Press "Enter" to skip to content

মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে ‘অচল’  সিদ্দিকুল্লাহ ‘সচল’ অপূর্ব…….  

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন : ২৫, সেপ্টেম্বর, ২০২০। বিগত বাম জমানার মত তৃনমূল আমলেও মঙ্গলকোটের রাজনীতি শাসক দলের আভ্যন্তরীণ বিবাদে রক্তাক্ত। ২০১১ সালে রাজ্যজুড়ে তুমুল পরিবর্তনের ঝড় উঠলেও মঙ্গলকোটে জয় পেয়েছিল সিপিএম। ২০১১ সালে মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের হাতে থাকলেও ২০১৩ সাল অবধি অলিখিতভাবে চালায় তৃনমূলের ব্লক নেতৃত্ব। ২০১১ সালের বিধানসভার নির্বাচনে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী অনুব্রত মন্ডলের স্নেহধন্য হওয়ায় ব্লক সভাপতির পদ পান একদা ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব মন্ডল কে হঠিয়ে। দলের জন্মলগ্ন থেকে যে প্রণব মন্ডল দলের সুদিনে দল থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, তা মানতে পারেনি আদি তৃণমূলের বড় অংশ। একরাশ মনের দুঃখ রেখে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান সর্বজনগ্রাহ্য প্রণব মন্ডল। অন্যদিকে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূল প্রার্থী হেরে গেলেও তাঁকে বিভিন্ন পদে দেখা যায় মঙ্গলকোটের বুকে। পুলিশের তরফে ‘নাগরিক কমিটি’র  সম্পাদক, আবার প্রশাসনের আইসিডিএস নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হন অপূর্ব চৌধুরী। এছাড়া তাঁর ‘বিশিষ্ট জনসেবী’ উপাধিতে মঙ্গলকোটের সর্বত্রই বিরাজ করতো এবং বর্তমানেও অনেকখানি করে থাকে।  পুলিশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অপূর্ব বাবুর ঝলমলে প্রধান অতিথির আসন যেন মঙ্গলকোটের মুকুটহীন সম্রাটের শিরোপা। অভিযোগ, এই নেতার ব্যবহার করা চারচাকা গাড়িটির মালিক নাকি ব্লকের প্রথম সারির এক ঠিকেদারের। যদিও অন্য নেতারা বলেন ‘এটি কেস্ট দা দাদা কে গিফট করেছে ‘ । ঘটনা যায় হোক ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন অবধি মঙ্গলকোটের নিরঙ্কুশ প্রভাব ছিল ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর। ছন্দপতন ঘটলো গত বিধানসভার নির্বাচনের সময়। জমিয়ত উলেমা হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃণমূল নেত্রীর কাছ থেকে দলীয় প্রতীক পেয়ে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে আমদানি হলেন। আর এতেই শাসকদলের আভ্যন্তরীণ বিবাদের সুত্রপাত ঘটলো। এই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডল দলনেত্রীর প্রার্থীপদ ঘোষনার আগেথেকেই মঙ্গলকোট কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে অপূর্ব চৌধুরীর নাম প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন। অনুব্রত অনুগামীরা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর উপর এমন প্রভাব ফেলেছিলেন যাতে সিদ্দিকুল্লাহ মঙ্গলকোট ছেড়ে অন্য কোন আসনে প্রতিদন্ডিতা করেন। নাছোড়বান্দা সিদ্দিকুল্লাহ তাঁর পৈতৃক ভিটা কাটোয়ার করজগ্রাম সংলগ্ন মঙ্গলকোট কে কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি হননি। সেইথেকে শুরু হয় মঙ্গলকোটের সার্বিক রাজনীতি থেকে স্থানীয় পুলিশ – প্রশাসনে পুরোপুরি স্থানীয় বিধায়ক কে   নিস্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র।তৎকালীন বোলপুর সাংসদ ( মঙ্গলকোট বিধানসভা পড়ছে বোলপুর লোকসভায়) অনুপম হাজরা কে সাথে নিয়ে মঙ্গলকোটে একের পর এক হিট জনসভা সারতে থাকেন সিদ্দিকুল্লাহ। এর পর থেকে পুলিশ দিয়ে সিদ্দিকুল্লাহ বধ করার  অপারেশন শুরু হয় বলে দাবি বিধায়ক অনুগামীদের। মঙ্গলকোটের নুতনহাট সংলগ্ন পদিমপুর বাইপাসে বিধায়কের ভাড়া করা অফিসে লাগাদার বোমাবাজি চলে। এই অফিস টি আবার মঙ্গলকোট থানার এককিমির মধ্যে!  অভিযোগ, বিধায়কের স্থানীয় সংগঠকদের একে একে অস্ত্র আইন সহ মাদক ( গাঁজা)  মামলায় ব্যাপক ধরপাকর চলে ২০১৭ সালের পর থেকে। যদি সমস্ত গাঁজা মামলা গুলি একত্রে রেখে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয় তাহলে অনেক কিছুরই পর্দাফাঁস হয়ে যাবে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।ওই সব পুলিশ অফিসারদের একাংশ অজয় নদের বেআইনী বালিঘাটে ভালো সংখ্যক শেয়ার ছিল বলে জনশ্রুতি এলাকায়। বিধায়ক অফিসে বোমাবাজি সহ অস্ত্র / মাদক মামলায় ব্যাপক ধরপাকরেরও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে হাল ছাড়েননি। এমতাবস্থায় মঙ্গলকোটে ঘটলো এক হাই প্রোফাইল খুন। নিগন ১ নং পঞ্চায়েতের পদাধিকারী সহ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ডালিম সেখ খুনে অভিযোগ উঠলো বিধায়কের ভাই সহ তৎকালীন পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিধায়কের ভাই ছাড়া বাকি সবাই জেলবন্দি হলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরীর পরাজয়ের কারণ হিসাবে নাকি ছিল বিকাশ চৌধুরীর দলীয় অন্তর্ঘাত। তাই খুনের মামলায় বিকাশ চৌধুরীর জেলে থাকাটা নিশ্চিত ছিল বলা যায়। এই খুনের মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লাহ চৌধুরী অভিযুক্ত হিসাবে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি তাঁকে এখনও পাকরাও করেনি।আবার চার্জশিট থেকে নামটা বাদও দেয়নি।।একদিকে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব কে বোঝানো যে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে। তাই আগামী দিনে সিগনাল পেলে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। আবার বিধায়ক কে বার্তা দেওয়া যে – ‘খুনের মামলায় নাম থাকলেও এখনও জেলের বাইরে রাখা হয়েছে তাঁর অভিযুক্ত ভাইকে ‘।বিধানসভা নির্বাচন হতে এখনও বাকি ছয় মাস মত। এখন থেকেই মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অবগত করিয়েছেন – আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি দাঁড়াবেন কিনা তা ঠিক করবে ওয়ার্কিং কমিটি। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ডালিম সেখ খুন নিয়ে একপ্রকার দলের কাছে ব্লাকমেল হচ্ছেন তিনি। তাই সরাসরি বার্তা না দিয়ে জমিয়তের ওয়ার্কিং কমিটি কে মাঠে নামিয়েছেন ভোটের অনেক আগেভাগেই। মঙ্গলকোটের ব্লক তৃনমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী তাঁর বিরুদ্ধে উঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ” দলের জন্মলগ্ন থেকে দল করছি, দল যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করে থাকি। দল আগামী বিধানসভা ভোটে আমাকে প্রার্থী না করলে যদি অন্য কাউকে করে। তাতেও লিড দিয়ে জেতাবো। যেমনটা জিতিয়েছিলাম ২০১৬ সালে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে ”                                                                                                                                                                                                                                                                                       

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.