মধুমিতা শাস্ত্রী : ৩১, ডিসেম্বর, ২০২০। ২০১৯ এর ৩১ ডিসেম্বর রাতে গোটা বিশ্ব যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে উদ্বেল, নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার আলোয় আলোয় উজ্জ্বল প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের নীচে যখন তরুণ তরুণীরা উৎফুল্ল চিত্তে জমা হচ্ছেন তখন কি ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পেরেছিলেন যে, আসন্ন নতুন বছরটি বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে আসতে চলছে শুধুই একরাশ হতাশা, ভয় আর মৃত্যুর মিছিল!

২০২০ সাল শুরু হয়েছিল মহামারীর আতঙ্ক নিয়ে। জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু এই রোগকে পিএইচআইসি (পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন) হিসেবে ঘোষণা করে। আর জানুয়ারিতেই ভারতের কেরলে প্রথম করোনা পজিটিভ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর থেকে শুধুই আতঙ্ক আর মৃত্যু।
২০২০ যেসব নক্ষত্রের পতন ঘটেছিল আর যে ঘটনাগুলি আমাদের নাড়া দিয়ে যায় সেগুলি একবার ফিরে দেখা যাক।
যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়াত হন-
★ কৃষ্ণা বসু ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ইনি একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ লোকসভার সদস্য ছিলেন।

★ মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। এরপর নোপোটিজম নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় বলিউডে। এর আঁচ টলিউডেও এসে পড়ে।
★ আমরা বলিউডের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইরফান খান, দক্ষ অভিনেতা ঋষি কাপুরকে হারাই পরপর। শুধু বলিউডে নয় টলিউডেও একাধিক নক্ষত্রের পতন ঘটে।

★ কালজয়ী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,

অভিনেতা তথা সাংসদ তাপস পাল, বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হন।

★ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হন।
★ বিশ্বখ্যাত আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনা আমাদের ছেড়ে চলে যান।
★ আমেরিকার জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে সেখানকার পুলিশ হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে। এর প্রতিবাদে গোটা আমেরিকায় আন্দোলন হয়।
এবার ফিরে দেখা যাক বিশিষ্ট ঘটনাগুলি-
★ কোভিড ১৯ কে রুখতে গোটা ভারতবর্ষে
২২ মার্চ ‘জনতা কার্ফিউ’ ঘোষণা করা হয় ১৪ ঘণ্টার জন্য। পরে ধাপে ধাপে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
★ পিছিয়ে গেল অলিম্পিক খেলা। টোকিয়োতে হওয়ার কথা ছিল। জাপান এবং ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ২০২১ এর ২৩ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে।
★ নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে কিছু মানুষ দিল্লিতে ধর্নায় বসেছিলেন। তাদের সরানো নিয়ে সংঘর্ষে মারাযান ৫০ জনেরও বেশি মানুষ।
২০২০ কি শুধুই মৃত্যু আর হতাশা? এতো হতাশার মধ্যেও ভালো কিছু ঘটেছে। এবার ভালো ও পজিটিভ ঘটনা গুলি দেখে নেওয়া যাক।

★ পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন জঙ্গলে যে দাবানল ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল তা ২০২০ মার্চ মাসে নিয়ন্ত্রণে আসে।
★ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু আফ্রিকাকে পোলিও মুক্ত বলে ঘোষণা করে।
★ চিকিৎসা বিঞ্জানে নোবেল পুরষ্কার পান আমেরিকান বিঞ্জানী আার্লস এম রাইস ও ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত বিঞ্জানী মাইকেল হাউটন এবং হার্ভি জে অল্টার। মারন ব্যাধি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস চিহ্নিত করনের জন্য এই পুরষ্কার পান। ২০২০ এর বিষাদময় কালো বছরের শেষে নতুন বছর কি নিয়ে আসবে করোনা মুক্ত, ভীতি হীন, সুস্থ্য জীবন। বিশ্ববাসীর একটাই প্রার্থনা মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচে যাক, ভাইরাস মুক্ত হোক পৃথিবী। এতো আতঙ্কের পরেও আশার আলো দেখছে মানুষ। নতুন বছরের শুরুতেই করোনা প্রতিষেধক পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। ইতিমধ্যে ব্রিটেনে ছাড়পত্র পেয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড।

Be First to Comment