Press "Enter" to skip to content

মতি নন্দী বিশ্বাস করতেন, তৃতীয় বিশ্বের নিরক্ষর দরিদ্র দেশের জনসাধারণের কাছে লেখকদের দায়বদ্ধ থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ…..৷

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মতি নন্দী

বাবলু ভট্টাচার্য : ভারতের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘কোনি’ চলচ্চিত্রের সেই বিখ্যাত সংলাপ- “ফাইট কোনি, ফাইট”। সমাজের এক কোণে পড়ে থাকা কিশোরী সাঁতারুকে এ কথাটি বলেই জেতার স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিলেন তার প্রশিক্ষক। পশ্চিমবাংলার ক্রীড়াবিদ আর কোচদের কাছে চিরকালের প্রেরণা হয়ে থাকবে কোনির এই সংলাপ। এই বিখ্যাত সংলাপের লেখক বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দী।

নিজের দেখা সমাজের ভেতর থেকে সযত্নে গল্পের উপাদান কুড়িয়েছেন মতি নন্দী৷ তাঁর রচনা এখনও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক।

মতি নন্দী বিশ্বাস করতেন, তৃতীয় বিশ্বের নিরক্ষর দরিদ্র দেশের জনসাধারণের কাছে লেখকদের দায়বদ্ধ থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁর প্রায় সব লেখাতেই ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম, যৌনতার পাশাপাশি সমাজ, অর্থনীতি বিবিধ বিষয়ের জটিলতাও স্থান পেয়েছে৷

তাঁর জীবনবোধ ও সমাজের প্রান্তে বাস করা মানুষদের প্রতি অসম্ভব দরদ ভালোবাসা ও মমত্ব দিয়ে তিনি লিখে গেছেন৷ কখনোই কোনও তথাকথিত লেখক শিবিরে তাঁর স্থান হয়নি৷ প্রগতি শিবিরের দীর্ঘ তালিকায়ও মতি নন্দীর জায়গা নেই৷ জাতীয়তাবাদী লেখকদের মধ্যেও মতি নন্দীকে নিয়ে তেমন কোনও উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে না৷ সামাজিক দায়বোধ থাকা সত্ত্বেও লেখায় যৌন শব্দ ও যৌনতার আধিক্য থাকার জন্যেই সম্ভবত, মার্কসিয় গোষ্ঠী তাঁকে সোচ্চারে নিজেদের লোক বলার সাহস পায়নি।

যিনি আজীবন প্রগতিবাদে বিশ্বাস করতেন তাঁকে অন্যেরাও স্বীকৃতি দিতে কোনও দিনই চাননি৷ অবশ্য আগেই বলেছি ব্যক্তি মতি নন্দী কোনও দিনই এ সব নিন্দেমন্দ, গোষ্ঠী উপগোষ্ঠী কোনও কিছুরই ধার ধারতেন না৷ তাঁর যাবতীয় দায়বোধ ছিল নিজের কলম ও সমাজের প্রতি৷

মতি নন্দীর লেখায় অধিকাংশ সময়ই উত্তরণের কথা উঠে এসেছে৷ সম্ভবত উনি বিশ্বাস করতেন চেষ্টা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা থাকলে মানুষ যন্ত্রণার মধ্যেও জিততে পারে৷ ‘কোনি’-র শিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের মুখ দিয়ে মতি নন্দী বলিয়েছেন, “মানুষ পারে, সব পারে৷” মতি নন্দীর চরিত্রগুলো উঠে এসেছে কোনও কল্পলোকের রাজ্য থেকে নয়, মাটির পৃথিবী থেকে৷

ক্ষিতীশ সিংহের ছায়া সাঁতারের কোচ কে পি সরকার৷ আরও অজস্র চরিত্র যাদের কথা বলতে গিয়ে মতি নন্দী অক্লান্ত থাকতেন৷ সেই কাবাডির ইনসান আলি, সাঁতারের বেণীমাধব তালুকদার এ রকম অজস্র মানবের লড়াই তাঁকে প্রাণিত করেছে৷

‘আনন্দ পুরস্কার’ পাওয়া এই ঔপন্যাসিক তাঁর ধারালো গদ্যে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও মস্কো অলিম্পিক, দিল্লি এশিয়ান গেমস কভার করা এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার ক্রীড়া সম্পাদক।

তাঁর ‘কোনি’, ‘স্টপার’, ‘স্ট্রাইকার’- এর মতো উপন্যাসগুলো এক দিকে যেমন খুলে দিয়েছে বাংলা ক্রীড়া সাহিত্যের নতুন দরজা, তেমনি ‘সাদা খাম’, ‘গোলাপ বাগান’, ‘উভয়ত সম্পূর্ণ’, আর ‘বিজলীবালার মুক্তি’-র মতো উপন্যাসগুলোও ঠাঁই পাবে বাংলা ধ্রুপদী সাহিত্যে। পাঠকদের একেবারে ভিন্ন লেখার স্বাদ দিয়েছে তাঁর ‘অবিনাশের সাড়ে আটচল্লিশ’, ‘কপিল নাচছে’, ‘রেড্ডি’, আর ‘অন্ধকার থেকে অন্ধকার’ ছোটগল্পগুলোও।

২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মতি নন্দী ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (১০ জুলাই) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.