Press "Enter" to skip to content

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বার্থে পি সি সরকার ১৯৩৭ সালে জাপান সফরের সব অর্থ দান করেন….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ পি সি (প্রতুল চন্দ্র) স র কা র

বাবলু ভট্টাচার্য : অধ্যাবসায় আর নিষ্ঠার নাম জাদুসম্রাট পি. সি. সরকার। যা সারা বিশ্বের কাছে সুপরিচিত।

এই জাদু মহারাজকে ইজিপ্টে দেখলে কেউ বিস্মিত হতেন না। আশ্চর্য হতেন না কেউ অস্ট্রেলিয়ায় দেখলে। কখন যে কোন দেশে উড়ে যেতেন তা বলা খুব কঠিন ছিল।

পি. সি. সরকার জাদুবিদ্যায় কল্পনা, উদ্ভাবনীর ক্ষমতা, প্রদর্শনভঙ্গি, পরিবেশনের মুর্ছনা, জাঁক-জমকপূর্ণ পোশাক, থিয়েটারের কায়দায় দৃশ্যপট, স্বদেশি কায়দায় বাজনা-সহ অভিনয়ে দক্ষ সুন্দর-সুন্দরী সহকারী-সহকারিনীর সঙ্গে আল্ট্রাভায়োলেট আলোর ব্যবহার করতেন। তিনিই প্রথম এসবের প্রবর্তক।

ভারতীয় ভাবধারায় সর্বোপরি মহারাজার চোখ ধাঁধানো পোশাক, ঘড়ি ধরা সময়ানুবর্তিতা– সবমিলিয়ে পি. সি. সরকার আর জাদুবিদ্যা সমার্থক হয়ে গেছে। তিনি ছিলেন শিল্পীর শিল্পী। তার খেলার বিন্যাসে সম্পূর্ণ ভারতীয় মেজাজের রুচিশীল চিন্তা-ভাবনা প্রমাণ করে পি. সি. সরকার নিজেই একটা ইন্সটিটিউট।

তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বপূর্ণ, সৌম্য, শান্ত চেহারা, অতিসুন্দর বাচনভঙ্গি, আর মানুষ হিসাবে ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল আর অনাড়ম্বর। সারা বিশ্ব ঘুরেছেন, তাতে মনের পরিধি বেড়েছে। নানা ধরণের মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং নানা রকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। তিনি ছিলেন সফল একজন মানুষ।

তবে এখানেই শেষ নয়। তারপর বিস্তর পড়াশোনা, নিজের গবেষণা এবং বুদ্ধিমত্তার জোরেই পৃথিবীর জাদুকরদের শ্রেষ্ঠ আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পি. সি. সরকার।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বার্থে পি সি সরকার ১৯৩৭ সালে জাপান সফরের সব অর্থ দান করেন। জাদুশিল্পে অসাধারণ পারদর্শিতার জন্য বিশ্ববাসীর কাছ থেকে তিনি ‘জাদুসম্রাট’ ও সর্বকালের ‘শ্রেষ্ঠ সম্রাট’ উপাধি লাভ করেন।

স্বদেশ ও বিদেশে হাজার হাজার পুরস্কার তিনি স্বমহিমায় অর্জন করেছেন। ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ দিয়ে সম্মান জানিয়েছে। প্রকাশ করেছে তার ছবি সহযোগে ডাকটিকিট। তার বাড়ি ‘ইন্দ্রজাল ভবন’টি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি বা হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের আখ্যা দেয় সরকার। তার নামে ‘জাদুসম্রাট পি. সি. সরকার সরণি’-র নামকরণ করে কলকাতা পৌরসভা।

তার সুযোগ্য পুত্র পি. সি. (প্রদীপ চন্দ্র) সরকার জুনিয়রও তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জাদুসম্রাট পি. সি. সরকার বিদ্যানিকেতন’ এবং জাদুসম্রাট পি. সি. সরকার ময়দানের।

এছাড়াও তিনি বাবার স্মৃতিচারণায় ‘এ ট্রিবিউট টু পি. সি. সরকার’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। নাতনী মানেকা সরকারও তৈরি করেছেন তাকে নিয়ে ডকুমেন্ট্রি ফিল্ম।

পি সি সরকারের পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। পিতা ভগবান চন্দ্র সরকার এবং মা কুসুম কামিনী দেবী। প্রচন্ড দারিদ্রের মধ্যে শৈশব কেটেছে তার।

টাঙ্গাইলের স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। বাল্যকাল থেকেই জাদুবিদ্যার প্রতি কৌতূহল এবং কিছুটা বংশগত ঐতিহ্যও তাকে এ পেশায় আগ্রহী করে তোলে।

গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি জাদু দেখানো শুরু করেন এবং কলেজে অধ্যয়নকালে পুরোপুরি এর প্রাকটিস শুরু করেন। তবে সাধারণ লেখাপড়া এতে বাধাগ্রস্ত হয়নি।

প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হন করটিয়া সাদত কলেজে। তখন কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন বিখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ ইব্রাহিম খাঁ। কলেজে এসেও চলে জাদুর ওপর পড়াশোনা আর চর্চা।

তখনকার করটিয়া কলেজ ছিল ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। তাই ১৯৩১ সালে আইএ পাস করে ডিগ্রী পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি অংকে অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দেন।

পড়াশোনা শেষ করে তিনি জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং কলকাতায় পাড়ি জমান।

জাদুসম্রাট পি সি সরকারের পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ও শান্তিময়। ১৯৩৮ সালে তিনি টাঙ্গাইলের চিকিৎসক প্রমথনাথ গুহ মজুমদারের কন্যা বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন। বাসন্তী দেবী ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী।

১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি জাপানের তাবেৎসু (সাপোরো) শহরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পি. সি. (প্রতুল চন্দ্র) সরকার ১৯১৩ সালের আজকের দিনে (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CultureMore posts in Culture »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from ScienceMore posts in Science »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.