————স্মরণ : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়———
বাবলু ভট্টাচার্য : মাত্র ২১ বছর বয়সে মধ্যবিত্ত বাঙালির অসহায়ত্ব আর অর্থনৈতিক দুর্দশার বিপরীতে এক সোচ্চার প্রতিবাদ সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ৩০ দশকের কবিদের অনুভূত ব্যক্তিচেতনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সমষ্টিচেতনায় জাগ্রত এ কবি। তাই তার কবিতা হয়ে ওঠে গণমানুষের কবিতা। ফলে ৪০ দশকের কবি হয়েও তিনি সর্বকালের গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন।সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর জন্ম ১৯১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পৈত্রিক নিবাস ছিল কুষ্টিয়া জেলার দর্শনার লোকনাথপুরে। শৈশব কেটেছে রাজশাহী জেলার নওগাঁয়। তিনি কাব্যজীবন শুরু করেন ১৯৪০ সালে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রতিটি কবিতায় প্রতিবাদের ভাষা, মুক্তির গান। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দোলাচলবৃত্তির গোলকধাঁধা থেকে উত্তরণের আশায় উজ্জীবিত। প্রথম গ্রন্থই সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়। এরপর ক্রমে প্রকাশিত হয় আরো ৫টি কাব্যগ্রন্থ। ‘পদাতিক’, ‘অগ্নিকোণ’, ‘চিরকূট’, ‘ফুল ফুটুক’, ‘যত দূরে যাই’, ‘কাল মধু মাস’, ‘ধর্মের কল’। পরিচয় পত্রিকার সাথে যুক্ত হন ১৯৫১ সালে। এসব বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় কবি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দুর্দশাকে অনুভব করেছিলেন। বুঝেছিলেন যে এ জাতির মুক্তির জন্য একটি যুদ্ধের প্রয়োজন। ব্যক্তি জীবনে সুভাষ দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার নিজ কর্মদক্ষতায়ও তিনি এ দারিদ্র্যকে ঘুচাতে পারেননি। তাই দারিদ্র্যসীমায় থাকা মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছেন সবসময়। তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা ও সংশ্লিষ্টতা দেখে বুদ্ধদেব বসু মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি কোন পথে যাবেন তা ভাবনার বিষয়। সব কবিই প্রথমে প্রেমের কবিতা দিয়ে কাব্যজীবন শুরু করে কিন্তু ২১বছর বয়সের এ তরুণ কবি তাঁর প্রথম গ্রন্থে প্রেমচেতনাকে স্থান দিতে পারলেন না। বিষয়টি অস্বাভাবিক ও কষ্টের। একজন তরুণ কবিকে বেছে নিতে হলো সংগ্রামীচেতনামূলক কবিতা। কবির চারপাশের জীবনধারাই তার মূল কারণ। প্রমাণ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম চরণগুলি- ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা/চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/কাঠফাঁটা রোদে সেঁকে চামড়া’।
তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ ক’টি পুরস্কার অর্জন করেন। তার মধ্যে অন্যতম- সাহিত্য আকাডেমী পুরস্কার ১৯৬৪, আফ্রোএশীয় লোটাস পুরস্কার ১৯৭৭, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ১৯৭২, আনন্দ পুরস্কার ১৯৯১।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ২০০৩ সালের আজকের দিনে (৮ জুলাই) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment