮০’র দশকে মাইকেল জ্যাকসন সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে এত জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তার গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিলো। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রবোট ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) রয়েছে। মুনওয়াক হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা।
কৃষ্ণাঙ্গ বলে সমাজে নিচু চোখে দেখছে সবাই- এই মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনে প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে ফর্সা করে তোলেন জ্যাকসন। নিজের চেহারার কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্বেতাঙ্গে রং বদল নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাকে। সব বাঁধা পেরিয়ে বিশ্বের বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মাইকেল জ্যাকসন যেন কৃষ্ণাঙ্গদের সম্মানীত করে তোলেন।
মাইকেল জ্যাকসন দু’বার রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেইমে নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনিই এই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি গানের সাথে বহুমাত্রিকতায় নাচকে (সর্বপ্রথম এবং একমাত্র), ‘আর এন বি’ হল অব ফেইমে জায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গীত জগতের কেউ এত ক্যাটাগরিতে হল অব ফেইমে নিজেকে নিতে পারেননি।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী। ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১ নম্বর একক সঙ্গীত এবং ১০০ কোটিরও বেশি মাইকেলের অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। যা এখনো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড তাকে বিশ্বরেকর্ডে ভূষিত করেছে বিনোদন জগতের মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নানা কেলেঙ্কারিতে (পরবর্তীতে যার অধিকাংশই ভুল প্রমাণিত হয়) জড়ালেও প্রায় ৪০ বছর ধরে সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ছিলেন। তিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক এবং নৃত্যশিল্পীর সিংহাসনে বসে আছেন আজো।
২০০৯ সালের ২৫ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাইকেল লস এঞ্জেলেসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
মাইকেল জ্যাকসন ১৯৫৮সালের আজকের দিনে (২৯ আগস্ট) আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment